গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে বেইজিংয়ে চতুর্দশ জাতীয় গণ-কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন কাং ‘চীনের বিদেশনীতি এবং বৈদেশিক সম্পর্ক’ সম্পর্কিত বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। রাষ্ট্রপ্রধানের কূটনীতির হাইলাইট কী, চীন-শৈলীর আধুনিকীকরণের তাত্পর্য, বড় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মোকাবিলা ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নতুন যাত্রায় চীনের কূটনীতির গৌরবময় ও স্বপ্ন-পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
চলতি বছর হলো চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের চেতনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের প্রথম বছর। এই বছর চীনের কূটনীতি সম্পর্কে ছিং কাং বলেন, চীন বিশেষ করে প্রথম ‘চীন+পাঁচটি মধ্য এশিয়ার দেশ’ শীর্ষসম্মেলন এবং তৃতীয় ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষসম্মেলন ফোরামের দু’টি প্রধান ইভেন্ট ভালোভাবে আয়োজন করবে এবং চীনের কূটনীতির অনন্য শৈলী প্রদর্শন করবে। তিনি বলেন,
‘আমরা দৃঢ়ভাবে সব ধরনের আধিপত্যবাদ এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করি এবং একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য অংশীদারিত্বের উপর নির্ভর করব। আমরা উন্মুক্তকরণকে উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিণত করব এবং চীনের নতুন উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বকে নতুন সুযোগ প্রদান করব।”
ছিন কাং চীন-রাশিয়া সম্পর্ককে একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,
“কিছু দেশ চীন-রাশিয়া সম্পর্ককে শীতল যুদ্ধের জোটের মতো করে দেখতে চায়। চীন-রাশিয়া সম্পর্ক বিশ্বের কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়, কিংবা কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ও উস্কানির কারণও নয়। চীন ও রাশিয়া হাত মিলিয়েছে, তাই বৈশ্বিক কৌশলগত ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।”
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একবার বলেছিলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সম্পর্ক সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবে কিনা—এই বিষয়টি বিশ্বের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে। কিছু দিন আগে এয়ারবেলুনের ঘটনা সম্পর্কে ছিন কাং বলেন যে, এ থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র চীন সম্পর্কে গুরুতর ভুল ধারণা পোষণ করে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে তার প্রধান প্রতিপক্ষ এবং প্রধান ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মনে করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ছিং কাং আরও বলেন, তাইওয়ান হলো গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর মাতৃভূমির একীকরণ বাস্তবায়ন করা হলো তাইওয়ানবাসী-সহ চীনা জনগণের মহান দায়িত্ব। তাইওয়ান ইস্যু চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু এবং চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বার বার উস্কানিমূলক আচরণ করছে। কিছু ব্যক্তি এমন বলেন যে, দু’দেশের মধ্যে ২০২৭ বা ২০২৫ সালে সংঘাত ঘটবে। তিনি বলেন,
“তাইওয়ান ইস্যুটি ভালভাবে মোকাবিলা না-করলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি চায়, তাহলে তার উচিত চীনকে দমন করার জন্য তাইওয়ানকে ব্যবহার বন্ধ করা।”
এক বছরের ও বেশি সময় ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত চলছে। সম্প্রতি চীনকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জনমতের প্রতিক্রিয়ায় ছিন কাং বলেন, চীন সবসময়ই স্বাধীন রায় দিয়েছে। তিনি বলেন,
“চীন সঙ্কট তৈরি করে নি এবং সংঘাতের কোনো পক্ষকে অস্ত্র সরবরাহ করেনি। বর্তমানে ইউক্রেনের সংকট জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে। এখন যা প্রয়োজন তা হল- শান্তি, যৌক্তিকতা ও সংলাপ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। ইউরোপে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য একটি কৌশল খুঁজে বের করার জন্য সব পক্ষের বৈধ নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগকে সম্মান করা উচিত।”
ছিন কাং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, বাইরের জনমতকে চীনের কূটনৈতিক শৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে কিনা—তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন,
“চীনের কূটনীতিতে যথেষ্ট হৃদ্যতা এবং সদিচ্ছা রয়েছে, তবে অন্যান্য দেশ যদি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বা চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা প্রচার করে; তবে চীন সে অনুযায়ী জবাব দেবে।”
জিনিয়া/তৌহিদ