আকাশ ছুঁতে চাই ৬
2023-02-23 10:00:25

১.  বাংলাভাষাকে ভালোবাসেন ইয়াং মেই ফ্যং

২. নতুন আলোয় উদ্ভাসিত ঐতিহ্য

৩. সাইফাই থেকে শিকড়ের সন্ধানে কণ্ঠশিল্পী চু চিংসি

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে।

মহান ভাষা আন্দোলনের মাস চলছে। বাংলাভাষার মধুর ধ্বনিতে মুগ্ধ হচ্ছেন বিদেশিরাও।

বাংলাভাষাকে ভালোবাসেন ইয়াং মেই ফ্যং

চীনের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ রয়েছে। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগে বাংলা ভাষা বিষয়ে অনার্স করেন চীনের তরুণ তরুণীরা। এদের মধ্যে তরুণীর সংখ্যাই বেশি।  চার বছরের অনার্স কোর্সে তৃতীয় বর্ষে তারা বাংলা ভাষা শেখার জন্য বাংলাদেশে আসেন। এরপর ফিরে গিয়ে অনার্স সমাপ্ত করেন।

বাংলাদেশে এসে বাংলাভাষা শিখছেন চীনা তরুণী ইয়াং মেই ফ্যং। তার বাংলা নাম রোমানা। তিনি চীনের ইউননান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী। এক বছর বাংলাদেশে শিক্ষা গ্রহণ শেষে তিনি শিগগিরি ফিরে যাবেন চীনে। বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় আলাপ হয় রোমানার সঙ্গে।

   

                                         

রোমানা প্রথমেই বললেন ‘বাংলাভাষা খুব মিষ্টি ভাষা’।  তিনি জানালেন দুই বছর ধরে বাংলাভাষা শিখে তারপর বাংলাদেশে এসেছেন।

তিনি বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি খুব ভালোবাসেন। রোমানা বাংলাদেশের খাবার ভালোবাসেন। সিংগারা, সমুচা তার খুব প্রিয়। বাংলাদেশের পোশাকও তার পছন্দ। শাড়ি পরতে শিখেছেন। বাংলাদেশে বাংলাদেশী তরুণ তরুণীদের মধ্যে রোমানার কয়েকজন বন্ধু হয়েছে। বাংলাদেশীদের খুব বন্ধুবৎসল এবং হাসিখুশি বলে  মনে করেন তিনি। রোমানার ভবিষ্যত পরিকল্পনাও বাংলা ভাষাকে ঘিরে। তিনি ভবিষ্যতে বাংলাভাষার একজন শিক্ষক হতে চান ।

রোমানা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্ব গভীর করার জন্য কাজ করতেও আগ্রহী। বাংলাদেশেও এমন অনেক তরুণ তরুণী আছেন যারা চীনা ভাষা শিখছেন। নতুন প্রজন্মের এই শিক্ষার্থীরা ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্ব দৃঢ় করার কাজে এগিয়ে যাবেন।

 

 

 

 

নতুন আলোয় উদ্ভাসিত ঐতিহ্য

চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে রয়েছে তাদের বুনন কৌশল। এই বুননকৌশল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের আয়ত্তে আছে। এমন অনেক নারী আছেন যারা এই ঐতিহ্যবাহী বুনন কৌশলকে ধারণ করেন এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দেন। এমন একজন নারী ওয়াং চিয়াং। এ বিষয়ে আমার একটি প্রতিবেদন ।

 

চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠিীর রয়েছে নিজস্ব সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং এর বুনন কৌশল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে নারীদের আয়ত্তে। মূলত নারীরা তাদের মা এবং নানী-দাদীদের কাছ থেকে এই বুনন কৌশল আযত্ত করেন। তারপর সেটি বয়ে চলেন প্রজন্মান্তরে।


বোওইয়েই বা পু ই জাতির নারীদের রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং বিশেষ বুনন কৌশল। এটি চীনের অবৈষয়িক জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে ২০১৪ সাল থেকেই। ঐতিহ্যের ধারক বা ইনহেরিটররা এই ঐতিহ্য লালন করেন এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেন। এমনি একজন ইনহেরিটর হলেন ওয়াং চিং। তিনি শুধু ঐতিহ্যকে ধারণই করছেন না বরং সেটিতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে নতুন প্রজন্মের পছন্দের পোশাক তৈরিতে দারুণ সাফল্যও পেয়েছেন।

