বন্ধুরা, মানুষ নানা উদ্ভিদ থেকে তেল পায়। যেমন সয়াবিন, বাদাম, ইত্যাদি। চীনে এমন এক ধরনের উদ্ভিদ আছে, এর নাম ক্যামেলিয়া ফল; এ থেকেও প্রচুর তেলও উত্পাদন করা যায়। আজ আপনাদের চীনের চিয়াং সি প্রদেশের কান সৌ শহরে নিয়ে যাবো। সেখানে ক্যামেলিয়া ফল চাষের অবস্থা দেখাবো।
কান চৌ শহরের দুই সহস্রাধিক বছর ধরে ক্যামেলিয়া ফল চাষ করা হচ্ছে। শহরে চার ঋতুতে রোদ বেশি থাকে, পাশাপাশি জমিও খুব উর্বর। হল ক্যামেলিয়া চাষের সুবিধাজনক এলাকা। লাল জমিতে, এক একটি ক্যামেলিয়া গাছ পাহাড়কে সবুজ করে তুলেছে, মানুষের জীবন ধনী হয়ে উটেছে। হয়তো কল্পনাও করা যায় না- এই ছোট ক্যামেলিয়া গাছটি কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাহলে এই গল্পটি কেমন?
২০১৫ সালে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক রাজনৈতিক সম্মেলন- দুই অধিবেশনের আগে, কান চৌ শহরের প্রবীণ লাল ফৌজের সেনা ওয়াং ছেং তেং বিশেষভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে একটি চিঠি লিখেন। এতে তাঁর একটি আশা ব্যক্ত করা হয়েছে: সরকার স্থানীয় ক্যামেলিয়া চাষসহ বিভিন্ন দারিদ্র্যবিমোচন শিল্পে আরো বেশি সমর্থন দিয়েছে।
এটি চিঠি কান চৌ শহরের গণ ট্রেইড কেন্দ্রের পরিচালক মিং চিং হুয়া’র মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সিকে দেয়া হয়। তিনি সেই বছর দুই অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন।
সে বছরের ৬ জুন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুই অধিবেশন চলাকালে চিয়াং সি প্রদেশের প্রতিনিধি দলের আলোচনা সভায় অংশ নেন। সম্মেলনে একজন প্রতিনিধি চিয়াং সি প্রদেশের উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলেছেন। এমন সময় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একটি চিঠি হাতে নিয়ে বলেন, এটা হল চিয়াং সি প্রদেশের একজন প্রবীণ লাল ফৌজ সেনার দেওয়া। এই চিঠি কে নিয়ে এসেছেন? তখন প্রতিনিধি মিং হাত তুলে বলেন, তিনি এই চিঠি হস্তান্তর করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি হেসে সেই চিঠি সবাইকে পড়ে শোনান।
তিনি বলেন, স্থানীয় ক্যামেলিয়া ফল চাষের বিষয়ে তদন্ত ও গবেষণা করা যায়। বিপ্লবের পুরানো এলাকার জনগণকে সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠনের পথে হারিয়ে দেয়া যাবে না।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর যত্নে, স্থানীয় ক্যামেলিয়া চাষ শিল্পের বড় উন্নয়ন ঘটেছে। কান চৌ শহর প্রাকৃতিক সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যামেলিয়া চাষের প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার করেছে। আগের নির্জন লাল জমি এখন অসীম সবুজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ এসেছেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু করেছেন। এর ফলে, ২ লাখেরও বেশি দরিদ্র মানুষ ক্যামেলিয়া চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। ক্যামেলিয়া ফল দিয়ে প্রসাধন এবং ওষুধও তৈরি করা যায়। ক্যামেলিয়ার শিল্প-চেইন আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ দশ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে।
২০১৯ সালের মে মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চিয়াং সি প্রদেশ পরিদর্শন করেন। তাঁর প্রথম ধাপেই ছিল কান চৌ শহর। যখন তিনি সেখানে যান, তখন ঘন ক্যামেলিয়া গাছ বিভিন্ন পাহাড়কে সবুজ করে রেখেছে। সি চিন পিং পরিদর্শনের সময় বলেন, বিপ্লবী এলাকার জনগণের সুখী জীবন নিশ্চিত করতে হয়, গ্রামাঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে হয়। এসব কথা জনগণের হৃদয়কে উষ্ণ করে তুলেছে।
বিপ্লবের যুদ্ধের যুগে ক্যামেলিয়া তেল অনেক মূল্যবান ছিল। জনসাধারণ তা ব্যবহার করত না, বরং তা বিনিময় করে লবণ ও ওষুধ সংগ্রহ করে যুদ্ধমাঠের লাল ফৌজকে সমর্থন দিত। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধে, ক্যামেলিয়া গাছ লোকজনকে দরিদ্রতামুক্ত করার গাছে পরিণত হয়েছে। নতুন যাত্রায়, তা জনসাধারণের কাছে সুখের গাছ হয়ে উঠছে।
(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)