বিচারক নিয়োগে ‘ভেটো’ দিয়ে ডব্লিউটিও-কে অকার্যকর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: সিএমজি সম্পাদকীয়
2023-03-01 11:18:18


 

মার্চ ১: গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিতর্ক সমাধান সংস্থার এক নিয়মিত কর্মসভায় আপিল বডির নতুন বিচারক নির্বাচন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রস্তাবের ভোটাভোটিতে যুক্তরাষ্ট্র তার ‘ভেটো’ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। ডব্লিউটিও’র ১২৭টি সদস্য দেশ এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। তবে, এবার ৬৩তম বারের মতো তা নাকচ হয়েছে। গুয়াতেমালার প্রতিনিধি বলেন, নতুন বিচারক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার আচরণ আইনানুগ নয়। এটি সংস্থাটির অনেক সদস্যের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। গতকাল (মঙ্গলবার) চায়না মিডিয়া গ্রুপের এক সম্পাদকীয়তে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বিতর্ক সমাধান ব্যবস্থা ডব্লিউটিও’র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিতর্ক দেখা দিলে আপিল বডিতে পেশ করা হয়। তাই আপিল বডি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘সুপ্রিম কোর্ট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাতে পেশ করা প্রতিবেদনের আছে আইনি কর্তৃত্ব। আপীল বডি সাতজন বিচারক নিয়ে গঠিত হয়। অত্যন্ত তিনজন বিচারক থাকলেই কেবল এ সংস্থা স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন বিচারক নিয়োগে বাধা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এ সংস্থায় কেবল একজন বিচারক রয়েছেন। ফলে এ সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও প্রতিষ্ঠার পর বৃহত্তম সংকটে পড়েছে। ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর, আপিল বডি’র সব বিচারকের মেয়াদ শেষ হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্র এ সংস্থার প্রধান প্রতিষ্ঠাতাদের একটি। তবে দেশটি কেন বারবার সংস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে? বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলত উদীয়মান অর্থনৈতিক সত্তার জন্মের পর সংস্থাটির নীতি-বিধি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনুকূল নয় এবং তার বাণিজ্যিক নীতি প্রণয়নে অসুবিধা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি কার্যকর করে এবং বেশ কয়েকবার চীন ও ইইউসহ নানা পক্ষের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক যুদ্ধ চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের মতে ডব্লিউটিওকে ব্যবহার না করতে পারলে এ বিতর্ক সমাধানমূলক সংস্থাকে অচল করাই ভালো। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিকূল রায় এড়ানো সম্ভব হবে।

 

নীতিকে সম্মান করার কথা ওয়াশিংটনের রাজনীতিকদের মুখে মুখে প্রচলিত। বাস্তবে তারা নীতি তাদের স্বার্থের জন্য উপযুক্ত হলে ব্যবহার করে এবং না হলে পরিত্যাগ করে। বাইডেন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার আওতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি চালু করে এবং অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নীতি লঙ্ঘন করে। অন্যান্য দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ‘সত্তা’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। লম্বা হাতের এখতিয়ার ও বাণিজ্যিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, চিপ ও বিজ্ঞান প্রস্তাব এবং মুদ্রাস্ফীতি কমানো আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিশ্ব শিল্প-চেইনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা উন্মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতি লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে ডব্লিউটিও’র আপিল বডির কার্যক্রমে বাধা দিয়ে আসছে, যাতে অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের অধিকার রক্ষার বৈধ পদ্ধতি স্থগিত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এহেন সব আচরণের তীব্র বিরোধিতা করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। দেশটির প্রকাশিত মুদ্রাস্ফীতি কমানো প্রস্তাবের পাল্টা জবাব দেবে বলে ঘোষণা করেছে ইইউ।

 

আন্তর্জাতিক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারের নিয়ম নয়, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রকে সেবা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এক শ্রেণীর মানুষেরা কথিত ‘শক্তি’ প্রয়োগ করে বাণিজ্যিক বিতর্ক সমাধান করতে চায় এবং অন্যান্য দেশকে নত করাতে চায়। এটি অবাধ বাণিজ্য নীতির পাশাপাশি বহুপক্ষীয় প্রশাসন নীতির লঙ্ঘন। বর্তমানে বিশ্বায়ন ও বহু মেরুর বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র তার ইচ্ছামতো আচরণ করতে পারবে না।

(রুবি/এলাম)