সি চিন পিংকে দেওয়া কুইল্ট (কম্বল) উপহার
2023-02-24 18:46:20


বন্ধুদের বাড়িতে ঘুরতে গেলে কি উপহার দেওয়া ভালো? ২০১৫ সালে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইলেন জনসন-সেরলিফ চীন সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বিশেষ একটি উপহার দিয়েছিলেন। এটি হলো লাইবেবিয়ার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের মাধ্যমে তৈরি করা কুইল্ট (কাঁথা/কম্বল)। কুইল্টে চীন ও লাইবেরিয়ার জাতীয় পতাকা সেলাই করা রয়েছে এবং ব্রোঞ্জ ও সাদা রঙের শেল লাগানো আছে।

কুইল্টটি রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তাতে বাস্তবসম্মতভাবে ও উষ্ণতাপূর্ণ চীন-লাইবেরিয়া মৈত্রী প্রতিফলিত হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় সিরলিফ বলেন, “এবার চীন সফরে সর্বপ্রথম চীনকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমি”।

 

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন দফা ইবোলা ভাইরাস গিনিতে সংক্রমণ ছড়ায়। অল্প কয়েক মাসের মধ্যে লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনসহ পশ্চিম আফ্রিকার নানা দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ইবোলা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর সেটাই ছিল ব্যাপক সংক্রমণের ঘটনা। লাইবেরিয়ায় ভয়াবহ দুর্যোগ পড়ার পরপরই চীন সর্বপ্রথম দেশটির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

ইবোলা ভাইরাসকে ‘আফ্রিকার গ্রিম রিপার’ বলা হয়। এতে ব্যাপক হারে মানুষ মরেছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পরে অনেক পশ্চিম দেশ তাদের কূটনীতিক, চিকিত্সক ও স্বেচ্ছাসেবক প্রত্যাহার করে নেয়। তবে চীনারা আফ্রিকান বন্ধুদের ছেড়ে যান নি। চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের কাজে অবিচল রয়েছে। চীনা চিকিত্সকরা যথাসাধ্যভাবে রোগীদের চিকিত্সা দিয়েছে। চীনের চেম্বার সামগ্রিক উপহার দিয়েছে এবং চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণ করেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে চীন লাইবেরিয়াসহ দক্ষিণ আফ্রিকার চারটি দেশের প্রতি জরুরি ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করেছে। সে বছরের আগস্ট মাসে পশ্চিম আফ্রিকার প্রকোপস্থলে গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পাঠায় চীন।

 

চীন বরাবরই আন্তরিকভাবে আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেন যে, চীন সরকার ইবোলার প্রকোপ মোকাবিলার জন্য পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোকে চতুর্থ দফা সহযোগিতা করবে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে চার দফা সহযোগিতায় অর্থের পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ইউয়ান।

চীন কখনো তার কথা রাখতে ভোলে না। চীনের সহায়তা যেন ‘তুষারের মধ্যে কাঠকয়লা উপহার দেওয়া’। ‘ইবোলা দূরে চলে গেলো, ইবোলার জন্য চীন এসে গেলো, আমরা একসাথে প্রচেষ্টা চালাই, ইবোলা নির্মূল হবেই’। এ কয়েকটি লাইন লাইবেরিয়ার ছড়া থেকে তৈরি ‘ইবোলা নির্মূল’ শীর্ষক গানের কথা, যা সেখানে খুব প্রচলিত।

সেলিস্টিন কিং একসময় লাইবেরিয়ার জাতীয় টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ান ছিলেন। ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সময় তাঁর মনে পড়ে একজন চিকিত্সক বন্ধুর কথা। চিকিত্সক বন্ধু তাঁকে বলেন, ‘আপনার জ্বর হলে আপনি তাড়াতাড়ি চীনের ইবোলা চিকিত্সাকেন্দ্রে যান, সেখান সবচেয়ে ভালো’।

চীনের ইবোলা চিকিত্সাকেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার সময় সেলিস্টিন কিংয়ের অবস্থা খুব গুরুতর ছিল। এমনকি ইন্ট্রাভেনাস রিহাইড্রেশনের জন্য সুই ঢোকানো যেত না। চীনা চিকিত্সক দল জরুরি চিকিত্সার প্রস্তাব দেয়। পুরো রাত ধরে তাকে চিকিত্সা দেওয়া হয়। যার ফলে সেলিস্টিন কিং গুরুতর অবস্থা কাটিয়ে সেরে ওঠেন।

 

চীনের সাহায্যে লাইবেরিয়ার অনেক রোগী মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসে। স্থানীয় অনেক চিকিত্সক প্রশিক্ষণের কল্যাণে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে যায়। ইবোলা ভাইরাসের কারণে অভিভাবক হারানো অনেক অনাথকে দেখাশোনা করছে চীন।

২০১৫ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লাইবেরিয়ায় ইবোলা মহামারি অবসানের ঘোষণা করে। সেরিফকে অভিনন্দন জানিয়ে সি চিন পিং বলেন, চীন ও আফ্রিকা ‘পুরু ও পাতলা মাধ্যমে গড়ে তোলা সু-অংশীদার ও ভালো বন্ধু’। ইবোলা মহামারি প্রতিরোধে আফ্রিকাকে সমর্থন দেওয়া চীনের দায়িত্ব। ইবোলা মহামারি পর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে চীন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চায়।

 

বর্তমানে চীন-লাইবেরিয়ার সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে। চীনের আপগ্রেড করা রবার্টস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বর্তমানে লাইবেরিয়ার রাজধানীর নতুন ল্যান্ডমার্কে পরিণত হয়েছে। চীন প্রতি বছর দেশটির জন্য ১৫০টিও বেশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়। চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ এবং লাইবেরিয়ার ‘সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের এজেন্ডার’ সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।

প্রকৃত বন্ধুর জন্য একটি কুইল্ট গভীর মৈত্রী বহন করতে পারে এবং একটি শব্দ- ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে বন্ধুত্ব প্রকাশ করা যায়।

(রুবি/তৌহিদ)