চীনা প্রতিষ্ঠানের পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন মাদাগাস্কারবাসী
2023-02-21 10:13:41

৪৪ বছর বয়সী ল্যান্ডরিয়া একজন রাজমিস্ত্রি। গত ২০ বছর ধরে তিনি মাদাগাস্কারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর তুলিয়ারায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি চীনা প্রতিষ্ঠানের পানি সরবরাহ প্রকল্পের কল্যাণে তাঁর পরিবারে কলের পানির ব্যবস্থা হয়েছে। তাকে এখন আর নিরাপদ পানির জন্য দূরবর্তী স্থানে যেতে হয় না।

১৯৯৬ সালে ল্যান্ডরিয়া জন্মস্থান ত্যাগ করে, জীবিকা নির্বাহ করার জন্য, তুলিয়ারায় আসেন। শহরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা হবার আগে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে প্রতিদিন ১৫ কিলোমিটার দূরের নদী থেকে পানি আনতে হতো।

তিনি বলেন, “তখন আমরা গরুর গাড়িতে করে পানি আনতাম। দিনে দুই বার। প্রত্যেক বার যাতায়াতে সময় লাগতো প্রায় ২ ঘন্টা।”

২০০১ সালে ল্যান্ডরিয়ার বাসার কাছে দুটি পাবলিক পানির কল স্থাপিত হয়। ফলে, পানির জন্য তাদের দিনে মোট ৪ ঘন্টার পথচলার পর্ব শেষ হয়। তাঁর পরিবারের জীবনমানও কিছুটা উন্নত হয়েছে। নদীর পানি ব্যবহার করার সমস্যা হলো, পানির মানের নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু কলের পানি বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর।  

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মানুষ বেড়েছে, ফলে পাবলিক পানির কল থেকে পানি নেওয়ার লোকও বেড়েছে। লাইনে অপেক্ষা করার সময় আগের চেয়ে বেড়ছে।

তুলিয়ারা হচ্ছে মাদাগাস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরশহর।  সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শহরের আকার এবং জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। শহরের বিদ্যমান পানি সরবরাহব্যবস্থা স্থানীয় জনগণের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না।

এই প্রেক্ষাপটে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে চায়না রেলওয়ে ১৮তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড তুলিয়ারায় পানি সরবরাহ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করে। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী। শহর ও উপকণ্ঠে মোট ৫৭ কিলোমিটারের পানির পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। লক্ষ্য, ৪৮০টি পরিবারের জন্য ঘরে ঘরে পানির কল স্থাপন করা। এ ছাড়া, ২শ’ সেট কেন্দ্রীভূত জল সরবরাহ রুমও নির্মিত হবে। এতে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ কল্যাণ লাভ করবে।

২০২২ সালের শেষ নাগাদ এসে ল্যান্ডরিয়া বাসায় বসে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কলের পানি ব্যবহার করার সুযোগ পান। এতে উপকৃত হয়েছেন স্থানীয় সড়কের খাবার দোকানের মালিকা রেপেরা। গত ১০ বছর ধরে তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনছিলেন। পানি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে তাঁর দোকানের উল্টা দিকে একটি কেন্দ্রীভূত জল সরবরাহ রুম নির্মিত হয়। রেপেরা বলেন, এখন পানি ব্যবহার করতে চাইলে, যে-কোনো সময় রাস্তার ঔ দিক থেকে আনা যায়।

চায়না রেলওয়ে ১৮তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড মাদাগাস্কার কোম্পানির প্রকল্প বিভাগের প্রধান ও তুলিয়ারা প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী জাং হাইইয়াং জানান, শহরে পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য বাড়ানো ছাড়া, তুলিয়ারার আশপাশে একটি ছোট দ্বীপে দু’ই সেট সমুদ্রজল নিষ্কাশন সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে চালুও হয়েছে। ব্যবস্থাটি স্বাভাবিকভাবে চালু হবার পর, তুলিয়ারার দক্ষিণ ও পূর্বের প্রায় ২০ হাজার মানুষ লাভবান হবেন। (প্রেমা/আলিম)