ফেব্রুয়ারি ২২: গতকাল (মঙ্গলবার) চীন ‘বিশ্বের নিরাপত্তা প্রস্তাব ধারণাপত্র’ প্রকাশ করেছে। এটি এমন একটি নথি যা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কারণ, এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা সঙ্কটের একটি ব্যবহারিক চীনা সমাধান দেয়। ধারণাপত্রে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও বিস্তারিত রোডম্যাপও তুলে ধরা হয়েছে এতে।
বিশ্বের স্থায়ী শান্তি হলো সবার অভিন্ন আশা। তবে, গেল কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক সমাজ বিশ্বকে দেখেছে আরও অশান্ত ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়তে। একদিকে, বিশ্বের মানুষ কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে একটি বড় যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে; অন্যদিকে, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা-হুমকির সম্মুখীন হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষ করে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেন যুদ্ধ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সম্মুখীন সবচেয়ে গুরুতর নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ঘটনা। সে বছরের পর ইউক্রেন সংকট লক্ষ লক্ষ শরণার্থী সৃষ্টি করেছে, বাস্তুচ্যুত করেছে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বলানিসম্পদের সরবরাহ ও চাহিদার ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে: আমাদের বিশ্বের কী হবে? আমরা কিভাবে নিরাপত্তার সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি? ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি দ্বন্দ্বের পরিবর্তে সংলাপের একটি নতুন নিরাপত্তা-পথ, জোটের পরিবর্তে অংশীদারিত্ব, এবং শূন্য-সমষ্টির পরিবর্তে জয়-জয়ের প্রস্তাব করেন। বর্তমানে ৮০টিরও বেশি দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থা প্রস্তাবটি সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছে।
নিরাপত্তার সংকট দূর করার জন্য মূল বিষয় হলো সঠিক উপায় খোঁজা। বিভিন্ন সংঘর্ষ ও সংকটের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সমাজ সাধারণত মনে করে যে, জাতিসংঘের সংবিধান ও নীতি কার্যকরভাবে সুরক্ষা করা হচ্ছে না বা মেনে চলা হচ্ছে না। কিছু পশ্চিমা দেশ নিরাপত্তা ইস্যুতে দ্বৈতনীতি অবলম্বন করছে। তারা নিজেদের পরম নিরাপত্তার ওপর অত্যধিক জোর দিচ্ছে এবং স্থায়ীভাবে অন্য দেশের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করছে।
এ সম্পর্কে বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাবে ‘অভিন্ন, বহুমুখী, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তার ধারণা’ জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ডের অখন্ডাতে সম্মান করতে হবে; জাতিসংঘের সংবিধান ও নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে; বিভিন্ন দেশের বৈধ নিরাপত্তা-উদ্বেগকে আমলে নিতে হবে; সংলাপ ও আলোচনাসহ শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ দূর করতে হবে; ঐতিহ্যগত ও অপ্রচলিত নিরাপত্তা-হুমকিসমূহ যৌথভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীনের উন্নয়নকে নিরাপদ আন্তর্জাতিক পরিবেশ থেকে আলাদা করা যায় না। চীন বরাবরই ইতিবাচকভাবে বিশ্বের নিরাপত্তা সুরক্ষা করতে কাজ করে আসছে। চীন ধারণাপত্রে সংঘর্ষ প্রতিরোধে জাতিসংঘের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ওপর দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এ ছাড়াও, চীন সন্ত্রাসদমন, ইন্টারনেট, জীববিজ্ঞান এবং নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন নিরাপত্তা-চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আরও বেশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম ও ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে।
ঐতিহাসিক শিক্ষা ও বর্তমান সংকট—দুটোই মানুষকে এই মর্মে সতর্ক করছে যে, মানবজাতিকে কখনোই শিবিরীয় দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির পুরানো পথে ফিরে যেতে দেওয়া ঠিক হবে না এবং কখনোই জিরো-সাম গেম বা যুদ্ধ-সংঘাতের ফাঁদে পড়তে দেওয়া যাবে না। নিরাপত্তা হলো সকল দেশের অধিকার, কোনো দেশের একক সম্পত্তি নয়। বিশ্বকে আরও নিরাপদ করার জন্য সকল দেশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিভিন্ন দেশ ও পক্ষ যৌথভাবে বিশ্বের নিরাপত্তা প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করবে বলে চীন আশা করে। (ছাই/আলিম)