সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন ‘২০২২ গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স’ প্রকাশ করেছে। তালিকায় দেখা যায়, চীন একাদশ স্থান অর্জন করেছে। চীন ৩৪তম র্যাঙ্কিং থেকে উপরে উঠে এসেছে এবং কানাডা, ফ্রান্স ও জাপানের মতো দেশগুলির থেকে এগিয়ে রয়েছে। সূচক অনুযায়ী চীন হল সবচেয়ে বড় উদ্ভাবনী দেশ। যার দেশটির সংশ্লিষ্ট পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি এগিয়েছে। এই সূচক চীনের জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিকাশ এবং সৃজনশীলতার প্রসারকে বিশেষভাবে প্রমাণ করে।
গত সপ্তাহে সকালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ের উদ্যোগে ধারাবাহিক এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওয়াং চি কাং অংশ নেন। তিনি ‘সৃজনশীলতার মাধ্যমে উন্নয়নকে বেগবান করার কৌশল গভীরভাবে বাস্তবায়ন করা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে দ্রুততর করার’ বিষয়ে চীনের অবস্থা তুলে ধরেন।
ওই সম্মেলনে তিনি বলেন, সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিস্থিতির কেন্দ্রীয় স্থানে রাখা হয়। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্প ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে এবং ঐতিহাসিক সংস্কারও ঘটেছে। চীনের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকের র্যাংকিং ২০১২ সালের ৩৪তম স্থান থেকে ২০২২ সালে একাদশ স্থানে উঠে এসেছে এবং সাফল্যের সঙ্গে সৃজনশীল দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
২০২২ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব কর্মীর যৌথ চেষ্টায় চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন ফলপ্রসূ হয়। গবেষণা খাতে ব্যয় প্রথমবারের মতো তিন ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের চেতনাসহ সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্ধারিত নীতিমালা পালন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৃজনশীলতায় চীনা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শক্তিশালীভাবে দেশের উন্নয়ন ও কৌশলগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মূলত ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে নানা রকম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের অনেকেই আশা করছিলেন যে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্য দ্রুত বাড়বে। তবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিতে একটি নতুন মোড় তৈরি করেছে। সংঘাত ও মুদ্রাস্ফীতির চাপও বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। বিশেষ করে, দরিদ্র অর্থনীতির দেশগুলোতে ব্যাপক হারে ক্ষুধার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিশ্বকে কয়েক দশক পিছিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র নিঃসন্দেহে আশার আলো দেখিয়েছে।
গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স (জিআইআই) হল ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (WIPO) কর্তৃক প্রকাশিত একটি বার্ষিক প্রতিবেদন। যা বিভিন্ন দেশের উদ্ভাবনী কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে একটি তালিকা ঘোষণা করে। এই প্রতিবেদনটি উদ্ভাবন-সম্পর্কিত সূচকগুলির একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রদান করে; যার মধ্যে উদ্ভাবন ইনপুট, যেমন- পুঁজি বিনিয়োগ, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং অবকাঠামো এবং উদ্ভাবন আউটপুট, যেমন- সৃজনশীল আউটপুট, জ্ঞান ও প্রযুক্তি আউটপুট, ব্যবসা ও বাজারের আউটপুট তুলে ধরে। বিশ্বের উন্নয়নশীল যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইনোভেশন। ইনোভেশন বলতে মূলত নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবন, উন্নয়ন বা উন্নয়নের প্রক্রিয়া বুঝায়। যা দেশের সাধারণ উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জিআইআই একটি দেশের উদ্ভাবন কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করার জন্য বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের গুণমান, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম, অর্থের বিচরণ, বাজারের পরিশীলতা, ব্যবসায়িক পরিশীলতা এবং সৃজনশীল আউটপুট। এই সূচকের লক্ষ্য নীতিনির্ধাণ করা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্ভাবন-চালিত বৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে সমর্থন করে।
জিআইআই একটি দেশের উদ্ভাবন ক্ষমতার সবচেয়ে ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ সূচক মনে করা হয়। এটি দেশের সরকার, ব্যবসা এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি দেশ জুড়ে উদ্ভাবনী কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে দেশগুলোকে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি, নীতি ও কৌশল সজ্জায় দিক-নির্দেশনা দেওয় হয়। এসব দেশের উদ্ভাবনের কার্যকারিতা এবং প্রতিযোগিতার মান উন্নয়নেও সহায়তা করা হয়।
মোহাম্মদ তৌহিদ
বার্তা সম্পাদক, সিএমজি, বেইজিং।