বহির্গামী পর্যটনের সুশৃঙ্খল পুনরুদ্ধার চীনা অর্থনীতির প্রতি বিশ্বের প্রত্যয় ও প্রত্যাশা বাড়িয়েছে
2023-02-21 10:22:25

তিন বছর পর চীনা বহির্গামী গ্রুপ পর্যটন পুনরায় শুরু হচ্ছে। প্রথম দফা পর্যটনদল থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই পৌঁছেছে। চীনা পর্যটকরা যেখানে যান, সেখানেই তাদেরকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে।

দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চীনা বহির্গামী ভ্রমণ সুশৃঙ্খলভাবে পুনরুদ্ধার হওয়া চীনের অর্থনৈতিক প্রাণশক্তি ও সুপ্তশক্তির প্রতিফলন, যা বিশ্ব পর্যটক বাজারকে পুনরায় চাঙ্গা করবে। চীন মহামারী প্রতিরোধনীতি শিথিল করার সঙ্গে সঙ্গে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুপ্তশক্তি জেগে উঠছে এবং বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাও উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

৬ ফেব্রুয়ারি থেকে চীন পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ডসহ ২০টি দেশের বহির্গামী গ্রুপ পর্যটন এবং “এয়ারটিকিট+হোটেল” পরিষেবা পুনরায় শুরু করে। সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের পরিসংখ্যান অনুসারে, সম্প্রতি বহির্গামী গ্রুপ পর্যটনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চীনের বসন্ত উত্সব চলাকালে পর্যটন-বাজার পুনরুদ্ধার থেকে চীনাদের বিদেশ ভ্রমণের চাহিদা অনেক বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, মনোরম আবহাওয়া ও অভিবাসন পদ্ধতি সুবিধাজনক হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো বর্তমানে চীনা পর্যটকদের প্রথম বাছাই। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের গ্রুপ ভ্রমণও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, বসন্ত উত্সবের ছুটি শেষ হবার পরের এক সপ্তাহে বিদেশে গ্রুপ ভ্রমণ এবং “টিকিট+হোটেল” পরিষেবার চাহিদা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি চীনা আগামী এক বছরের মধ্যে বিদেশে ভ্রমণ করবেন এবং এক-চতুর্থাংশ পর্যটক আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে ভ্রমণ করতে যাবেন।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, যদিও বর্তমানে বিদেশে ভ্রমণকারীর সংখ্যা মহামারীর আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম, তবুও দ্রুত এর চাহিদা বাড়ছে। অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছর চীনের বহির্গামী পর্যটন বাজার দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে।

চীনা পর্যটকদের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে। সরকারি পর্যটন-কর্মকর্তা ও পর্যটককর্মীরা বলছেন, চীনা পর্যটকরা বিশ্ব পর্যটন অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। চীনা পর্যটকদের ফিরে আসা তাদের পর্যটক-বাজারকে পুনরায় চাঙ্গা করবে।

পর্যটন শিল্প থাইল্যান্ডের মেরুদণ্ডস্থানীয় শিল্প এবং দেশটির জিডিপির প্রায় এক পঞ্চামাংশের জন্য দায়ী। চীনারা সবসময় দেশটির পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মহামারীর আগে, ২০১৯  সালে, থাইল্যান্ড ৪ কোটি বিদেশী পর্যটককে অভ্যর্থনা জানায়। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ছিল চীনা পর্যটক। “চীনা পর্যটকদের ফিরে আসা থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাই পর্যটন ব্যুরো চলতি বছর ৭০ লাখ চীনা পর্যটককে অভ্যর্থনা জানাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।” দেশটির জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর প্রধান ইউথাসক এ কথা বললেন।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে মহামারীর পর প্রথম চীনা পর্যটকদল ফেরারি ওয়ার্ল্ডে আসে। ৬০ জনের চীনা পর্যটকদলটিকে প্রবেশদ্বারে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং বিনামূল্যে সেখানে বেড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়। পার্কের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, “আমরা চীনা পর্যটকদের খুব মিস করেছি। এখন অপেক্ষার পালা শেষ। আমরা তাদের স্বাগত জানাই।”

বস্তুত, চীনের বহির্গামী পর্যটন দ্রুত পুনরুদ্ধার হওয়ায় বিশ্ব পর্যটন শিল্প চাঙ্গা হবার ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০২৩ সালের আসিয়ান পর্যটন ফোরামে, আসিয়ান দেশসমূহ, চীনা পর্যটকদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার কথা উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্ব আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা মহামারীর আগের ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার হবে। ২০১৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম বহির্গামী পর্যটন-বাজার হিসেবে, চীনের সুশৃঙ্খলভাবে নাগরিকদের বহির্গামী ভ্রমণ পুনরুদ্ধার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, এমনকি বিশ্ব পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করবে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত “ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট”-এর আপডেটে চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৮ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫.২ শতাংশ করেছে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিভাগের উপ-পরিচালক বলেন, চীনের মানুষের ব্যক্তিগত ভোগ বাড়ছে এবং এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। চীনের অর্থনীতি চলতি বছর ও আগামী বছর আরও শক্তিশালী হবে এবং তা হবে বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিশেষ করে পরিষেবা শিল্পের জন্য অনুকূল। (প্রেমা/আলিম)