মার্চ ২: “আমার অস্থির লাগছে। তারা বলেছেন, বায়ুর কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।” কথাগুলো বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একজন নাগরিক ম্যাদি। এক মাস আগে এ অঙ্গরাজ্যে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও বায়ুর কোনো সমস্যা নেই বলে সরকারী কর্মকর্তারা দাবি করছে, তবে তাদের এ দাবি বিশ্বাস করেন না ম্যাদি। কারণ তিনি ও তার ছেলের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে মার্কিন পরিবেশ রক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক দুর্ঘটনা স্থলের স্থানীয় অধিবাসীদের বলেন, পানি ও বায়ু নিরাপদ রয়েছে। তবে এর আগের দিন একই ব্যুরোর দ্বিতীয় অঞ্চলের সাবেক এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, স্থানীয়রা কোনো একটি কারণে অসুস্থ হয় পড়ছে। বায়ু ও পানি প্রকাশ্যেই সমস্যা সৃষ্টি করছে। আসলে দুর্যোগ মোকাবিলা ও এর তদন্ত প্রক্রিয়ায় মার্কিন সরকারের অযৌক্তিক আচরণ প্রতিফলিত হয়েছে। গতকাল (বুধবার) চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) এক সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সময়ের গতিতে ‘বিষাক্ত ট্রেন’ দুর্ঘটনার ভয়াবহতা দেখা দিচ্ছে। অধিকতর অধিবাসীরা ব্রংকাইটিস ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের প্রাকৃতিক জ্বালানি মন্ত্রণালয় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছে, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাস্থলে দূষিত পানিতে মৃত প্রাণীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে এ দুর্ঘটনার কুপ্রভাব অন্য অঙ্গরাজ্যেও ছড়াচ্ছে। পরিবেশের জন্য গুরুতর হুশিয়ারি সৃষ্টি করেছে এ দুর্ঘটনা। তবে তাতে মার্কিন রাজনীতিকরা প্রথমে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তা হলো অন্যদের দোষারোপ করা। শুরু দিকে নীরবতা পালনের পর এ ঘটনা দ্রুত মার্কিন দুটি রাজনৈতিক দলের উত্তপ্ত বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
রিপাবলিকান পার্টি দুর্যোগে বর্তমান ক্ষমতাসীন পার্টির উদাসীনতার অভিযোগ করে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এসময় কিয়েভে সফর করেছেন, কিন্তু নিজ দেশের দুর্ঘটনা কবলিত অঙ্গরাজ্যের অধিবাসীদের দেখতে যাননি। আর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে রেল কোম্পানির উস্কানিতে ট্রেনে সংকটপূর্ণ পণ্য নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার অভিযোগ এনেছে। একদিকে জনস্বাস্থ্যে উদাসীনতা, অন্যদিকে একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে দুই দল। তাই নিউইয়র্ক টাইমস মন্তব্য করে যে রাজনীতি ওহাইও ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় আগ্রাসন করেছে। দুটি দলের রাজনীতিকগণ পৃথকভাবে ঘটনাস্থলের টাউনে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্যে তদবির করতে যান। বহির বিশ্ব তাতে দেখতে পাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গণতন্ত্রের ব্যবস্থায় রাজনীতিকরা কেবল নিজেদের স্বার্থ দেখেন, কিন্তু জনগণের জন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চান না।
বিশ্বের বৃহত্তম শক্তিশালী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থায় উদ্বিগ্ন বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে দুর্গত অঞ্চলের জনগণ যখন অন্য দেশের গণমাধ্যমের কাছ থেকে সহযোগিতা চায়, তখন এটি মার্কিন রাজনীতিকদের প্রতি চরম অবজ্ঞা। এটি তাদের কথিত মানবাধিকারের প্রতি উপহাস।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে গড়ে ১৭০০টি ট্রেনের লাইনচ্যুতির দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে বোঝা যায় যে লিবারেল ক্যাপিটালিস্ট ডেভেলপমেন্ট মডেল ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যাপক খুঁত রয়েছে। রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব, গণতন্ত্রের অকার্যকারিতা দেখা দেওয়ায় দেশটির নাগরিকদের মূল স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করা যাচ্ছে না।
(রুবি/এনাম)