তুন হুয়াং প্রস্তরগুহার সংরক্ষণকারী
2023-02-25 19:25:53

তুন হুয়াং অঞ্চল চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। জায়গাটা প্রাচীন রেশমপথের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। একই সঙ্গে বিশ্বের চারটি প্রধান সভ্যতার সংযোগ স্থানও বটে। এখানে একটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার আছে—মো কাও খু।

এই মূল্যবান সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা করার জন্য অনেকেই এখানে এসে কাজ করেন। হান ওয়েই মেং তাদেরই একজন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে হান ওয়েই মেং তুন হুয়াং গবেষণাগারের চিত্রশালায় কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত ২০ বছর পার হয়েছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী ফান লি চুয়ান দীর্ঘসময় ধরে তুন হুয়াং মো কাও খু প্রস্তরগুহার গবেষণা ও অনুলিপি কাজ করছেন।

হান ওয়েই মেং কাজ করতে করতে বলেন, যেমন, এটা এখনো মেরামত করা হয় নি। এখানে একটা থাকা উচিত। এ থেকে বোঝা যায়, মোটামুটি একটি শিশুর মত, তবে এখন ঠিকভাবে বলা যায় না।

এমন খুব আবছা এবং ভাঙা বিষয় মেরামত করার, একটি উপায় হল প্রিন্টের ছবি দিয়ে কাগজে আঁকা, আর যে চিত্র আমরা এখন দেখতে পারি না, তা আমরা প্রস্তরগুহার ১৭২টি গুহা এবং অন্যান্য গুহার সঙ্গে তুলনা করি।

তুন হুয়াং-এ এখন ৭৩৫টি গুহা সংরক্ষিত আছে। প্রাচীরচিত্রের আয়তন ৪৫ হাজার বর্গমিটার। কাদা দিয়ে তৈরি রঙিন ভাস্কর্যের সংখ্যা ২৪১৫টি। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো একে ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করে।

মো কাও খু প্রস্তরগুহার খনন কাজ শুরু হয় ১৬০০ বছর আগে। তখন প্রতিটি আমলের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের তৈরি সুন্দর প্রাচীরচিত্র এবং বৌদ্ধদেবতার ভাস্কর্য আছে। এসব শিল্পকর্ম শেষ করতে এক হাজার বছরের বেশি সময় লেগেছে। তা হল বিশ্বের বৌদ্ধধর্মের প্রস্তরগুহা শিল্পের শ্রেষ্ঠ মানের কাজ।

২০২২ সাল হল হান ওয়েই মেং-এর দল মো কাও খু প্রস্তরগুহার ১৭২নং গুহা মেরামতের ভিত্তিতে অনুলিপি করার ষষ্ঠ বছর চলছে।

তার মানে আগের শিল্পীদের প্রায় একই কাঁচামাল এবং কৌশল দিয়ে গুহার প্রাথমিক চেহারা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়।

হান ওয়েই মেং কাজ করতে করতে বলেন, এভাবে করার পর ওইভাবে করতে হয়। আমি একটু বেশি এঁকেছি। চোখের নিচে ব্যাগ একটু ছোট করতে হয়।

হান বলেন, দেখো, তার আঁকা হয় নি।

তাঁর স্ত্রী ফান বলেন, না, আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে বেশি ব্যাখ্যা করার দরকার নেই।

হান বলেন, এভাবেও হতে পারে, তুমি দেখো।

ফান বলেন, এটা আমাদের ভাবমূর্তি উপলব্ধি প্রতিফলন।

 

চীনের থাং রাজবংশের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ১৭২নং গুহার খনন কাজ শুরু হয়। এই পর্যন্ত ১২০০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। গুহায় সুন্দর প্রাচীরচিত্র আছে, চিত্রে মানুষের ভাবমূর্তি খুব অমায়িক ও গাম্ভীর্যপূর্ণ। রং খুব গভীর। যা মো কাও খু গুহার সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে।

গত পাঁচ বছরে হান ওয়েই মেং-এর দল ১৭২টি গুহার প্রত্যেক দেয়ালের প্রাথমিক অনুলিপি শেষ করেছে, মোটামুটি প্রাচীরচিত্রের বিষয় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রং দেয়ার সময় হয়েছে।

ইতিহাসে, মো কাও খু প্রস্তরগুহার প্রাচীরচিত্র প্রাকৃতিক খনিজ রং দিয়ে রচনা করা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাচীরচিত্রের ভাঙা ও রংয়ের পরিবর্তন দেখা যায়। তাহলে কিভাবে আসল রং নির্বাচন করা যাবে- তা জরুরি বিষয়।

তুন হুয়াং গবেষণাগারের ইতিহাসে অনেক বিশেষজ্ঞের প্রাচীরচিত্র অনুলিপির সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা আছে। এমন সমস্যার মুখোমুখি হলে হান ওয়েই মেং শিক্ষকের প্রস্তাব শুনতে চান।

হান ওয়েই মেং বলেন, আপনি দেখেছেন, আমাদের দলের সিয়াও থুং-এর ১৭২নং গুহার অনুলিপি কাজ।

শাও হুং চিয়াং বলেন, মাঝে মাঝে, আমি তোমাকে বলতে চাই, কিছু বিষয় গুহার ভিতরে সমাধান করতে হয়। থাং রাজবংশের গুহা, আপনি বার বার অনুলিপি করেন, অনেকবার আঁকার পর মনের সেই ছাপ পরিবর্তন হবে। তারপর ইচ্ছামত আঁকলেই থাং রাজবংশের সেই অনুভূতি বের হবে।

শাও হুং চিয়াং হল শুরুর দিকে চিত্রশালায় প্রবেশ করা হান ওয়েই মেং-এর শিক্ষক। অনেক বিশেষজ্ঞের মত, শিক্ষক শাও বিপুল পরিমাণ প্রাচীরচিত্র অনুলিপি করেছিলেন। তাঁর কাজ বিভিন্ন সময়পর্বে মো কাও খু প্রস্তরগুহার প্রাচীরচিত্রের অবস্থা রেকর্ড করা, যা পরবর্তী সময় গবেষণার জন্য অনেক সহায়ক।

শিক্ষকের প্রস্তাব শুনে হান ওয়েই মেং শিক্ষকের অনুলিপি কাজ আবার দেখেন এবং শিক্ষকের অনুলিপি করা ২৮৫নং গুহায় গিয়ে কাজ শিখেন।

হান ওয়েই মেং যে গুহায় আছেন, তা হল শিক্ষকদের অনুলিপির ভিত্তিতে পুনরুদ্ধার নং ২৮৫ গুহা। তা সর্বাত্মক মাত্রায় ২৮৫নং গুহার আসল চেহারা প্রতিফলন করেছে। প্রবীণ বিশেষজ্ঞরা আগে শুধু তেলবাতি, মোমবাতি এবং আয়না দিয়ে আলো পেতেন। এখন বিজ্ঞানের উন্নয়নের সঙ্গে উত্তরাধিকারের সংরক্ষণের প্রযুক্তির মান উন্নয়নের সঙ্গে হান ওয়েই মেং বিশেষজ্ঞদের অনুলিপি ফাইন অনুযায়ী, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাচীরচিত্র পুনরুদ্ধার করবেন।

হান ওয়েই মেং-এর দল পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা করে এক্স রেই, রেজার, ইনফ্রারেড ইত্যাদি পদ্ধতিতে যে বিষয় মানুষের চোখ বুঝতে না পারে, তার বিশ্লেষণ করতে পারেন। এভাবে তাঁদের পুনরুদ্ধার কাজের মজবুত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে।

আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মাধ্যমে অনুলিপি দল অনেক দেশের ভালো প্রযুক্তি ও উপায় শিখেছে। বিভিন্ন গবেষণার সমর্থন পাওয়ার পর হান ওয়েই মেং-এর অনুলিপি কাজে নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে। অনুমান করা যায়, ১৭২নং গুহার আসল চেহারা অদূর ভবিষ্যতে সবাই দেখতে পাবে।

গেল ৭০ বছরেরও বেশি সময় বংশপরম্পরায় তুন হুয়াং প্রস্তরগুহার সংরক্ষণকারী প্রবীণদের গবেষণার ভিত্তিতে পুরাকীর্তিগুলো সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয় এবং অনুলিপি তৈরি করা হয়। যাতে ইতিহাসের এই মূল্যবান সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বংশানুক্রমিক হতে পারে।