চীনের একজন ইরানি বন্ধু আইশালি: চীনে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুসংস্কৃতির সন্ধান করছি
2023-03-07 15:23:50

আইশালি এক ইরানি মেয়ে। তিনি ১৯ বছর ধরে চীনের নিংবোতে বাস করছেন। চীনে, তিনি অনেক বন্ধু পেয়েছেন, চীনের মহান নদী এবং পর্বতমালায় ভ্রমণ করেছেন, চীনের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুসংস্কৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন এবং গভীরভাবে চীনের প্রেমে পড়েছেন।

"হাই, আমি আইশালি, আমি ইরানি, এই বছর আমার বয়স ২২ বছর। আমি ১৯ বছর ধরে চীনে বসবাস করছি। আমি বর্তমানে ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনে একজন নবীন শিক্ষার্থী।" কথাগুলো বলছিলেন আইশালি।

তিনি সাবলীল চীনা ভাষায় কথা বলেন এবং মাঝে মাঝে কয়েকটি ‘খাঁটি’ নিংবো উপভাষাতেও কথা বলেন, ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন, ‘লাল-সেলেব্রিটি দোকান অন্বেষণ’ পছন্দ করেন এবং চীনা সংস্কৃতি পছন্দ করেন ইরানি মেয়ে আইশালি। ১৯ বছর আগে, আইশালি তার বাবা-মা’র সঙ্গে চীনে আসেন। আইশালি বলেন,

‘অল্প কথায় আমার ১৯ বছরের জীবনের সংক্ষিপ্তসার করা কঠিন। আমি সহজভাবে বলব: সমৃদ্ধ ও রঙিন। আমি ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা-মা’র সঙ্গে নিংবোতে বাস করছি এবং এখন পর্যন্ত আছি। আমার শুধু চীনের স্মৃতিই আছে।”

 

১৯ বছরে, উঁচু ভবনগুলি তৈরি হয়েছে, ‘বাড়ির সামনে’ পাতাল রেল নির্মিত হয়েছে এবং সুবিধাজনক ও দ্রুত মোবাইল পেমেন্ট  ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে... আইশালি সর্বত্র চীনা জনগণের আনন্দ অনুভব করতে পারে। তিনি বলেন,

‘দারুণ পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাতাল রেলের রুট দেখা দিয়েছে এবং তা আরও বেশি সুবিধাজনক। নগরীর সৌন্দর্য দিন দিন বাড়ছে। অবশ্যই, এগুলি অতিমাত্রায়। আমি দেখছি যে, মানুষের জীবন সুখের হচ্ছে। আমি অনুভব করি যে, চীনে বেশিরভাগ মানুষ আরামে বসবাস করতে পারে।”

 

তার বাবা-মায়ের প্রভাবে, আইশালি শৈশব থেকেই ইতিহাস এবং সংস্কৃতি ভালোবাসতেন। বাড়িতে অনেক ইতিহাসের বই রয়েছে। তিনি চীনের ইতিহাস সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, শুধুমাত্র চীনের পাঁচ হাজার বছরের দীর্ঘ ও গভীর ইতিহাসের কারণেই নয়, চীনের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুসংস্কৃতির কারণে তা তাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বলেন,

‘চীনে অনেকগুলি ভিন্ন চিন্তা আছে, কনফুসিয়ানিজম এবং তাওবাদ, লাওজি, মেনসিয়াস ইত্যাদি... এবং তারপরে একত্রিত হয়েছে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত চলছে; জীবনের বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আমি সত্যিই আশা করি যে, সবাই চীনা সংস্কৃতি শিখবে এবং আপনি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবেন।”

আইশালির দৃষ্টিতে, চীনা জনগণের রক্তে মিশে থাকা এই উন্মুক্তকরণ এবং অন্তর্ভুক্তির চিন্তা চীনের নিজস্ব বিকাশের আধ্যাত্মিক শক্তিই নয়, চীন কর্তৃক প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারণাও হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড মহামারী চলাকালীন, চীন- ইরান ও অন্যান্য দেশকে সাহায্য করার জন্য হাজার হাজার মাইল দূরে সাহায্য দিয়েছে, সীমাহীন ভালবাসা দেখিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজে অনেক প্রশংসা কুড়ায়।

তিনি বলেন, “যখন চীন ধীরে ধীরে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করে, ইরানে বিশেষ করে উচ্চ মৃত্যুর হার-সহ গুরুতর মহামারী দেখা দেয়। সেই সময়ে, চীন অবিলম্বে একটি খুব পরিপক্ব মেডিকেল দলের ব্যবস্থা করে এবং তারপরে প্রচুর পরিমাণ মাস্ক ও প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পাঠায়। চীনে যখন মহামারী দেখা দেয়, তখন ইরানও চীনা জনগণের পাশে দাঁড়ায়। আমি অনুভব করি যে, আমরা সত্যিই ভাল বন্ধু। যখন একটি পক্ষ সমস্যায় পড়ে, তখন সব পক্ষ সমর্থন করে।”

 

মহামারীর পর আইশালি তার নিজের চোখে চীনের মহামারীর বৈজ্ঞানিক পরিচালনা পদ্ধতিগুলো দেখেন এবং চীনা চিকিত্সা কর্মীদের সাধারণ এবং মহত সেবা দিয়ে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হন।

তিনি নিংবোতে একটি রাস্তার স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে মহামারীবিরোধী স্বেচ্ছাসেবক হিসাবেও কাজ করেন, আরও লোককে সাহায্য করার জন্য তারা তাদের শক্তি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেন,

‘বিশেষ করে মহামারীর পরে আমি দেখেছি যে অনেক মেডিকেল স্টাফ খুব কঠোর পরিশ্রম করছে; তাই আমি সত্যিই তাদের সহকারী হতে চাই। আশা করি, আরও মানুষকে সাহায্য করা যাবে।’

তার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সময়, তিনি বিনা দ্বিধায় ‘ওষুধ মেজর’ বেছে নেন। ৬ মাস অধ্যয়নের পরে, আইশালি বিস্তৃত ও গভীর চীনা ওষুধ সংস্কৃতি দ্বারা মুগ্ধ হন। তিনি চীনা ও পশ্চিমা ওষুধের সংমিশ্রিত চিকিত্সা-পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান এবং ভবিষ্যতে কিছু অনুন্নত দেশ ও অঞ্চলের লোকেদের চিকিত্সা দিতে চান। তিনি বলেন,

“আমি প্রথমে চীনে কঠোর অধ্যয়ন করতে চাই, কীভাবে পশ্চিমা ওষুধ এবং চীনা ওষুধ একত্রিত করা যায়। তারপর আমি অন্য দেশে যেতে চাই, কিছু দেশে মানুষের চিকিত্সা করা যায় এবং চীনা ওষুধের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া যায়।’