‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব-৭
2023-02-28 15:47:10

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। সামার প্যালেস: অতুলনীয় এক জগত

২। একজন চীন ভ্রমণকারীর সাক্ষাৎকার

৩ । পর্‍্যটক আকর্ষণে চিয়াংমেন শহর

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের সপ্তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম। 

 

১। সামার প্যালেস: অতুলনীয় এক জগত

চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটনস্থানগুলোর  অন্যতম সামার প্যালেস। বেইজিংয়ের এই প্রাসাদ ও উদ্যান ছিল চীনা সম্রাটদের গ্রীষ্মকালীন আবাস। ইহেইইউয়ান বা গার্ডেন অব প্রিসারভিং হারমনি নামেও পরিচিত।

 

বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা একটি পার্ক। ২.৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এই পার্কে রয়েছে লেক, দ্বীপ, পাহাড় ও অনেকগুলো প্রাসাদ। ‘লংজিভিটি হিল’, ‘কুনমিং লেক’,  গ্রীষ্ম প্রাসাদ, হল অফ ক্লাউডস, লং কোরিডরসহ রয়েছে অনেকগুলো স্থাপনা ।

পাহাড় ও লেক দুটোই মানুষের তৈরি। লেক খুঁড়ে যে মাটি বের হয় তা দিয়েই তৈরি হয় পাহাড়টি। সামার প্যালেসের প্রথম স্থাপনা নির্মিত হয় ‘চিন রাজবংশে’র সময় ১১৫৩ খ্রিস্টাব্দে। এরপর ইউয়ান, মিং ও ছিন রাজবংশের সময় গড়ে ওঠে বিভিন্ন স্থাপনা।

বিশাল কুনমিং লেকের পাশেই রয়েছে লংজিভিটি হিল পাহাড়। ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়। এখানে ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। এই পাহাড়ের উপরে রয়েছে টাওয়ার অব বুদ্ধিস্ট ইনসেনস নামে এক মন্দির। এগুলো সব মিং রাজবংশের আমলে তৈরি করা হয়। মিং সম্রাটদের শাসনামলে চরম উৎকর্ষ লাভ চীনের স্থাপত্য ও শিল্পকলা ।

এখানকার পাহাড়ের সবগুলোর চূড়াতেই রয়েছে নানা রকম প্রাসাদ ও মন্দির। এর মধ্যে কয়েকটি প্রাসাদে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতেন সম্রাটরা। সেই সঙ্গে কোনো কোনো প্রাসাদে বসতো গ্রীষ্মকালীন দরবার। 

এখানে একটি লেক থেকে অন্য লেকে যাবার জন্য রয়েছে পাথরের কারুকার্যময় সেতু। আর কুনমিং লেকের মধ্যে রয়েছে নানহু আইল্যান্ড নামে একটি ছোট্ট দ্বীপ। সেই দ্বীপেও রয়েছে প্রাসাদ।

সামার প্যালেসের লং কোরিডরের স্থাপনা আকৃষ্ট করে পর্‍্যটকদের।  ৭২৮ মিটার দীর্ঘ আঁকাবাঁকা কোরিডর চলে গেছে বাগান ও লেক ঘেঁষে এক প্রাসাদ থেকে আরেক প্রাসাদে।কাঠের অপূর্ব কারুকাজ করা কোরিডরে স্থাপন করা আছে ভাস্কর্য ও পেইন্টিং। রয়েছে বসার ব্যবস্থাও। কুনমিং লেক ছাড়াও সামার প্যালেসের পার্কে রয়েছে বেশ ক’টি লেক। সেখানে শোভা পায়  শত পদ্মফুল ।

সামার প্যালেসের একটি অংশে আছে বিখ্যাত সুচৌ স্ট্রিট। এখানে সুচৌ নগরীর মতো করে নদীর তীরে বানানো হয়েছে কাঠের বাড়িঘর। প্রতিটা প্রাসাদ, হল, মন্দির কাঠের ও পাথরের অসাধারণ সুন্দর কারুকাজ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পর্‍্যটকরা।

২। একজন চীন ভ্রমণকারীর সাক্ষাৎকার

চীনে চার বছর পড়ালেখা করেছেন শামীম রেজা। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সামিট বিবিয়ানা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ‘ঘুরে বেড়াই’ অনুষ্ঠানের এবারের পর্বে আমাদের কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান তার চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। 

চার বছর চীনে থাকাকালীন বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরেছেন তিনি। চীনের সংস্কৃত ও ঐতিহ্য ,আতিথেয়তা মুগ্ধ করে তাকে। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত ভ্রমণে তার সবচেয়ে বেশি ভালোলেগেছে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,সেখানকার মানুষের জীবনযাপন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। 

বন্ধুদের সাথে শামীম রেজা

 “  তিব্বতের মানুষের সাথে মিশেছি, সেখানকার বাজারে গিয়েছি এটা আমার জীবনের বড় অভিজ্ঞতা”

বন্ধুদের সাথে শামীম রেজা

যারা চীন ঘুরতে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ পড়ালেখা করার জন্য চীন উত্তম জায়গা। চীন সরকার বিভিন্ন স্কলারশীপ দিয়ে থাকে। যদি কেউ সেই স্কলারশীপ পান তাহলে তার অবশ্যই সেখানে গিয়ে পড়া উচিত। আর ঘুরার জন্যও চীন সুন্দর জায়গা। যেই যাবে চীনে তার খুব ভালো লাগবে।

৩ । পর্‍্যটক আকর্ষণে চিয়াংমেন শহর

 

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের একটি প্রিফেকচার-স্তরের শহর চিয়াংমেন। শহরটি পেনচিয়াং নামেও পরিচিত।

 

 

দিন দিন পর্যটকদের আনোগোনা বাড়ছে প্রানচঞ্চল এই শহরে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া নক আউট সিনেমার বেশকিছু  চিত্র ধারণ করা হয়েছে এই শহরের বিভিন্ন জায়গায়। বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই নাটকের অনেক দৃশ্যই ধারণ করা হয়েছে শহরের ঐতিহাসিক আর্কেড হাউস বা কিলোউ ও দিয়াওলো বা সুরক্ষিত বাসস্থানে। ফলে পর্‍্যটক ছুটছেন সেইসব জায়গায়।

 

 

এই শরটিতে রয়েছে হাজার হাজার বিদেশী চীনাদের পাশ্চাত্য-শৈলীর আবাসস্থল বা তোরণ ঘর ও বহু পুরনো রাস্তা । ঐতিহ্যবাহী এসব তোরণ ঘরে রয়েছে স্থানীয়দের থাকার ঘর ও দোকান। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ তোরণ ঘর তিন বা চার তলা বিশিষ্ট লম্বা। আর তোরণগুলো ফুটপাথের উপর দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত প্রসারিত হওয়ায় তৈরি করেছে ছায়াময় পরিবেশের, যা- দোকানপাট এবং পথচারীদের প্রচণ্ড রোদ -বৃষ্টি থেকে নিরাপদ রাখতে সাহয্য করে।

 

 

এছাড়া চিয়াংমেনে রয়েছে চীনা উদ্যোক্তাদের দ্বারা নির্মিত অনেক ঐতিহাসিক বিলাসবহুল ভিলা। আর শহরজুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি উদ্যান। যেখানে গেলেই ধরা পড়ে চিয়াংমেনের অনন্য ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন।

 

 

শহরটি ঐতিহ্যগতভাবে পার্ল রিভার ডেল্টা চুক্তি বন্দর ছিল। খাইপিং দিয়াওলো এবং গ্রাম হিসাবে পরিচিত সাংস্কৃতিক ভান্ডারের আবাসস্থল হিসেবে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। 

২০২০  সালের আদমশুমারি অনুসারে, এ শহরে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষের বাস। ব্যাপক জনসংখ্যার এই শহর সুস্বাদু খাবারের শহর নামেও খ্যাত। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন স্বাপত্য –ভাস্কর্য দেখতে যেমন ভিড় করেন পর্‍্যটকরা তেমনি এখানকার খাবার খেতেও আসেন অনেক ভোজনরসিকরা।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী