ভিয়েতনামকে পত্রিকার সংস্করণ উপহার দিলো চীন
2023-03-02 16:15:26


ভিয়েতনামের হ্যনয়ের বা দিন মহাচত্ত্বরের পশ্চিমে একটি দু’তলা ভবন রয়েছে। এটি ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হো চি মিনের কর্মস্থল ও বাসস্থান ছিল। ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর, কাঠ দিয়ে তৈরি এ ভবনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুয়ান ফু ছংকে একটি উপহার দিয়েছেন। আর তা হলো পিপল’স ডেইলি পত্রিকার ১৯টি সংস্করণ। এর মধ্যে ৩টি সংস্করণে রয়েছে রুয়ান ফু ছং’র ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চীন সফরের খবরাখবর। অন্য ১৬টি সংস্করণ সম্পর্কে সি চিন পিং বলেন, সেগুলোতে ১৯৫৫ সালে হো চি মিনের চীন সফর সম্পর্কিত খবরাখবর প্রকাশিত হয়েছে। সি’র কথা শুনে রুয়ান ফু ছং খুব খুশি হন।

 

১৯৫৫ সালের ২৬ জুন পিপল’স ডেইলি পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি বড় ছবি খুব আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল। সেটি হলো মাও সে তুং ও চৌ এন লাইসহ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ বিপ্লবী নেতাদের সঙ্গে হো চি মিনের তোলা ছবি। একই সঙ্গে রয়েছে হো চি মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের প্রতিনিধি দলের বেইজিংয়ে আগমন এবং চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের সঙ্গে হো চি মিনের সাক্ষাতসহ নানা খবরাখবর। সেসব খবর প্রথম পাতার তিনভাগের দুই ভাগ দখল করে আছে। পরের দিন একই পত্রিকার প্রথম পাতায় হো চি মিনের একটি বক্তব্য ছাপানো হয়েছে: “কোনো সন্দেহ নেই যে চীন ও ভিয়েতনামের জনগণের মধ্যে মৈত্রী ও ঘনিষ্ঠতা চিরস্থায়ী, অলঙ্ঘনীয়। একে কোনো লোক বিচ্ছিন্ন বা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।”

হিসাব করলে দেখা যায় যে সাধারণ সম্পাদক হো চি মিন দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চীনে বিপ্লবী অভিযানে লিপ্ত ছিলেন। নিখিল চীনে তিনি পা রেখেছিলেন। চীন ও ভিয়েতনাম সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি হাত ও পা, মূল ও স্টেম, বড় ও ছোট ভাইয়ের মতো আপন ছিলেন। জাপানের আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধে ভিয়েতনামের একটি ছড়ার কথা সবার নজর কেড়েছিল। আর তা হলো: “চীন ও ভিয়েতনাম ঠোঁট ও দাঁতের মতো। ঠোট মরলে দাঁত শীতল হয়ে যাবে”। এ ছড়ার রচনাকারী হলেন হো চি মিন। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, “আমাদের প্রজন্মের চীনাদের মনে হো চি মিন চীনা জনগণের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমরা তাকে চাচা হো ডাকি।”

 

২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর হো চি মিনের পুরোনো বাসভবনে সি চিন পিং ও রুয়ান ফু ছং হেঁটে হেঁটে কথা বলেন। সি চিন পিং বলেন, “গুণী মানুষদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের উচিত মাও সে তুং, চৌ এন লাই এবং হো চি মিনের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে চীন ও ভিয়েতনামের মৈত্রী ধারণ ও সম্প্রসারণ করা। জনগণের জন্য যারা ভালো কাজ করে, তাদের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে।”

 

চীন ও ভিয়েতনাম উভয়ই কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দেশ। রাজনৈতিক ব্যবস্থা, উন্নয়নের পথ কাছাকাছি। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ ভিয়েতনামের জন্য অনেক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে।

 

সি চিন পিং বলেন, “গত ২০ বছরে প্রতিবার ভিয়েতনাম সফরে আমি দেশটির উন্নয়ন দেখতে পেয়েছি। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে অবিচল থাকা এবং নিজ নিজ দেশের সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উন্নয়নের পথ উন্মোচনের কারণে চীন ও ভিয়েতনামের আজকের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। চীনে একটি কথা খুব প্রচলিত রয়েছে। আর তা হলো: ‘ধীরে যাওয়ায় চিন্তিত নয়, দাঁড়িয়ে থাকায় চিন্তিত হতে হয়।’ আমি সব সময় বলি, জুতা পায়ের সঙ্গে খাপ খায় কিনা, তা কেবল নিজেকে জানতে হয়।  ইতিহাস ও জনগণের বাছাই করা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।”

(রুবি/এনাম)