ওয়াং চিংয়ের জন্ম দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশে ছিয়ানসিনান বোওইয়েই এবং মিয়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের সিংই সিটিতে। ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে তিনি বোওয়েই বা পু ই নারীদের বিশেষ বুনন কৌশল শেখেন। নিজের প্রতিভা ও পরিশ্রমে তিনি এই বিশেষ কারুশিল্পে দক্ষ হয়ে ওঠেন।

বড় শহরে চলে যাওয়ার এবং অন্য পেশা গ্রহণের অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ছোট্ট শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিজের জাতির কারুশিল্পের আকর্ষণে এখানেই রয়ে যান তিনি।

গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী এথনিক পোশাকের নিজস্ব কারখানা। তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি এথনিক পোশাক শুধু যে বোওয়েই জাতির নারীরা পরেন তা নয়, পর্যটকরাও এগুলো কেনেন। যারা এই এলাকায় বেড়াতে আসেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির স্পর্শ নিতে চান তারা এই পোশাকগুলো কিনে নেন সাগ্রহে।

তার প্রতিষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। ওয়াং চিং বলেন,

  ‘আমি পোশাকের ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন করেছি। ফলে নতুন প্রজন্ম সহজে এটি ব্যবহার করতে পারে। যেমন কোমরের কাছে বেল্টের ব্যবহার করেছি। পিছনে চেইন যুক্ত করেছি। ‘

ওয়াং চিং মনে করেন, নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যকে জনপ্রিয় করতে না পারলে সেটা ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। বোওইয়েই জাতির নারীরা যে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার পরেন সেগুলোকে ফ্যাশনে পরিণত করার জন্য তিনি নারীদের হ্যান্ডব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রীতেও ঐতিহ্যবাহী নকশা ব্যবহার করেছেন। তিনি যখন নিজের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন  তখন সেখানে বোওইয়েই বুনন কৌশর প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেন। এখানে প্রশিক্ষিত নারীরা অনেকে তার কারখানাতেই কাজ পান। এতে গ্রামের অন্য নারীদের স্বাবলম্বের পথও খুলে দেন তিনি।

ওয়াং চিং জানান, বসন্ত উৎসবসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী উৎসবের আগে তার তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এমনকি বিদেশিরাও এগুলো কেনেন।

ওয়াং চিংয়ের বয়স এখন পঞ্চাশের কোঠায়। তার প্রতিষ্ঠান সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। তার কারখানায় তৈরি পোশাকগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এথনিক সংস্কৃতিকে লালন করে ঐতিহ্য রক্ষা এবং নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নেয়ার কাজে সফল হয়েছেন সৃজনশীল নারী ওয়াং চিং।

 

সাইফাই থেকে শিকড়ের সন্ধানে কণ্ঠশিল্পী চু চিংসি

একজন তরুণী সংগীতশিল্পী চু চিংসি। তিনি সাইফাই ভক্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। শুনবো তার কথা আমার তৈরি একটি প্রতিবেদনে।

চীনের একজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী চু চিংসি। তিনি সংগীত লেখকও বটে। এই তরুণী সংগীতশিল্পী সাইফাই ভক্ত হিসেবেই পরিচিত। তিনি ইলেকট্রনিক মিউজিক এবং সাইফাই সংগীতের জন্য তার দর্শক শ্রোতাদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছেন।

তবে সাইফাই মিউজক উপহার দিলেও তিনি নিজের শিকড়কেও একেবারে ভুওেল যাননি। বরং নিজের জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য এওবং ভবিষ্যত পৃথিবীর কল্পনা এই দুটি মিলিয়েই নিত্য নতুন সংগীত আসর উপহার দিচ্ছেন চু চিংসি।

চু চিংসির জন্ম ১৯৮৮ সালে ইউননান প্রদেশের ফু’আর সিটিতে। তিনি দাই জাতিগোষ্ঠীর মেয়ে। ২০০২ সারে মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকে সংগীত জগতে তার পদচারণা শুরু।

তিনি সাইফাই উপন্যাস, অ্যানিমেশন এবং চলচ্চিত্রের ভক্ত। তাই তার সংগীত অ্যালবামগুলোও হয় সাইফাই ভিত্তিক। তার স্টেজ পারফরম্যান্সে দর্শরা এক সাইফাই জগতে টাইম ট্রাভেলের অনুভূতি পান।

তবে সম্প্রতি চু চিংসি জানান, তিনি তার শিকড়কে ভুলে যাননি। বরং তার জাতির ঐতিহ্যকে মঞ্চ সজ্জায় ব্যবহার করে ভিন্নতর এক সৃষ্টি উপহার দিচ্ছেন তিনি।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল