‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।
#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা
মোসুমী অ্যালার্জি সারাতে টিসিএম
আপনার কি নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সর্দি হচ্ছে এবং চোখে পানি আসছে? কিংবা আপনার কি শরীর চুলকাচ্ছে বা ত্বকে ফুসকুড়ি উঠছে? এমন যদি হয়, তাহলে আপনি সম্ভত মৌসুমী অ্যালার্জিতে ভুগছেন কিংবা কিছু নির্দিষ্ট খাবার বা রাসায়নিকের প্রতি আপনার অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মৌসুমী অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে আপনি চেষ্টা করতে পারেন ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএম। টিসিএম আকুপাংচার ও ভেষজ কেবল অ্যালার্জির উপসর্গগুলোই উপশম করতে সাহায্য করে না, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
অ্যালার্জি হয় তখন, যখন আপনার রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছু পদার্থের প্রতি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এসব পদার্থের মধ্যে থাকে ফুলের পরাগ, পোকামাকড়ের বিষ, বাতাসে থাকা রাসায়নিক বা কিছু খাবার। শরীর এসব পদার্থটি একটি হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সর্দি, চোখ দিয়ে পানি ঝরা, মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি ও হাঁচির মাধ্যমে শরীর এমন অ্যালার্জেনগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অ্যালার্জির কারণে ফুসফুস ও ব্রঙ্কিয়াল টিউবে প্রদাহ হতে পারে, যার ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট ও শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। এ অবস্থাই হলো হাঁপানি।
খাদ্যে বেশি হারে অ্যাডেটিভ ব্যবহার এবং পরিবেশে রাসায়নিক দূষণকারী ও অন্যান্য অ্যালার্জেন পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সব বয়সের মানুষের মধ্যে অ্যালার্জি বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিসিএম ও আকুপাংচারকে মৌসুমী অ্যালার্জি, রাইনাইটিস, সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জি-সৃষ্টি হাঁপানিসহ শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেওয়ার সহায়ক পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃত দিয়েছে।
টিসিএমে একটি সমস্যার সেই সব অভ্যন্তরীণ কারণ ও বাহ্যিক কারণগুলো সন্ধান করা হয়, যা কোনও রোগীর স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে মনে করা হয়, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদান রয়েছে। বাহ্যিক ‘ওয়েই ছি’ হলো একটি প্রতিরক্ষামূলক শক্তি যা ঢাল হিসেবে কাজ করে এবং বায়ু, ক্লেদ ও ঠান্ডার মতো বাহ্যিক রোগজীবাণুকে শরীরে প্রবেশে বাধা দেয়। ফুসফুস ‘ওয়েই ছি’কে শক্তিশালী রাখে এবং বিশেষ করে নাক ও মুখ দিয়ে রোগজীবাণু প্রবেশে বাধা প্রদানের শক্তি যোগায়। ‘ওয়েই ছি’ যখন দুর্বল হয়, তখন বাতাস ও তার সঙ্গে অন্যান্য বাহ্যিক রোগজীবাণু যেমন ঠান্ডা, তাপ, ক্লেদ বা শুষ্কতার পক্ষে মস্তিষ্কে প্রবেশ সহজ হয়।
আকুপাংচার চিকিৎসায় ফুসফুস ও প্লীহাকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেওয়া হয়, যা ‘ওয়েই ছি’ ব্যাক-আপ তৈরি করতে সহায়তা করে। ভেষজ চিকিৎসায় খড় জ্বরের উপসর্গ ও রাইনাইটিস উপশম করে এবং ‘ওয়েই ছি’কে জোরদার করতে সাহায্য করে, যার ফলে সময়ের সাথে সাথে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমে যায়।
সাম্প্রতিকে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খাবার-সম্পর্কিত অ্যালার্জিতে ভুগছেন টিসিএম ভেষজ তাদের জন্য খুবই কার্যকর। দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম ও ফলসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অ্যানাফিল্যাক্সিসের প্রকোপ কমাতে আটটি চীনা ভেষজের একটি নির্দিষ্ট ফর্মুলেশন খুব সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ভেষজ ক্রিম ও ‘ভেষজ স্নান’ গুরুতর প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
একজন আকুপাংচার অনুশীলনকারী তার পুষ্টি-সম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে সিলিয়াক রোগ, খাদ্য সংবেদনশীলতা এবং খাদ্য-অসহিষ্ণুতার চিকিৎসার জন্য উপযোগী ডায়েট তৈরি করে দিতে পারেন। অ্যালার্জি ও সংবেদনশীলতা মোকাবিলার সময় কী নির্মূল করা দরকার তা খুঁজে বের করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কারণ কোন খাবার বা কোন পরিবেশগত কারণে অ্যালার্জি তৈরি হচ্ছে, তা সব সময় একজন ব্যক্তির কাছে অবিলম্বে স্পষ্ট হয় না। কখনও কখনও দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জি ইস্টজাতীয় ছত্রাকের সংক্রমণের একটি উপসর্গ। একজন টিসিএম চিকিৎসক মনোযোগ সহকারে রোগীর জীবনধারার পদ্ধতি দেখার জন্য সময় নেন এবং লুকিয়ে থাকা কারণগুলো দূর করার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা দেন।
#চিকিৎসার_খোঁজ
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক হাসপাতাল
চীনের হাসপাতালগুলোর অন্যতম রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক হাসপাতাল। এটি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালের মার্চ থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এখনও চলছে। এ হাসপাতালের পুরো কাজ যখন শেষ হবে, তখন এর ফ্লোর স্পেস হবে ৩৩ লাখ বর্গফুট, যা একক হাসপাতাল হিসাবে গোটা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থল চুংকুয়ানছুন লাইফ সায়েন্স পার্কে অবস্থিত এ হাসপাতালে বিনিয়োগ করেছে বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল গ্রুপ। এটি প্রতিষ্ঠায় ব্যয় হচ্ছে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত এ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের জন্য সামাজিক চিকিৎসা বীমা, বাণিজ্যিক বীমা, গণস্বাস্থ্যসেবা এবং বিদেশি বিমার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় এখানে।
ছত্রিশটি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ৪৯টি চিকিৎসা বিভাগ রয়েছে এই হাসপাতালে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটি অসংখ্য শক্তিশালী বিভাগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম কার্ডিওভাসকুলার বিভাগ, নিওপ্লাজম/ব্লাড বিভাগ, চক্ষুবিদ্যা বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিভাগ, স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগ, ইউরোলজি বিভাগ এবং রেনাল ডিজিজ বিভাগ।
দুই ধাপে এ হাসপাতালে গড়ে তোলা হচ্ছে ২ হাজার শয্যা। বহির্বিভাগে এখানে প্রতিদিন চিকিৎসা দেওয়া হয় ১০ হাজার রোগীকে। প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের জন্য রয়েছে একটি বড় জরুরি বিভাগ। এখানে বিশেষায়িত সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার সেবা, অনকোলজি, মহিলা এবং শিশুদের সেবা। এ হাসপাতালে কাজ করেন দেশবরেণ্য অনেক চিকিৎসক ও গবেষক। আন্তর্জাতিক বিমার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এ হাসপাতাল চীনা রোগীদের পাশাপাশি অসংখ্য বিদেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হেলথ টিপস
এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।
নিয়মিত সকালের নাস্তা খান
অনেকে ঘুম থেকে দেরিতে জাগেন এবং প্রায়ই সকালের নাস্তা বাদ দেন। এটা শরীরে জন্য খারাপ। সকালে পাকস্থলী ও প্লীহার শক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। তাই খাবার উপভোগ করার এটি সর্বোত্তম সময়। নিয়মিত সকালের নাস্তা গ্রহণ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখবে এবং দুর্দান্ত একটি দিন শুরু করতে আপনাকে সাহায্য করবে।
নিয়মিত চুল আঁচড়ান
হ্যাঁ। এটা খুব সহজ। চুলের একেবারে গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত চিরুনি টানুন বা ব্রাশ করুন। কমপক্ষে ২ মিনিট ধরে এভাবে চুল আচড়ান। চিরুনি সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। এর ফলে মাথায় রক্ত প্রবাহ বাড়বে। এ প্রবাহ মস্তিষ্কে আরও পুষ্টি বয়ে আনবে এবং বিষাক্ত বর্জ্য দূর করবে। এছাড়া এমনভাবে নিয়মিত চুল আচড়ালে স্মৃতিশক্তি বাড়বে, বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের উন্নতি হবে, মন প্রফুল এবং মুখের ব্যথা দূর হবে।
পায়ের ম্যাসাজ
শরীরের সকল অঙ্গ ও সিস্টেম পায়ের সঙ্গে সংযুক্ত। সেকারণে আপনার পায়ের নিচের অংশ ম্যাসাজ বা মালিশ করা আপনার পুরো শরীরকে সতেজ করার এক দুর্দান্ত উপায়। গোড়ালি ছাড়াও আপনার পায়ের আঙ্গুল ও পায়ের পাতার মধ্যবর্তী স্থানগুলো ঘষুন সময় নিয়ে।
‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।