চীন আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের চোখে একটি আদর্শ দেশ: কম্বোডিয়ান ছাত্র হাই সুসিন
2023-02-28 13:11:13

হাই সুসিন কম্বোডিয়া থেকে এসেছেন। তিনি বলেছেন, তার আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করার জন্য চীন তার জন্য আদর্শ দেশ। চীনে পড়াশোনা করতে পারাটাই তার জীবনের সেরা পছন্দ! চীনের সঙ্গে তার দুটি মেলামেশার অবিস্মরণীয় মুহূর্তগুলো কেমন ছিল? চীনে বসবাস করার বিষয়ে তার নতুন অনুভূতি আছে। শুনুন তার গল্প।

২৫ বছর বয়সী হাই সুসিন বর্তমানে বেইজিং ইউনিভার্সিটি অফ কেমিক্যাল টেকনোলজিতে অ্যাকাউন্টিংয়ে অধ্যয়ন করছে। প্রতিবেদক যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি চীনে পড়াশোনা করতে এসেছেন, তখন হাই সুসিন বিনা দ্বিধায় উত্তর দেন: “আমি মনে করি অধ্যয়নের জন্য চীনে আসা আমার জীবনের সেরা পছন্দ। দ্রুত বিকাশের দেশ চীন হলো শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ ঠিকানা।”

 

চীনের সঙ্গে হাই সুসিনের গল্প ২০১৯ সালে শুরু হয়েছে। সে বছর, হাই সুসিন দেখেন যে, তিনি যে শহরে বহু বছর ধরে বাস করেছিলেন- তার পরিবর্তন হচ্ছে, এই পরিবর্তনই তাকে চীনা ভাষা শেখার জন্য উত্সাহিত করে। তিনি বলেন,

‘হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর, আমি দেখেছি যে কম্বোডিয়ায় আরও বেশি চীনা কোম্পানি আবির্ভূত হয়েছে এবং সেখানে চীনা-ভাষী প্রতিভার চাহিদা অনেক। তারপর আমি হাইনান প্রদেশে চীনা ভাষা শেখার জন্য আবেদন করেছিলাম। আমার পরিবারের সদস্যরাও আমাকে খুব সমর্থন করেছিল। চীন বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলির মধ্যে একটি এবং বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ, তাই তারা চিন্তা করে না।”

 

পরে হাই সুসিন ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ভোকেশনাল কলেজে পড়ার জন্য আবেদন করেন। তিনি দ্রুত এখানকার জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন এবং অনেক উষ্ণ ও সদয় চীনা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেন। হাইনানে, তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণের মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্যও অর্জন করেন। তিনি বলেন, সে মুহূর্তে, তার হৃদয় চীনা জনগণের মতোই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। হাই সুসিন বলেন,

“এটি রাতে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, অনেক মানুষ সমুদ্রের ধারে তা দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল। নিক্ষেপের সময় সবাই চিৎকার করে উঠল! আর মাটি কাঁপতে থাকল, এবং তারপর আমিও চিৎকার করলাম। খুব উত্তেজিত।”

 

এক বছর অধ্যয়নের পর, হাই সুসিন সফলভাবে চীনা ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা (এইচএসকে) লেভেল ৫ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি কম্বোডিয়ায় ফিরে যান এবং ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ চীন-কম্বোডিয়া সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই বছর কাজের সময় হাই সু সিন স্থানীয় মানুষের জীবনের প্রকৃত উন্নতিও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেন,

“সমস্যা হলে, চীনারা সবসময় সাহায্য করে। কিছু দরিদ্র পরিবারের জন্য, তাদের পার্কে সবুজায়ন ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয় এবং কিছু তাদের পরিবারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য পার্কে ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য বিক্রেতাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। তারা খরা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজনকে চাল, পানীয় জল ইত্যাদিও দান করে। সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্ভবের কারণে আশেপাশের গ্রামীণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়, পরিবারের সবাই সুখী হয়।”

সিহানুকভিল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকার সময়, হাই সুসিন কাজের ক্ষেত্রে চীনা জনগণের আন্তরিকতা ও উত্সাহও অনুভব করেন এবং চীনা কোম্পানিগুলির তৈরি করা নতুন প্রযুক্তিতে তিনি বিস্মিত হয়ে পড়েন। তাই আবারও চীনে পড়াশোনা করার চিন্তা মাথায় আসে তার। অবশেষে তিনি বেইজিংয়ে আসেন। তিনি বলেন,

“আমি যখন প্রথমবারের মতো নিষিদ্ধ শহরে যাই তখন আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। এত বিশাল ও সুন্দর। ইতিহাস একে সময়ের একটি ভারী অনুভূতি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে। এটি একটি মূল্যবান সম্পদ। পাশাপাশি এটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বটে।

 

যদিও তিনি বেইজিং ইউনিভার্সিটি অফ কেমিক্যাল টেকনোলজিতে অর্ধেক বছরেরও কম সময় ধরে আছেন; তারপরও তিনি ছাত্রদের বন্ধুত্ব, উত্সাহ এবং সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যময় শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতায় খুব সন্তুষ্ট। তিনি বলেন,

“আমি আমার চীনা বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোনা করতে পছন্দ করি, কারণ আমি একটি বিখ্যাত চীনা উক্তি শিখেছি, ‘যুবক শক্তিশালী হলে একটি দেশ শক্তিশালী হবে’; এবং আমি চীনা ভবিষ্যতের স্তম্ভদের সঙ্গে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়ে তাদের 

নিজ নিজ দেশের উন্নয়নের কঠোর পরিশ্রম নিয়ে গর্ব করার মতো বিষয়।”

 

এ বছর চীন এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬৫তম বার্ষিকী। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, অভিন্ন লক্ষ্যের চীন-কম্বোডিয়া কমিউনিটির নির্মাণ ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জন করেন। হাই সু সিন বলেন, তিনি আশা করেন, চীন-কম্বোডিয়া বিনিময় ও সহযোগিতা উচ্চতর স্তরে উন্নত করতে পারে এবং তিনি আশা করেন, চীনা বন্ধুরা তার মাতৃভূমিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

 

তিনি বলেন, ‘চীন ও বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল, বিশেষ করে মহামারীর সময়ে, চীন অনেক দেশকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করেছিল। চীন-কম্বোডিয়া অবাধ বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর, কম্বোডিয়ায় চীনের বিনিয়োগও অনেক বেড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি ও কৃষি ইত্যাদি। আমি আরও বেশি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি এবং আমি আরও আশা করি যে, আরও বেশি চীনা মানুষ 

ভ্রমণ করবে এবং আমাদের অ্যাংকর ওয়াট এবং সুন্দর সৈকত দেখতে আসবে।”

ভবিষ্যত সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে হাই সু সিন বলেন, স্নাতক শেষ করার পর তিনি চীনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এবং চীনা যুবকদের সঙ্গে দুই দেশের বন্ধুত্বের খাতে অবদান রাখার আশা করেন। তিনি বলেন,

‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের পরে, আমি স্নাতকোত্তরের পরিকল্পনা করি। এর পর, আমি এখানে যে পেশাদার জ্ঞান শিখি তা আমার দেশে ফিরিয়ে নিতে চাই। আমার নিজের প্রচেষ্টায় আমার দেশকে উন্নতির দিকে চালিত করব এবং চীন-কম্বোডিয়া অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতায় অবদান রাখব।’