‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব-৮
2023-03-07 18:53:49

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। টেম্পল অব হেভেন

২। একজন চীন ভ্রমণকারীর সাক্ষাৎকার

৩ । চায়না ওল্ড টাউন তালি

 

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের অষ্টম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   

 

১। টেম্পল অব হেভেন

চীনের রাজধানী বেইজিং শহরের অন্যতম ল্যান্ডমার্ক স্থাপনা হলো থিয়েন থান বা টেম্পল অব হেভেন। বেইজিং শহরের অন্যতম সেরা পর্যটন গন্তব্য  এই স্বর্গ মন্দির।

বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে তুংছাং জেলায় এর অবস্থান। ১৯৯৮ সালে থিয়েনথান ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বলা হয়ে থেকে দূরপ্রাচ্যের সংস্কৃতি , প্রতীক এবং স্থাপত্যের এক অনুপম নিদর্শন হলো থিয়েনথান।

মিং রাজবংশের সম্রাট ইয়ংলির সময়ে ১৪০৬ থেকে ১৪২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গড়ে ওঠে থিয়েনথানের মূল স্থাপনা। ষোড়শ শতকে সম্রাট চিয়াচিং এর নামকরণ করেন  থিয়েনথান ।

বেইজিংয়ের চারদিকে রয়েছে চারটি মন্দির । রিথান বা সূর্যমন্দির পূর্বদিকে, ডিথান বা পৃথিবীমন্দির উত্তরে, ইয়ুথান বা চন্দ্রমন্দির পশ্চিমে আর দক্ষিণে হলো স্বর্গ বা আকাশ মন্দির থিয়েনথান।

থিয়েনথানের মূল স্থাপনা হলো একটি বিশাল গোলকার তিন চূড়াকৃতি প্রাসাদকক্ষ। মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এর ভিত্তি ভূমি। কাঠের তৈরি এর বিশাল কক্ষ। নীলরঙের কারুকাজ শোভিত ভবন মন কেড়ে নেয় পর্‍্যটকদের। 

ভবনের সিড়ির রেলিংগুলো পাথরের খোদাই কাজে সমৃদ্ধ। মন্দিরটিতে উঠতে হলে বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি পার হতে হয়। এই মন্দির কমপ্লেক্সে রয়েছে তিনটি প্রধান ভবন। তিনটিই অসাধারণ সুন্দর কারুকার্যে শোভিত। এরমধ্যে একটি ভবন হলো একচূড়া বিশিষ্ট। তিনটি কাঠের মন্দিরেই কোন পেরেক ব্যবহার করা হয়নি।

মন্দির কমপ্লেক্সে রয়েছে গোল একটি চত্বর। মার্বেল পাথরে বাঁধাই করা। ড্রাগন ও অন্যান্য লোকজ সংস্কৃতির ধারক প্রতীক রয়েছে এর চারদিকে। এখানে দাঁড়ালে উপলব্ধি করা যায় বিশাল আকাশের সৌন্দর্য। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি পাথরের ছোট ছোট প্লাটফর্ম। লোকজ কাহিনী অনুসারে এখানে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করলে পূরণ হয় মনের ইচ্ছা ।

মন্দিরসংলগ্ন একটি পার্ক রয়েছে। সেখানে রয়েছে সারি সারি ঝাউ, পাইন, দেবদারু গাছ। থিয়েনথান ছিল চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের সম্রাটদের উপাসনাস্থল। সম্রাট, সম্রাজ্ঞী এবং রাজপরিবারের সদস্যরা এখানে আসতেন এবং ভালো ফসলের জন্য স্বর্গের কাছে প্রার্থনা জানাতেন। এখানে সম্রাট ও রাজবংশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছাড়া জনসাধারণের কোন প্রবেশাধিকার ছিল না।

১৯০০ সালে দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের সময় অ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ জোট এই মন্দির দখল করে এবং অনেক মূল্যবান সামগ্রী লুঠ করে। পরে অনেক বছর এই মন্দির পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। বিশ শতকের প্রথমদিকে এটিকে পার্ক ঘোষণা করা হয় এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।পরবর্তিকালে এই মন্দিরের সংস্কার করা হয় এবং এটি হয়ে ওঠে বেইজিংয়ের অন্যতম ব্যস্ত পর্যটন স্পট।

২। চীন ভ্রমণকারীর সাক্ষাৎকার

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানের এবারের পর্বে কথা হয়েছে চীনের হেবেই প্রদেশের নর্থ চায়না ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজির পিএইচডির শিক্ষার্থী ডাক্তার আরিফুল হকের সাথে। তিনি জানান তার অভিজ্ঞতার গল্প।

 

চীনে দীর্ঘ নয় বছর ধরে পড়াশোনা ও কাজ করছেন আরিফুল হক। এরইমধ্যে ঘুরেছেন বেইজিং, অন্তর্মঙ্গোলিয়া, কুয়াংচৌ, চিলিন, হেবেই, ইউননান, হেনানসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে।

আরিফুল হক জানান, একেক প্রদেশ এক রকম সুন্দর। কোন প্রদেশে গেলে বরফের সৌন্দর্য ,আবার কোন প্রদেশে গেলে গ্রীষ্মের সৌন্দর্য ।চীনে ঘুরে আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে”।

 

যারা চীনে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের একবার হলেও চীনে ঘুরতে যাওয়া উচিত। আর যদি ভাষা শেখা থাকে তাহলে তাদের এ ঘুরাটা আরও সুন্দর হবে”।

 

৩। চায়না ওল্ড টাউন তালি

 

চীনের ইউননান প্রদেশের একটি প্রাচীন শহর তালি যা ওল্ড টাউন তালি

নামেই বেশি পরিচিত । এর পুরো নাম তালি পাই জাতির স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ। পাহাড় বেষ্টিত এই শহরের পূর্ব দিকে হাই এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে তিয়ান ছাং পাহাড়।

 

 

নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার এই শহরের গেলেই দেখা মেলে উর্বর ভূমি, পাহাড় ও নদীর মিশেলে এক মোহনীয় দৃশ্য। এ শহরের সিয়া কুয়ান ফেং, শাং কুয়াও হুয়া, ছাং শান সুয়ে ও এর হাই ইয়্যু দর্শনীয় স্থানগুলো আকৃষ্ট করে পর্‍্যটকদের।  

 

 

 

ধারণা করা হয়, ৪ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে আদি মানুষের বসবাস ছিল তালি।

 

 

 

আর হাজার বছর ধরে ইউননান প্রদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছে এই শহর। জানা যায়,  ইউননানের পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিখ্যাত শহর হিসাবে এখানে জন্ম হয়েছে বহু পন্ডিতের।

 

 

 

তালির স্থানীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এবং রীতি- নীতিও সুগভীর। এই শহরে জনসংখ্যার আধিক্যের দিক থেকে পাই জাতির অবস্থান প্রথম।

 

 

এছাড়া ছিং ও মিং রাজবংশের পর তালি চীনের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক তথ্যভান্ডারে তথ্য দিয়ে পালন করে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী