ফেব্রুয়ারি ২৪: রাশিয়ার অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি ‘বেইশি’ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন বিস্ফোরণ নিয়ে একটি প্রকাশ্য বিতর্কের আয়োজন করেছে। সদস্য দেশগুলো তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। চীন স্পষ্টভাবে বলেছে, এই বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্ত প্রতিটি দেশের স্বার্থ ও উদ্বেগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। চীন দ্রুত সত্য খুঁজে বের করতে জোরালো তদন্ত প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয়ে কিছু কথা বলবো।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সমুদ্রে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনকারী ‘বেইশি-১’ ও ‘বেইশি-২’ পাইপলাইনে সুইডেন ও ডেনমার্কের অংশে চারটি ফুটো ছিল। আন্তর্জাতিক সমাজ সাধারণভাবে বিশ্বাস করে যে- এটি ‘নাশকতামূলক’ ঘটনা। পরে ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইডেন ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এরপর পাঁচ মাস হয়ে গেছে, তারা এখনও ঘটনার কারণ ও অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেমুর হার্শ ( Seymour Hersh ) ‘বেইশি’ ঘটনার বিবরণ সম্পর্কিত খবরটি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি হোয়াইট হাউসের নির্দেশে ও সিআইএ’র পরিচালিত একটি গোপন অভিযান। খবরটি হৈচৈ সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক সমাজ একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের অনুরোধ জানায়।
জাতিসংঘ সবচেয়ে কর্তৃত্বপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বশীল আন্তর্জাতিক সংস্থা। তা আন্তর্জাতিক তদন্তে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেফরি শ্যাক্স (Jeffrey Sachs) সম্প্রতি বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের আন্তর্জাতিক তদন্ত 'বৈশ্বিক অগ্রাধিকার'। এটি অধিকাংশ দেশের কথা।
হার্শ সম্প্রতি সাংবাদিককে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ‘বেইশি’ পাইপলাইন বিস্ফোরণের কারণ ছিল সেদেশ ভয় করত যে- জার্মানি পাইপলাইনটির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে এবং শীতকালে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। সুইডেনের অন্তঃদেশীয় শান্তি ও ভবিষ্যত্ গবেষণা তহবিলের থিংকট্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা জান ওবার্গ (Jan Oberg ) মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘বেইশি’ পাইপলাইন ধ্বংস করার পরিকল্পনা আসলে ইউরোপীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে একটি ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’।
আমাদের মনে আছে যে ‘বেইশি’ বিস্ফোরণের পরে, ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাস বেঞ্চমার্ক ডাচ টিটিএফ প্রাকৃতিক গ্যাসের ফিউচার প্রায় ২০ শতাংশ লাফিয়ে বাড়ে, যা আবারও প্রতি মেগাওয়াট-ঘণ্টায় ২০০ ইউরো সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘বেইশি’ পাইপলাইন ধ্বংস হওয়ার পর ইউরোপের জ্বালানি সম্পদ সরবরাহের সংঘর্ষে আরো বাড়ানো হয়েছে। বৈশ্বিক জ্বালানি সম্পদের বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কপাল খুলে যায়। পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণ কোম্পানি কেপলারের (Kepler) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মোট আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ ৪১ শতাংশ হয়, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
‘বেইশি’ বিস্ফোরণের ফলে কয়েক মিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস বের হয়ে যায়। জাতিসংঘের পরিবেশ পরিকল্পনা ব্যুরোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী বিস্ফোরণের সময় ফুটো হওয়া মোট মিথেন নির্গমনের অনুমান ৭৫ থেকে ২৩০ কিলোটন পর্যন্ত; তা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে! মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে পৃথিবীকে ৮০ গুণ বেশি উষ্ণ করে। মার্কিন অ্যারিজোনা রাজ্যের টাকসন শহরের প্ল্যানেটারি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী জেফরি কার্গেল (Jeffrey Kargel) বলেন, এবারের ঘটনাটি 'সত্যিই বিরক্তিকর'। যদি এটি ইচ্ছাকৃত হয়- তবে তা একটি পরিবেশগত অপরাধ হবে।
‘বেইশি’ ঘটনা এখনও একটি রাজনৈতিক বিষয়। এটা গোটা ইউরোপের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার কথা। ইউক্রেনের সঙ্কটের পটভূমিতে বিস্ফোরণটি ঘটেছে এবং নিঃসন্দেহে আঞ্চলিক উত্তেজনা ও বৈরিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘটনার একটি বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপরাধী খুঁজে বের করা উচিত। যা সব পক্ষকে আরও যুক্তিপূর্ণ কৌশলগত রায় দেওয়া এবং ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের বাধা কমাতে সহায়তা করবে।
(ছাই/তৌহিদ)