‘ঘুরে বেড়াই’- ৬ষ্ঠ পর্ব
2023-02-21 16:38:19

 

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। চীনের নিষিদ্ধ নগরী  

২। ইউননান প্রদেশের প্রাচীন গ্রাম ফুয়ান

৩ । পর্যটক আকৃষ্ট করছে চীনের লি নদী

 

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ষষ্ঠ পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম। 

 

১। চীনের নিষিদ্ধ নগরী

 

চীনের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হলো বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ নগরী বা ফরবিডেন সিটি। সম্রাটের অনুমতি ব্যতীত কেউ এলাকায় প্রবেশ করতে বা এলাকা থেকে বের হতে পারতো না বলে এর নাম হয় নিষিদ্ধ নগরী। চীনের রাজধানী বেইজিঙয়ের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত ফরবিডেন সিটি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্থাপনা। চীনের মহাপ্রাচীরের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্য়টন গন্তব্য হলো এই রাজকীয় প্রাসাদ নগরী ।

 

 

ফরবিডেন সিটি হলো ৭ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার বা ৭৮ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে  বিস্তৃত চীনের ফরবিডেন সিটি বা নিষিদ্ধ নগরী। প্রাচীর ঘেরা এক বিশাল জগত্ যার মধ্যে রয়েছে ৯৮০টি প্রাসাদ ভবন, বাগান,ভাস্কর্য,জলাশয় ও প্রাঙ্গণ। ১৪০৬ সাল থেকে ১৪২০ সালের মধ্যে গড়ে ওঠে ফরবিডেন সিটির মূল কয়েকটি স্থাপনা ।


 

চীনের ফরবিডেন সিটি ছিল চীন সম্রাটদের বাসস্থান এবং পাঁচশ' বছর ধরে চীনের প্রশাসনিক ক্ষমতার মূল কেন্দ্র। চীনের ইউয়ান রাজবংশের সময় ফরবিডেন সিটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হলেও এর মূল স্থাপনাগুলো গড়ে ওঠে মিং ও ছিং রাজবংশের শাসনকালে।

 

১৪০৬ সাল থেকে শুরু হয় ফরবিডেন সিটির মূল নির্মাণ কাজ।  ১৫ বছর ধরে দশ লাখেরও বেশি শ্রমিক প্রাসাদ নির্মাণের কাজ করেন। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের অরণ্য থেকে আনা হয় মহামূল্যবান ফোবে চেনান কাঠ, মার্বেল পাথরের বিশাল সব খন্ড দিয়ে সাজানো হয় প্রাসাদের বিভিন্ন কক্ষ। তৈরি হয় অসাধারণ সব ভাস্কর্য


ফরবিডেন সিটি এখন আর নিষিদ্ধ নেই। এখানে এখন রয়েছে প্যালেস মিউজিয়াম। মিং রাজবংশের সময় নির্মিত চীনা মাটির অপূর্ব সুন্দর শিল্প নিদর্শন,সোনা, রূপা, জেড পাথরসহ বিভিন্ন মহামূল্যবান রত্নে তৈরি শিল্প সামগ্রী, চীনা রেশমের কারুকার্যময পোশাক, দুর্লভ হস্তশিল্প রয়েছে প্যালেস মিউজিয়ামে।

এছাড়া এখানে রয়েছে তাং ও সং রাজবংশের অসাধারণ সব মূল্যবান শিল্প সংগ্রহ। রয়েছে ৫০ হাজার পেইন্টিং।

অন্দর দরবারে রয়েছে ভাস্কর্য ও জলাশয় শোভিত বাগান। যা শিল্প,বিলাস ও সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন।পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন ফরবিডেন সিটিতে আসেন।

১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বিশ্বে কাঠের কাজের সবচেয়ে বড় সংগ্রহ বলে অভিহিত করে। ঐতিহাসিক গুরুত্ব,শিল্প নিদর্শন,সম্পদ ও সৌন্দর্যের দিক থেকে ফরবিডেন সিটি হলো পৃথিবীর বুকে মানুষের সৃষ্টি সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনাগুলোর অন্যতম।

