বন্ধুরা ২০২০ সাল ছিল চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমের শেষ বছর। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র নেতৃত্বে বিভিন্ন জাতির জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় চীনের নানা স্থানের বিরাট পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে শোনাবো চীনা প্রতিবন্ধী মানুষের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়ার একটি গল্প।
চীনে ৮.৫ কোটি প্রতিবন্ধী মানুষ আছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যাপারে অনেক যত্নবান। তিনি বলেছেন, গোটা চীনে স্বচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় কেউ বাদ পড়বে না।
হ্যপেই প্রদেশের থাংশান শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। শহরটির প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার দুর্দান্ত ঐতিহ্য রয়েছে। সেখানে প্রতিবন্ধীদের যত্ন নেওয়ার ও উত্সাহ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
থাংশান শহরের প্যারাপ্লেজিয়ার নার্সিং হোমে প্যারালজিক দম্পতি ইয়াং ইউ ফাং ও গাও চি হং কবিতা পড়ছিলেন। কবিতা তাঁরা নিজেরাই লিখেছেন। কবিতার শিরোনাম 'আমার স্বচ্ছল সমাজের স্বপ্ন'। ইয়াং ইউ ফাং বলেন, কবিতা লেখার সময় ৪ বছর আগে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাদের দেখার দৃশ্যটি সবসময় তাঁদের মাথায় থাকে। এখনো তারা প্রেসিডেন্ট সি'র কথা মনে রেখেছেন।
ইয়াং ইউ ফাং বলেন, 'আমি আগে ভাবিনি যে, আমি এতো দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারবো। কোনো কোনো মানুষ বলেছেন যে, আমি জীবনে অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করেছি। কিন্তু আমি জানি যে, সিপিসি ও সরকার এবং অনেক ভালো মানুষ আমাদের যত্ন নিয়েছে। তা না হলে, আমি এ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারতাম না। আসলে ভালবাসা এ অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করেছে।’
১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই থাংশানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২.৪ লাখ মানুষ নিহত এবং ১.৬ লাখ গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে ৩৮১৭ জন উচ্চ প্যারালপেজিয়ায় আক্রান্ত হন। তখন কোনো কোনো বিদেশি বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, চিকিত্সার মাধ্যমে কোনো কোনো মানুষ হয়ত ১৫ বছর বেঁচে থাকতে পারেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ৪০ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, কিন্তু অধিকাংশ গুরুতর আহত মানুষ এখনো বেঁচে আছেন। তাঁদের গড় বয়স ৭০ বছর ছাড়িয়ে গেছে।
থাংশান শহরের প্যারাপ্লেজিয়ার নার্সিং হোমের প্রধান ইয়াং চেন শেন বলেন, 'প্রেসিডেন্ট সি আমাদেরকে বলেন, মন দিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যের মতো যত্ন করতে হবে। আমাদের চিকিত্সাকর্মীরা নিজের বাবা-মার মতো তাঁদের যত্ন করেন। এটাই তাঁদের বাড়ি।'
সুস্থ মানুষের সুন্দর জীবন হতে পারে, প্রতিবন্ধী মানুষেরও হবে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি এভাবে বলেছেন। তিনি এ কথা দিয়ে ৩৮ বছর বয়সী ওয়াং দানকে উত্সাহ দেন। রোগের পর ওয়াং দান প্রতিবন্ধী হন। তিনি থাংশান শহরের পৌর সরকারের সমর্থনে একটি হাতের শিল্পকর্মের দোকান খুলেছেন। দোকানে চীনা ঐতিহ্যবাহী শিল্প বিক্রয় হয়। তাঁর দোকান শতাধিক প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ওয়াং দান বলেন, 'আমি দোকানের মাধ্যমে আরও বেশি বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। আমি নিজের জীবনের মূল্য বুঝতি পারি।'
৫২ বছর বয়সী চাং ছুই লি যুবকালে দুর্ঘটনায় বাম হাত হারান। তিনিও দোকান খুলেছেন। ২০০৮ সালে চাং ছুই লি স্থানীয় পৌর সরকারের সহায়তায় ৩০ লাখ ইউয়ান আরএমবি ঋণ নিয়ে দুধের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি একটি ৪ শতাধিক গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদ এখন ৫০ লাখ ইউয়ানেরও বেশি।
চাং ছুই লি ধনী হওয়ার পর জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থী, একাকী বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদেরকে সহায়তা করে থাকেন।
তিনি বলেন, 'দেশের ব্যবস্থা ও সুবিধার জন্য আমি ধনী হয়েছি।'
২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত থাংশান শহর মোট ৩১ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ দিয়ে মোটরযুক্ত হুইলচেয়ারের জন্য জ্বালানি ভর্তুকি, শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং শিশুদের যত্ন নেওয়ার মতো নীতি চালু করে। এতে ৭ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ উপকৃত হয়েছেন। প্রতিবন্ধীরা নিজেদের সুন্দর জীবন পেয়েছেন। (ছাই/আলিম)