আকাশ ছুঁতে চাই ৭
2023-03-01 15:44:59

১. তারা দুঃসাহসী নারী

২. কৃষি উদ্যোক্তা নারী চাংশাশা

৩. জন্মহার বাড়াতে কর্মজীবী নারীর জন্য সুবিধা বৃদ্ধি

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

তারা দুঃসাহসী নারী

ওসি: নারীরা আজ অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন দুঃসাহসিক পেশায়। যেমন অরণ্যরক্ষী বা রেঞ্জারের মতো পেশা। এই পেশার কথা শুনলে প্রথমেই মনে হয় এটি পুরুষের পেশা। কিন্তু এই পেশাতেও এগিয়ে এসেছেন নারীরা। চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের অরণ্যে রেঞ্জারের পেশায় রয়েছেন একদল নারী। চলুন শোনা যাক তাদের কথা আমার তৈরি একটি প্রতিবেদনে।

অরণ্য রক্ষী বা ফরেস্ট রেঞ্জার শুনলে প্রথমে পুরুষদের কথাই মনে আসে। কিন্তু নর্থইস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লিওপার্ড ন্যাশনাল পার্কে নারী সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি অরণ্যরক্ষী দল সাহস ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে।

শূন্যের চেয়ে তাপমাত্রা যখন ২০ ডিগ্রিরও নিচে নেমে যায় তখনও কিন্তু এই নারী রেঞ্জাররা নিরাপদ আশ্রয়ে বসে থাকেন না। তাদের দায়িত্বে আছে ন্যাশনাল পার্কের ২৩ হাজার হেক্টর জায়গা , যেখানে রয়েছে ৫০টিরও বেশি আমুর টাইগার এবং পাঁচশ’র বেশি বাঘজাতীয় প্রাণী। আমুর টাইগার হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিপন্ন প্রাণীগুলোর অন্যতম।

বাঘজাতীয় প্রাণীদের সুরক্ষা ও ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারের জন্য উত্তরপূর্ব চীনের চিলিন ও হেইলুংচিয়াং প্রদেশের সীমান্তজুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘নর্থইস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লিওপার্ডন্যাশনাল পার্ক। ১৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে চীন সরকার এই পার্ক গড়ে তুলেছে।

২০১৯ সালে ছয়জন নারী রেঞ্জারের এই দল এই সংরক্ষিত অরণ্য অঞ্চলে কাজ শুরু করে। ৬.৫ কিলোমিটার পেট্রোল রুট ধরে নারী রেঞ্জরদের দল টহল দেয়ার সময় অনেকবার অনেক রকম প্রতিকূলতা পার হয়েছেন। প্রাণীদের জন্য পাতা ফাঁদগুলো খুঁজে বের করে তার অপসারণ, পায়ের ছাপ খোঁজা এবং বিপদে পড়া বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার করা তাদের কর্তব্য। এই কাজ করার সময় শুধু প্রচণ্ড ঠান্ডা ও তুষারই নয় বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও আছে।

এই দলের এক সদস্য চাং সিন বলেন, ‘একবার গরমকালে আমরা টহল দেয়ার সময় ভীমরুলের ঝাঁকের কবলে পড়ি। ভীমরুলের হুলের আঘাত ছিল মারাত্মক। অনেক কষ্টে প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম সেদিন।’

স্থানীয় ফরেস্ট্রি স্টেশনের ডেপুটি হেড লি কাং বলেন, ‘এই নারী রেঞ্জারদের দল অত্যন্ত দক্ষ। তারা সেরা তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। ‘

এই দলের একজন নারী সদস্য সু। ৩৩ বছর বয়সী সু এক ছেলে সন্তানের মা। সু বলেন, ‘আমি ছেলেকে আমার অরণ্য রক্ষা কাজের গল্প বলি। ও খুব পছন্দ করে।’

এই অরণ্যরক্ষী নারী দলের অনেকেই এসেছেন এমন পরিবার থেকে যারা কয়েক প্রজন্ম ধরে এই অরণ্যভূমিতে বাস করছেন। তারা তাদের পূর্ব প্রজন্মের কাছ থেকেই অরণ্য সম্বন্ধে অনেক শিক্ষা পেয়েছেন। শৈশব থেকেই তারা এই পরিবেশে অভ্যস্ত। এখন এই অরণ্যভূমিকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করে চলছেন এই সাহসী নারী রেঞ্জারের দল।

কৃষি উদ্যোক্তা নারী চাংশাশা

দিন যত যাচ্ছে সব ধরনের পেশায় আসছেন নারীরা। চীনের মত বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে কৃষি অর্থনীতে নারীর ভূমিকা বাড়ছেই। চীনজুড়ে রয়েছে  কোটি নারী কৃষি উদ্যোক্তা। তারমধ্যে হ্যপেই প্রদেশের চাং শাশা অন্যতম। যিনি  বিয়ের পর নিজ উদ্যোগে শুরু করেন চারা রোপ্ণের কাজ। ছোট চারা রোপণের খামার ধীরে ধীরে আজ পরিণত হয়েছে বড় খামারে। যেখানে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে প্রায় হাজারো শ্রমিকের। সুপ্রিয় শ্রোতা আফরিন মিমের প্রতিবেদনে চলুন জেনে নেই  চাং শাশার কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

বসন্ত শুরুর সাথে সাথে চারা উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নারী কৃষি উদ্যোক্তা চাং শাশা।

৩৩ বছর বয়সী চাং শাশা উত্তর চীনের হ্যপেই  প্রদেশের সানিং শহরের বাসিন্দা । স্বামীকে সাথে নিয়ে ২০১৫ সালে শুরু করেন সবজির ব্যবসা। 

নিজেদের গ্রিনহাউজের বেশিরভাগ কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন চাং শাশা। দিনের বেশিরভাগ সময়টা এই গ্রিনহাউজেই কেটে যায় তার। গ্রীনহাউজে চারাগুলোরিউৎপাদন থেকে শুরু করে ক্ষেতে রোপণ করা পর্যন্ত, সবজি শিল্পের সব ধরনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন চাং শাশা। আর এভাবেই এ খাতের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন তিনি।

চাং  শাশা নিজ শহর সানিং কাউন্টিতে এখন পরিচালনা করছেন বিশেষ সমবায়।   ২০২১ সালে অল-চীন উইমেনস ফেডারেশন এবং চীনের কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পান নারী কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে বিশেষ স্বীকৃতি।

চাং শাশার এমন কৃষি উদ্যোগ অনুপ্রাণিত করেছে স্থানীয় অনেক নারীকে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এখন কাজ করছেন তার এই বিশেষায়িত সবজি সমবায়ে। জানা যায় বর্তমানে চাংয়ের সবজির জন্য বিশেষায়িত সমবায়ে কাজ করছেন ছয়শ’রও বেশি মানুষ।  আর এখানে সারা বছর ৭০টিরও বেশি জাতের সবজি ও ফলের চাষ হয়। 

কৃষিকে মূল পেশা হিসেবে নিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যেতে চান এই কৃষি উদ্যোক্তা । 

 

 

জন্মহার বাড়াতে কর্মজীবী নারীর জন্য সুবিধা বৃদ্ধি

 

চীনে গত ছয় দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো জন্মহার কমতির দিকে। অনেক সময় কর্মজীবী নারী একাধিক সন্তান জন্ম দিতে চান না শিশুকে কোথায় কার কাছে রেখে যাবেন সে চিন্তায়। জন্মহার বাড়াতে সম্প্রতি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে চীনের শহরগুলো। এইসব উদ্যোগের ফলে কর্মজীবী মায়ের দুঃশ্চিন্তা অনেকটাই কমেছে। চলুন শোনা যাক এ বিষয়ে আমার তৈরি একটি প্রতিবেদন। বলছেন রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

জন্মহার বৃদ্ধির জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রসহ আরও নানা রকম উদ্যোগ নিচ্ছে চীনের শহরগুলো। নারীদের এবং পরিবারের জন্যও তারা দিচ্ছে বিশেষ কিছু সুবিধা।

চেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হানচৌ শহর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, পরিবারে তৃতীয় সন্তানের জন্ম হলে মা ও বাবা ২০ হাজার ইউয়ান পাবেন, দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলে পাবেন ৫ হাজার ইউয়ান পুরস্কার।

কুয়াংতুং প্রদেশের প্রযুক্তি নির্ভর মহানগরী শেনচেনের বাসিন্দাদের জন্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, তৃতীয় সন্তানের জন্মদানকারী মা বাবা পাবেন ১৯ হাজার ইউয়ান। শেনচেন নগর কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় প্রথম সন্তানের মা বাবা সাড়ে সাত হাজার ইউয়ান পাবেন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলে পাওয়া যাবে ১১ হাজার ইউয়ান। শিশুর বয়স পাঁচ বছর হওয়া পর্যন্ত বার্ষিক কিস্তিতে এই অর্থ মিলবে ।

শানতুং প্রদেশের রাজধানী চিনান শহরে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের জন্ম হলে মা বাবা প্রতিমাসে ৬০০ ইউয়ান পাবেন।

এছাড়াও বিভিন্ন শহর তাদের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং নার্সারির সযোগ সুবিধা বাড়াচ্ছে যেন কর্মজীবী নারীরা তাদের শিশুসন্তানকে নিরাপদে রেখে কাজে যেতে পারেন।

চায়নিজ একাডেমি অব সোশাল সায়েন্সেস এর ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড লেবার ইকোনোমিক্স এর গবেষক ইয়াং ক্য। তিনি মনে করেন অপেক্ষাকৃত কম উপার্জনকারী মায়ের জন্য আর্থিক প্রণোদনা উৎসাহ ব্যঞ্জক হতে পারে তবে, পেশাজীবী নারীদের জন্য কর্মস্থলে সুযোগ সুবিধা এবং শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ও নার্সারির সংখ্যা বৃদ্ধি বেশি কার্যকরী হবে।

লিয়াওনিং প্রদেশের শানইয়াং সিটিতে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে নার্সারিগুলো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে সেগুলো শিশুপ্রতি ৩৬৫ ইউয়ান ভর্তুকি পাবে প্রতি মাসে। এরফলে সব মায়ের জন্যই নার্সারিতে শিশুকে রেখে যাওয়া সহজ হবে। এছাড়া প্রতিটি কর্ম প্রতিষ্ঠানে শিশুযত্নকেন্দ্র থাকতে হবে যেন মায়েরা তাদের সন্তানকে রেখে কাজ করতে পারেন।

কর্মজীবী মায়েদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে শিশু জন্মদানে উৎসাহিত করা হচ্ছে আরও অনেকগুলো শহরে।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনারা এসএমএস পাঠাতে পারেন এই নম্বরে 017149224867. আমি আবার বলছি 017149224867

আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল