ফেব্রুয়ারি ২৬: রাশিয়া থেকে জার্মানিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোয় জ্বালানি-সম্পদ পরিবহনের নোর্ড স্ট্রিম প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের নতুন লাইন নির্মাণের শুরুর কাজ যুক্তরাষ্ট্র বন্ধ করে দেয়। রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষ শুরু হলে নোর্ড স্ট্রিম-১ ও নোর্ড স্ট্রিম-২ বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাটি কয়েক মাস আগে সংঘটিত হয়েছিল। বিশ্ব তখন বিশ্বাস করত যে, বিস্ফোরণটি ছিল একটি স্থায়ী রহস্য। সম্প্রতি দু’জন মার্কিন সাংবাদিক পৃথক পৃথকভাবে পর্দার অন্তরালের সত্য ঘটনা প্রকাশ করে দেন।
দুই মার্কিন সাংবাদিকের খবরে বলা হয়, নোর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে বিস্ফোরণের ঘটনার নির্দেশ দেয় জো বাইডেন সরকার। এটি মার্কিন সামরিক বাহিনী ও নরওয়ে সরকারের সহযোগিতায় করা হয়েছিল। এটি একটি উন্মাদের মতো কার্যক্রম ও তলাবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী তত্পরতা।
অবশ্যই হোয়াইট হাউস এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে। এদিকে ইউরোপসহ সব পশ্চিমা দেশের গণমাধ্যমগুলো বেইশি পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় মনোযোগ দেয় না।
সম্প্রতি রাশিয়া ও চীনের চাপে জাতিসংঘ নোর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় সম্মেলন আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সম্প্রতি ঘটনাটি সম্পর্কে এক প্রকাশ্য যাচাই সম্মেলনে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা স্থায়ী প্রতিনিধি চাং জুন বলেন, অধিক থেকে অধিকতর প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, বেইশি প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের বিস্ফোরণটি দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি ইচ্ছাকৃত নাশকতা ছিল। বর্তমানে আরো বেশি দেশ বেইশি পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করার অনুরোধ জানায়। সত্য পুনরুদ্ধার করতে এবং কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে হবে।
দেখা যায় যে, এবারের সম্মেলনে নতুন দলিল ও প্রমাণ দেওয়া হয়। সেজন্য কোনো সংশ্লিষ্ট দেশ ‘অনুপস্থিতির’ পদ্ধতি অবলম্বন করে পালাতে পারবে না এবং তার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে হবে। ধামাচাপা দেওয়া ও এড়ানোর চেষ্টার সাথে অন্য দেশগুলোকে আঘাত করা এবং আক্রমণ করার প্রচেষ্টা সফল হতে দেওয়া উচিত নয়। এরকম হলে-বিশ্বে ন্যায়বিচার থাকবে না।
কে সবচেয়ে বেশি উসকানি দিয়েছে আর কে উপকৃত হয়েছে- তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কল্পনা করতে পারি যে, এ ঘটনার পরে সবচেয়ে সুবিধাভোগী কে। সেই হলো এ ঘটনার সবচেয়ে বড় সন্দেহভাজন। বর্তমানে দুই মার্কিন সাংবাদিকের অভিযোগ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের নির্ভরতা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। এটি শুধুমাত্র রুশ-ইউক্রেন সংঘাতের উপর নির্ভর করে না, তবে সরাসরি নোর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বিস্ফোরণ করে সম্পূর্ণভাবে রাশিয়া থেকে পাঠানো প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এর ফলে ইউরোপ শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারে। কোনো সন্দেহ নেই যে, বেইশি পাইপলাইন ধ্বংসের কারণে সরাসরি সুবিধাভোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি মার্কিন সাংবাদিকদের বেইশি পাইপলাইনের খবর সম্পর্কে ইতালির সাংবাদিক গিলবার্তো ট্রম্বেটা বলেন, মার্কিন সাংবাদিক সেমর হার্সের খবরের যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। কারণ, এ ঘটনার একমাত্র সুবিধাভোগী পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র। থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিনিজ জারুসোমাবাট চায়না মিডিয়া গ্রুপের সাংবাদিককে বলেন, বেইশি পাইপলাইনের বিস্ফোরণে ইউরোপে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম সুবিধাভোগী রাষ্ট্র এবং এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন পক্ষ।
এদিকে এখন আরও বেশি ইউরোপীয় কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসন্তুষ্ট। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকখোঁ (Emmanuel Macron) প্রকাশ্যে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল জ্বালানি সম্পদ বন্ধুত্বহীন। পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণ কোম্পানি কেপলারের (Kepler) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মোট আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ ৪১ শতাংশ হয়েছে; যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক সমাজের ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের জন্য এবং প্রধান অপরাধী খুঁজে বের করার জন্য চীন ও রাশিয়া সহযোগিতা চালাচ্ছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে তার কাজের মুখোমুখি করা যায়। এটি বৈধ অধিকার ও বিশ্বে ন্যায়বিচারের জাগরণ। যুক্তরাষ্ট্র তদন্তে সহযোগিতা করছে না এবং তার নির্দোষ অবস্থা প্রমাণ করছে না; যা ইতোমধ্যে সমস্যা সৃষ্টির একটি উদাহরণ। শুধুমাত্র সঠিক তথ্য পুনরুদ্ধার করা ও দায়ী পক্ষ খুঁজে বের করার মাধ্যমে বিশ্ব তুলনামূলক স্থিতিশীল হতে পারে।
মুক্তা, সিএমজি, বেইজিং থেকে।
(ছাই/তৌহিদ)