"থিয়ানগং খাইউ": চীনের কৃষি ও হস্তশিল্প প্রযুক্তির প্রথম বিশ্বকোষ
2023-03-04 18:02:26

“物自天生,工开于人”বিভিন্ন জিনিস প্রকৃতি থেকে আসে, এবং মানুষের সেগুলো কাজে লাগায়। অন্যভাবে বললে, প্রকৃতির সবকিছুর বিকাশের জন্য, মানুষের জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত। এটি প্রাচীন চীনা বিজ্ঞানীদের প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সম্পর্কের উপলব্ধি, এবং এখান থেকে তাদের সৃজনশীল জ্ঞানের ধারণাও পাওয়া যায়। "থিয়ানগং খাইউ" (The Exploitation of the Works of Nature) আমাদের জানিয়ে দেয় যে, "চারটি মহান আবিষ্কার" ছাড়াও, প্রাচীন চীনের মহান সৃষ্টিতেও অক্ষয় ধন রয়েছে। আমরা প্রাচীন ও আধুনিক বিজ্ঞানীদের সাধারণ স্বপ্নও অনুভব করি: সত্যতা সন্ধান করা এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা কৃষি ও হস্তশিল্প প্রযুক্তি সম্পর্কে চীনের প্রথম বিশ্বকোষ "থিয়ানগং খাইউ"-এর ওপর আলোকপাত করব।

মিং রাজবংশ আমলের বিজ্ঞানী সং ইং শিং-এর লেখা "থিয়ানগং খাইউ", কৃষি ও হস্তশিল্পের ওপর চীনের প্রথম ব্যাপক কাজ, এবং এটি "চীনের ১৭তম শতকের হস্তশিল্পের বিশ্বকোষ" নামে পরিচিত। যে যুগে এই বইটি লেখা হয়েছিল, সেটি ছিল ইউরোপীয় রেনেসাঁর যুগ, একটি মহান পরিবর্তনের যুগ, যখন বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ও প্রযুক্তি দ্রুত বিকাশলাভ করতে শুরু করে। সর্বোপরি, চীনা বৈজ্ঞানিক সমাজ এই বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পুনরুজ্জীবন আন্দোলনে নিজস্ব ধারায় অংশগ্রহণ করে এবং সামর্থ্যের মধ্যে অবদান রাখে।

"থিয়ানগং খাইউ" বইটিতে আঠারোটি খন্ড এবং ১২৩টি ছবি রয়েছে। এটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় ৪০০ বছর আগে। এই বইয়ে সাধারণ মানুষের পানি নেওয়া ও চাল তোলার নিত্যদিনের হাতিয়ার থেকে শুরু করে সামুদ্রিক লবণ ও লোহা তৈরি এবং বুননের উত্কৃষ্ট প্রযুক্তির মতো কোনো বৈজ্ঞানিক বিষয়ই বাদ যায়নি।

"থিয়ানগং খাইউ" এর মুখবন্ধে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বাক্য রয়েছে-“此书于功名进取毫不相关也”এই বইটির সাথে খ্যাতি ও ভাগ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি পরীক্ষায় ছয়বার অকৃতকার্য হওয়ার হতাশার মধ্যেও, সং ইং শিং পরাজিত হননি। তিনি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যা-দেখেছেন ও শুনেছেন, তা থেকে শিল্প ও কৃষি উত্পাদনের বিশাল মূল্য উপলব্ধি করেন। সুং ইং শিং বহু বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করে যে সমস্ত উত্পাদন পদ্ধতি এবং শিল্প ও কৃষি কৌশল শিখেছিলেন, তা রেকর্ড করেন এবং অবশেষে "থিয়ানগং খাইউ" লিখে ফেলেন। লাভের জন্য নয়, দেশ ও মানুষের কল্যাণে এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারিক প্রযুক্তি শেখানো লেখকের মূল উদ্দেশ্য ছিল।

এই বইটি "নাই লি" (খাদ্য) দিয়ে শুরু হয় এবং "জু ইউ" (মুক্তা ও মূল্যবান পাথর) দিয়ে শেষ হয়, যা ছিল লেখকের ইচ্ছাকৃত। আগেরটি মানুষের খাবারের সাথে সম্পর্কিত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি বইয়ের শুরুতে রাখা হয়েছে। পরেরটির জাতীয় অর্থনীতি ও মানুষের জীবিকার সাথে সম্পর্কিত নয়, তাই এটি বইয়ের শেষে রাখা হয়েছে। বিষয়টা লেখক ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: "ভলিউম এভাবে ভাগ করা হয়েছে, এর অর্থ হল শস্যের গুরুত্ব বেশি এবং জেড ও সোনার গুরুত্ব কম।"

"থিয়ানগং খাইউ"-এর প্রথম অধ্যায়ে লেখা আছে “生人不能久生而五谷生之,五谷不能自生而生人生之”এর মানে হল, মানুষ শুধু নিজেদের ওপর নির্ভর করে বেশিদিন বাঁচতে পারে না। মানুষ বাঁচতে পারে, কারণ তারা নিজেদের ভরণপোষণের জন্য শস্যের ওপর নির্ভর করে; আবার শস্য নিজে থেকে জন্মাতে পারে না, মানুষকে তা রোপণ করতে হয়।

বইটির পরিবহনসংক্রান্ত অধ্যায়ে বলা হয়েছে “凡京师为军民集区,万国水运以供储,漕舫所由兴也。”এর অর্থ হল, রাজধানী হল সেই জায়গা যেখানে সেনাবাহিনী ও জনগণ জড়ো হয় এবং সমস্ত জিনিসপত্র ব্যবহারের জন্য সমস্ত জায়গা থেকে জলপথে সেখানে পাঠানো হয়। এ কারণেই জল-পরিবহনব্যবস্থার জন্ম হয়েছে।

“若夫中华四裔驰名猎取者,皆饶郡浮梁景德镇之产地。”এর মানে হল, বিখ্যাত সব চীনামাটি চিংদ্যজেনে উত্পাদিত হয়।

“天覆地载,物数号万,而事亦因之,曲成而不遗,岂人力也哉。”এর অর্থ হল, আকাশ এবং পৃথিকীর মধ্যে হাজার হাজার জিনিস রয়েছে। তাই মানুষের অনেককিছু করার আছে। এটি শুধুমাত্র সংখ্যার দৃষ্টিতে নয়, বরং বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বিবেচ্য হওয়া উচিত।

সং ইং শিং-এর সময়ে, তার দেশের বাড়ি চিয়াংসি থেকে বেইজিং যেতে অর্ধেক বছর লাগতো, কিন্তু এখন চীনে তৈরি উচ্চ-গতির রেলপথে যেতে সময় লাগে মাত্র তিন ঘণ্টা। আর যদি আপনি চীনাদের নিজেদের তৈরি সি৯১৯ বিমানে যান, তবে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। সং ইং শিং যদি জানতেন, তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের দ্বারা নির্মিত বড় রকেট "লং মার্চ" মানুষকে চাঁদে নিয়ে যেতে পারে এবং ডুবোজাহাজ "স্ট্রাইভার" সমুদ্রের ১০ হাজার মিটার গভীরে ডুব দিতে পারে; তিনি যদি আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ দেখতে পারতেন, যার মাধ্যমে মানুষ মহাকাশে ভ্রমণ করতে পারে, তবে তিনি অবশ্যই খুব আনন্দিত হতেন।

চীনা জাতি উদ্ভাবনী চেতনায় সমৃদ্ধ একটি জাতি। প্রাচীন আমলের পন্ডিতরা বলতেন যে "周虽旧邦,其命维新" যদিও আমাদের রাষ্ট্র পুরানো রাষ্ট্র, তবে এর জীবনশক্তি পুনর্নবীকরণ হয়ে থাকে", "苟日新,日日新,又日新"যদি একটি দিনকে নতুন করে তোলা যায়, তাহলে প্রতিটি দিন নতুন করে তোলা উচিত এবং নতুন করে তোলার শেষ নেই।" বলা যায় উদ্ভাবনের চেতনা চীনা জাতির স্বতন্ত্র দান। সং ইং শিং থেকে কৃষিবিদ ইউয়ান লংফিং ও নোবেল বিজয়ী ম্যাদাম থু ইউ ইউ পর্যন্ত, প্রজন্মের পর প্রজন্মের চীনা বিজ্ঞানীরা জাতি ও বিশ্বের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। চীনা জাতির উদ্ভাবনী-ক্ষমতা বহিঃপ্রকাশ ঘটছে প্রতিনিয়ত।  

(ইয়াং/আলিম/ছাই)