 

২। ইউননান প্রদেশের প্রাচীন গ্রাম ফুয়ান

 

ফুয়ান, এক অদ্ভুত সুন্দর গোছালো গ্রাম। এ গ্রামের লাল ইটের দালান, পুরানো গাছ-গাছালি, অলি-গলি, সেইসাথে প্রাচীন মন্দির ও কূপ  সাক্ষ্য দেয় প্রাচীন ইতিহাসের।

 

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের চিননিং জেলার সবচেয়ে প্রাচীন গ্রাম এই ফুয়ান। জানা যায়,  মিং রাজবংশের সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামটি।

 

 

সব ঋতুতেই এ গ্রামকে আবিষ্কার করা যায় বিশেষ বিশেষ রুপে। তবে বসন্তের সময় পুরো ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য প্রদর্শন করে গ্রামটি। চারদিকে বাহারি-রংয়ের ফুল গ্রামকে  করে তোলে রঙিন ।

 

কুনমিংয়ের শহর এলাকা থেকে গাড়ি চালিয়ে তিয়েনচি হ্রদের তীর ঘেষা এই গ্রামে পৌঁছাতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও কম সময় ।

 

 

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সুরক্ষা এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনকে উন্নীত করার লক্ষ্যে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পুরানো বাড়িগুলো সংরক্ষণ করার একটি পরিকল্পনা নিয়েছে।

 

 

 

খাদ্য, পোশাক, কাস্টমস, ঐতিহ্য, স্থাপত্য, উত্সব, কারুশিল্প, ধর্ম, স্থানীয় জাতিগত লোকদের ভাষা জানতে দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্‍্যটক ঘুরতে আসেন এই গ্রামে।

 

 

৩ । পর্যটক আকৃষ্ট করছে চীনের লি নদী

 

 

চারদিকে সবুজ পাহাড়। সবুজের মাঝে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের দিকে বয়ে  চলছে চলছে পানি। বলছি চীনের বিখ্যাত লি নদীর কথা ।  এর স্বচ্ছ পানি, শহরের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাওয়া এবং নদী পাশের চমৎকার পাহাড়ের জন্যবিখ্যাত বিশ্বজুড়ে।

 

 

 

বিশ্বজুড়ে খ্যাত চীনের লি নদী বা লি চিয়াং অবস্থিত  দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি প্রদেশের কুইলিন শহরে । ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দেওয়া তথ্যমতে, "বিশ্বের শীর্ষ ১০ জলীয় আশ্চর্যের একটি" হিসাবে খ্যাত এই নদী। কথিত আছে, লি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শিল্পকর্মের প্রেরণা পেতেন  চীনের চিত্রশিল্পী ও কবিরা ।

 

 

৮৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লি নদীটির কুইলিং এবং ইয়াংসু এর মধ্যবর্তী স্থানটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর। নদীটির দুপাশে চমকপ্রদ আড়াআড়ি পাহাড়, নলখাগড়ার বন, গ্রামগুলোর সুসজ্জিত চাষাবাদ এবং ঘন বাঁশ বাগান নজড় কাড়ে পর্যটকদের ।

 

 

মেঘলা এবং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে লি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পর্‍্যটকরা।

 

 

পর্যটকদের সুবিধার্থে নদীটি ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে ছোট ছোট বাঁশের ভেলা  ও সুসজ্জিত জাহাজ। পর্যটকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী নৌকা বা জাহাজে চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন নদীর বিভিন্ন জায়গায়।

 

এছাড়া প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য লি নদীর ধার ঘেঁষে আছে হাইকিং করার সুযোগ। মাছ ধরার পাশাপাশি তাদের আছে রাতের দৃশ্য দেখার সুব্যবস্থা।

 

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী