চীনের কৃষিকাজ ও প্রসঙ্গকথা
2023-02-21 11:51:59

চীন বাংলাদেশের মতোই কৃষি-প্রধান দেশ। চীনে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে: জনগণের জন্য খাদ্য আকাশের মতো বড় ব্যাপার। আর কৃষি  হল খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। সম্প্রতি চীনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল প্রকাশিত হয়েছে। এটাকে বলা হয় চলতি বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের এক নম্বর ফাইল, যা প্রধানত কৃষি, গ্রাম এবং কৃষকের কাজ সম্পর্কিত। তাহলে চীনের কৃষিকাজে নতুন কী কী পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে চলতি বছর? বিস্তারিত দেখুন আজকের ভিডিও-তে।

২০০৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চীন সরকার টানা ২০ বছর ধরে ‘কৃষি, গ্রাম ও কৃষক’-কেন্দ্রিক এক নম্বর ফাইল প্রকাশ করে আসছে, যা দেশের কৃষি, গ্রাম ও কৃষকের কাজের ওপর সরকারের গুরুত্বের প্রতিফলন। এই থেকে আরও বোঝা যায় যে, চীন সরকার এই তিনটি কাজের ওপর কতোটা গুরুতারোপ করে।

ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ হিসেবে চীনকে গঠন করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হবে গ্রামের উন্নয়ন। বিশ্বের পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, চীনের উন্নয়নের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তাও বাড়ছে। তাই কৃষি, গ্রাম ও কৃষকের কাজকে মজবুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোটা দেশ ও সমাজের শক্তিতে সার্বিকভাবে গ্রামের পুনরুদ্ধার জোরদার করতে এবং কৃষি ও গ্রামের আধুনিকায়ন দ্রুততর করতে হবে।

ফাইলে প্রথমবারের মতো এমন কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে: দেশ শক্তিশালী হলে কৃষিকে শক্তিশালী করতে হবে, কৃষি শক্তিশালী হলে দেশ শক্তিশালী  হবে। দেশের অবস্থা অনুযায়ী, চীনা বৈশিষ্ট্যময় কৃষি খাতের শক্তিশালী দেশ গঠন করতে হবে।

‘কৃষি খাতের শক্তিশালী দেশ’ টার্মটি এই প্রথমবারের মতো এক নম্বর ফাইলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চীন কৃষি-প্রধান দেশ, তবে কৃষি খাতের শক্তিশালী দেশ নয়। কৃষি খাতের শক্তিশালী দেশ গঠন সার্বিকভাবে গ্রামের পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করা এবং সমাজতান্ত্রিক আধুনিক শক্তিশালী দেশ গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দেশকে কৃষি খাতে শক্তিশালী করতে কী কী করতে হবে? ফাইলে এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে:

১. লক্ষ্যের দিক থেকে: শস্য চাষের জন্য নির্ধারিত ভূমির আয়তন স্থিতিশীল করা হবে, শস্য উত্পাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে। যেমন, সয়াবিন ও ভুট্টার উত্পাদন বাড়ানোর প্রকল্প চালু হবে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শস্য ও সয়াবিনের পালাক্রমিক চাষ সমর্থন করা হবে, লবণাক্ত জমিতে সয়াবিনের চাষ স্থিতিশীলভাবে উন্নয়ন করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব নতুন পর্যায়ের শস্য উত্পাদন সামর্থ্য বাড়ানোর কার্যক্রম চালু হবে। বহুবিধ খাদ্য সরবরাহ-ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

২. ব্যবস্থার দিক থেকে: আবাদি জমি ও অবকাঠামো নির্মাণ জোরদার করা হবে। চীন দৃঢ়ভাবে ১২ লাখ বর্গকিলোমিটারের আবাদি জমিকে সংরক্ষণ করবে, উচ্চ মানদন্ডের আবাদি জমির নতুন নির্মাণ ও আপগ্রেডেশানকাজ সম্পন্ন করবে, বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের সমর্থন জোরদার করবে, কৃষিবিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাবে, বীজ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে। 

৩. নীতির দিক থেকে: কৃষকের শস্য চাষের মাধ্যমে আয় পাওয়া এবং আঞ্চলিক সরকারের দায়িত্বপালনের ব্যবস্থাগত নিশ্চয়তা সুসংহত করতে হবে, যাতে কৃষকের শস্যচাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, কৃষকের আয় নিশ্চিত করার জন্য, তাদের কাছ থেকে গম, ধান ক্রয়ের সবচেয়ে কম দাম নির্ধারণ করতে হবে, যাতে কেউ কৃষকের পরিশ্রমকে নষ্ট করতে না পারে। এ ছাড়া ভুট্টা ও সয়াবিন উত্পাদনকারীদের জন্য ভর্তুকি-ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ধান, গম এবং ভুট্টা চাষের খরচের বীমা এবং চাষাবাদের আয়ের বীমার আওতাকে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। এভাবে কৃষকের জন্য চিন্তামুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হবে।  

আসলে বিস্তারিতভাবে দেখলে, আমরা বুঝতে পারি যে, যদিও এটি একটি সরকারি ফাইল, তবে তা কৃষি, গ্রাম ও কৃষকের কাজের বিভিন্ন ছোট ছোট বিষয়কেও বিবেচনা করেছে। এভাবে কৃষকের স্বার্থ নিশ্চিত করা যাবে, কৃষিকাজের ক্ষেত্রে কৃষকের চিন্তা কমানো যাবে, গ্রামের চেহারা আরো সুন্দর করা যাবে। চলতি বছর, চীনের কৃষি, গ্রাম ও কৃষকের কাজের আরও উন্নয়ন ঘটবে, এমন আশা করা যায়। (শুয়েই/আলিম)