যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে কী হচ্ছে? কখন এটা ঘটেছিলো? আমেরিকান মিডিয়া থেকে আমরা কী তথ্য জানতে পেরেছি? উত্তর হল: এটি ছোট্ট খবর। খবরের শিরোনাম: “ওহাইওতে কোথাও একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে।"
কিন্তু, আসল ঘটনাটি এমন: গত ৩ ফেব্রুয়ারি, ইলিনয় থেকে পেনসিলভানিয়াগামী একটি মালবাহী ট্রেন, ওহাইওর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর ফলে ট্রেনের প্রায় ৫০টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এই ট্রেনের দশটি বগিতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছিল। এসব বিষাক্ত পদার্থের মধ্যে রয়েছে "ভিনাইল ক্লোরাইড"। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর, এটি বিস্ফোরিত হয়, আকাশে আগুনের সাথে ঘন ধোঁয়া উড়তে থাকে এবং শহরের উপরে একটি কালো "মাশরুম মেঘ" তৈরি হয়।
আসুন প্রথমে "ভিনাইল ক্লোরাইড" বুঝি। ভিনাইল ক্লোরাইড হল স্বাভাবিক তাপ ও চাপে থাকা একটি বিষাক্ত, দাহ্য, বর্ণহীন গ্যাস। ১৪ ফেব্রুয়ারি সিবিএস-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভিনাইল ক্লোরাইড ছাড়াও, আরও কয়েকটি রাসায়নিক পদার্থও লাইনচ্যুত ট্রেনটি বহন করছিল, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিদেশী মিডিয়া মন্তব্য করেছে যে, এই ঘটনা "চেরনোবিল দুর্ঘটনার সাথে তুলনীয়"।
আসুন এবার ওহাইওর প্রতিক্রিয়া দেখি। ৩ ফেব্রুয়ারি ওহাইওর জরুরি বিভাগ দুর্ঘটনাস্থলের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে হাজার হাজার বাসিন্দাকে জরুরিভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। আবার, অপ্রত্যাশিতভাবে, সরকার দুর্ঘটনার মাত্র ৫ দিন পর সতর্কতাব্যবস্থা তুলে নেয়। ওহাইওর গভর্নর ৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা বিভাগের সংগৃহীত নমুনাগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনাস্থল এবং এর আশেপাশে বায়ুর মানের রিডিং "স্বাভাবিক হয়ে গেছে" এবং বাসিন্দারা "নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন।"
প্রশ্ন হচ্ছে: সরকারের এ বক্তব্য কি সত্য? দুর্ঘটনার পর এক সপ্তাহ ধরে আমেরিকান মিডিয়া কী রিপোর্ট করছিল? "চীনা বেলুন" এবং ‘সুপার বোল’। ঘটনাস্থলের লোকেরা যখন বাড়িতে ফিরে আসে, তখন তারা দেখতে পায় যে, পাশের নদীর মাছ ও তাদের পোষা প্রাণী মারা গেছে এবং তারা নিজেরাও মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং অন্যান্য উপসর্গে ভুগতে শুরু করেছে। তাই তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে এবং অবশেষে "ওহাইও" শব্দটি যুক্তরাষ্টজুড়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর হট সার্চ তালিকায় স্থান করে নেয়।
স্পষ্টতই, ওহাইও সরকার বিশ্বাস করে যে, জনমত পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং মার্কিন সরকার তার নিজের দেশে সংবেদনশীল বিষয়ে অভ্যন্তরীণ জনমত পরিচালনায় আরও "অভিজ্ঞ"। প্রথমত, তারা রিপোর্টিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে পারে না, অন্ধভাবে বিভিন্ন পোস্ট সোস্যাল মিডিয়া থেকে মুছে ফেলাও বৃহত্তর জনমতের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। তাই ঘটনার শুরুতে, সিএনএন এবং ওয়াশিংটন পোস্টে নিউজ হয়, স্থানীয় সরকারও যথারীতি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। প্রশ্ন হচ্ছে: সত্যিকারের রিপোর্ট করতে চান এমন সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে কোথায়? তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে! ওহাইওতে এই ঘটনায়, ঘটনাস্থল ও প্রেস ব্রিফিংস্থল থেকে কোনো কোনো সাংবাদিককে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
আমেরিকার মিডিয়া ওহাইওর আকাশে "মাশরুম ক্লাউড" দেখেনি বা এ নিয়ে তেমন একটা রিপোর্টও করেনি। মার্কিন রেলওয়ে বিভাগের ব্যয় কমানোর চেষ্টা ও নিরাপত্তাব্যবস্থার অভাবের কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে, এটা স্পষ্ট। আমেরিকায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা আসলে সীমিত। আবার যারা সত্য বলতে চান, তাদের সময়মতো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমেরিকার মিডিয়া বরং চীনের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। চীন সম্পর্কে সত্য-মিথ্যার বাছ-বিচার না-করে রিপোর্ট করা যেন তাদের হবি। (জিনিয়া/আলিম)