চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-02-27 10:57:50

৭ম পর্বে যা থাকছে:

*চীনে ঘরের ভেতরেই গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা!

*গভীর-মস্তিষ্কের ছবি ধারণে সক্ষম মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেছে চীন

*পাইতুর সার্চ ইঞ্জিনে যোগ হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বট ‘আর্নি’

 

চীনে ঘরের ভেতরেই গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা!

চীনে নতুন প্রযুক্তি প্রথাগত ড্রাইভার প্রশিক্ষণ শিল্পকে নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে; দিন দিন বাড়ছে এই প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা। এই প্রযুক্তির অগ্রগতি বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছে গাড়ি চালানো শেখাকে আরও সহজ করে তুলেছে। এর ফলে নতুন কর্মসস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ নতুন প্রযুক্তির প্রবেশ চীনের চালক প্রশিক্ষণ শিল্পকে একটি নতুন পথ দেখাতে সাহায্য করছে, যা ব্যবসা ও প্রশিক্ষকদের তাদের শিক্ষার পদ্ধতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে। নতুন শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার সুযোগ দিচ্ছে এই প্রযুক্তি। 

এই অত্যাধুনিক সরঞ্জামগুলো প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ মাঠের সীমাবদ্ধতা ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে আরামদায়ক অনুশীলনে সক্ষম করেছে। 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানান, বাস্তব পরীক্ষার গাড়ি থেকে সংগৃহীত উপাত্তকে কেন্দ্র করে প্রতিটি সেশনে ব্যবহারকারীদের পারদর্শিতার উপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ-পরিকল্পনা নিখুঁত করে সিমুলেশন। ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন রুটে এবং বিভিন্ন আবহাওয়ায় ড্রাইভিং পদ্ধতি অনুকরণ করতে পারে।

ড্রাইভিং স্কুলের মালিকরা এই কৌশলগুলোর প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কারণ ঐতিহ্যগত প্রশিক্ষণের পদ্ধতিগুলোকে রূপান্তরিত করতে, শক্তি সঞ্চয় করতে, জ্বালানী, শ্রম ও ভাড়ার খরচ কমাতে সাহায্য করছে নতুন প্রযুক্তি ৷ অনেক ব্যবসায়ী এই নতুন প্রযুক্তিগুলো প্রবর্তন করতে আগ্রহী, যা শুধুমাত্র নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করবে না বরং নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে বলে জানান হুবেই-ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত কর্পোরেশনের প্রধান ওয়াং খুন। 

তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শিখছি। স্মার্ট হার্ডওয়্যার সরঞ্জামগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোকে গ্রহণ করছে বুদ্ধিমান ড্রাইভিং স্কুলগুলো। আমরা আরও শিখেছি যে কিছু বড়  ড্রাইভিং স্কুল  নাগরিক গোষ্ঠি-ভিত্তিক স্মার্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক মডেল অন্বেষণ করছে এবং এর মাধ্যমে কিছু অনলাইন কার্যক্রম চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।”

বর্তমান কর্মচারীদের নতুন পদে স্থানান্তর করা স্কুলগুলোর জন্য এখন প্রধান কাজ। তবে এটি মোটামুটি মসৃণভাবে অগ্রসর হচ্ছে।

 

ইতোমধ্যে, নতুন প্রযুক্তির অগ্রগতি আরও বেশি লোকের কাছে গাড়ি চালানো শেখাকে আরও সহজ করে তুলেছে। প্রবীণদের গাড়ি চালানো শেখাতে এখন আর বয়স কোনো বাধা নয় বলে মনে করেন মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের একজন প্রশিক্ষক - চাং ইয়ান।

তিনি বলেন, “ড্রাইভিং শেখার সর্বোচ্চ বয়স-সীমা তুলে নেওয়ার পর আরও বেশি সংখ্যক বয়স্ক মানুষ গাড়ি চালনা শিখতে আসছেন এবং সবচেয়ে বয়স্কদের বয়স ৬৭ এর মতো। নতুন সরঞ্জাম গ্রহণ করতে বয়সভেদে মানুষ একেক  রকম সময় নেয়। ভবিষ্যতে বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা তাদের সরঞ্জামের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবো”।

চীনের ট্রান্সপোর্ট টেলিকমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বেশিরভাগ ড্রাইভিং প্রশিক্ষকের বয়স ৪৬ থেকে ৫২ বছরের মধ্যে। তবে এরই মধ্যেই অনেকে নতুন পদে স্থানান্তরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন প্রযুক্তির গাড়ি চালানোর দায়িত্ব গ্রহণের আগে প্রশিক্ষণের অপেক্ষায় আছেন।

চীনে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগ্যতা অর্জনের আগে চারটি পরীক্ষা দিতে হয় -- দুটি তত্ত্ব পরীক্ষা যাতে অন্তর্ভূক্ত থাকে ট্রাফিক আইন, যানবাহনের মৌলিক ধারণা এবং সঠিক ড্রাইভিং অভ্যাস। অন্য পরীক্ষাগুলো হলো ব্যবহারিক পার্কিং, একটি বন্ধ-পরীক্ষা ট্র্যাকে মৌলিক ড্রাইভিং দক্ষতা মূল্যায়ন এবং সম্পূর্ণ রাস্তা পরীক্ষা।

চায়না কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তার মতে, চীনের ২০ হাজারের বেশি ড্রাইভিং স্কুলের প্রায় ১০ শতাংশ ইতোমধ্যেই এআই এবং ভিআর-এর মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। কারণ এই নতুন পদ্ধতিগুলো আরও বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে মানুষের৷  

 

| প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

গভীর-মস্তিষ্কের ছবি ধারণে সক্ষম মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেছে চীন

 

মস্তিষ্কের গভীরের ছবি ধারণ করতে সক্ষম এমন মাইক্রোস্কোপ তৈরি করে সবাইকে চমকে দিয়েছে চীনের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি নেচার মেথডস জার্নালে এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

ওই নিবন্ধে বলা হয়, চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমনই একটি ক্ষুদ্রাকৃতির তিন-ফোটন মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেছে। এই মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ছুটন্ত ইঁদুরের গভীর-মস্তিষ্কের ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

মাত্র ২ দশমিক ১৭ গ্রাম ওজনের মাইক্রোস্কোপটি অবাধে ছুটন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কের কর্টেক্স ও হিপোক্যাম্পাল নিউরনের স্থিতিশীল ছবি তুলতে পেরেছে। বলা হচ্ছে এই সক্ষমতার মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কের রহস্য উদঘাটনেরও একটি সম্ভাবনা তৈরি হলো।

নিবন্ধে আরো বলা হয়, মানব মস্তিষ্কে কোটি কোটি নিউরন ও ট্রিলিয়ন সিন্যাপ্স রয়েছে। এসব নিউরন ও সিন্যাপ্সের সংযোগ ও গতি-প্রকৃতি পরিমাপ করা বিশ্বব্যাপী মস্তিষ্ক গবেষণার একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

পিকিং ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল বায়োমেডিকেল ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক ছাং হেফিংয়ের নেতৃত্বে গবেষক দলটি বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের ডিভাইস তৈরির কাজ করছে। এর আগে ২০১৭ সালে দলটি ক্ষুদ্রাকৃতির দুই-ফোটন মাইক্রোস্কোপ উদ্ভাবন করে।

নেচার মেথডস জার্নাল জানায়, এই উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে চীন মাল্টিফোটন মাইক্রোস্কোপি প্রযুক্তিতে এক নতুন অগ্রগতি অর্জন করলে বলে মনে করা হচ্ছে।

| প্রতিবেদন: শিহাবুর রহমান

| সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

পাইতুর সার্চ ইঞ্জিনে যোগ হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বট ‘আর্নি’

চীনের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি পাইতু তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করতে যাচ্ছে চ্যাটজিপিটি’র মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বট আর্নি। চলতি বছরের মার্চ মাস নাগাদ আর্নি বট চালু হবার কথা আছে। গেল ২২ জানুয়ারি কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রবিন লি এক চিঠিতে এসব তথ্য জানান।

গত বছরের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হবার পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সংস্থাগুলো তাদের নিজ নিজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট বানাতে উঠে পড়ে লাগে। কেনই বা লাগবে না? কী করতে পারে না একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট? আর্টিকেল, কবিতা, রচনা, ই-মেইল লিখা থেকে শুরু করে লিখতে পারে প্রোগ্রাম কোডও।  

এরই ধারাবাহিকতায় চীনের সর্ববৃহত সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি পাইতু একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছ। পাইতুর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রবিন লি বলেন, আর্নি বটকে পাইতুর সার্চ ইঞ্জিন ও ক্লাউড সার্ভিসে সংযুক্ত করে দেওয়া হবে। আর্নি বটের মিশেলে পাইতুর সার্ভিসে আসবে এক মৌলিক পরিবর্তন।

লি বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে এক আমূল পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে। সকল খাতকেই এই পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি চীনে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে অভাবনীয় চাহিদা তৈরি হয়েছে”।

 

লি আরো জানান যে, আর্নি বটকে আধুনিক গাড়ি চালনার অপারেটিং সিস্টেম এপোলো স্মার্ট কেবিন ও বাসা-বাড়িতে ব্যবহার্য আধুনিক ডিভাইস ও সেবার অপারেটিং সিস্টেম সিয়াওপুতে সংযুক্ত করবার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

সম্প্রতি প্রকাশিত পাইতুর অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ২ হাজার ১০০ কোটি ইউয়ান খরচ করেছে পাইতু, যা কোম্পানিটির মূলধনের ২২.৪ শতাংশ।

পাইতুর আর্নি বট বাদেও দ্রুতই চ্যাটজিপিটির মতো অন্যান্য আরো কিছু টুলস বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। চলতি মাসের ফেব্রুয়ারিতে গুগল এক ব্লগপোষ্টের মাধ্যমে জানায়, তারা চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট ‘বার্ড’ উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। 

এদিকে বসে নেই চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপও। সম্প্রতি আলিবাবা গ্রুপও জানিয়েছে, তারাও চ্যাটজিপিটির মতো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট তৈরি করছে। বর্তমানে চ্যাটবটটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলেও জানায় আলিবাবা।

| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

বিজ্ঞানবিশ্বের আয়োজন আপনাদের কেমন লাগছে জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী