চীনের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নতুন সেমিস্টার শুরু প্রসঙ্গ
2023-02-20 15:30:38

ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে, দেশের কোভিড মহামারী পরিস্থিতির অবনতির কারণে, অনেক এলাকার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে অফলাইন ক্লাস নেওয়া স্থগিত হয়ে যায়। তখন থেকেই ছাত্রছাত্রীরা কেবল অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিয়ে আসছিল। গত শরত্কালীন সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষাও তাঁরা অনলাইনে দিয়েছে।

 

এখন নতুন বছরে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। ভাইরাস এখন অনেক দুর্বল। তা ছাড়া, চীনের অধিকাংশ মানুষ টিকাও নিয়েছে। ফলে, সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে, কর্তৃপক্ষ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমরা চীনের কয়েকটি শহর ও প্রদেশের কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস এবং বসন্ত উত্সবের ছুটি চলাকালে রেলপথে যুব স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের কথা তুলে ধরবো।

 

১৩ ফেব্রুয়ারি চীনের অধিকাংশ এলাকার স্কুলের নতুন সেমিস্টারের ক্লাস আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সংবাদদাতারা বেইজিং, থিয়ানচিন, হাইনান আর সিছুয়ানসহ কয়েকটি এলাকার স্কুল পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন স্কুলের ক্যাম্পাসে প্রাণচাঞ্চল্য অনুভব করেন। তারা দেখেন, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা মজার মজার পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে স্বাগত জানাচ্ছেন।

 

চীনের থিয়ানচিন মহানগরের খুনমিংলু প্রাথমিক স্কুলের বাইরে নতুন সেমিস্টারের প্রথম দিনে শিক্ষকরা লাল রঙয়ের খরগোশ সেজে ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানান। ছাত্রছাত্রীরা এতে খুব মজা পায় ও আনন্দের সাথে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করে।

 

রাজধানী বেইজিংয়ের মিইয়ুন উপকন্ঠ এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা লিয়াং হং ইয়ান ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ক্লাসে কাগজ ভাঁজ করা আর ধাঁধাঁ বিষয় যুক্ত করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীরা অনেকদিন পর স্কুলে এসেও আনন্দময় সময় কাটাতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে বাসায় ছুটি কাটানোর পর, বাচ্চাদের কিছুটা সময় লাগবে স্কুলের স্বাভাবিক রুটিনের সাথে খাপ খাওয়াতে। এই শিক্ষক সেটি মাথায় রেখেছেন।

 

সিছুয়ান প্রদেশের মিয়ানইয়াং শহরের ইয়াংচিয়াচেন প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ক্লাস ছিল শ্রমের ক্লাস।  সবাই একসাথে স্কুলের প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম চি ইয়ান লিনের সাথে স্কুলের ক্ষেত থেকে মূলা সংগ্রহ করে। শিক্ষক চি বাচ্চাদের সামনে মূলা চাষের কৌশল ব্যাখ্যা করেন। সবাই আনন্দের সাথে মূলা সংগ্রহ করে এবং শ্রমের তাত্পর্য ও মূল্য বুঝতে শেখে।

 

মিয়ানইয়াং শহরের বেইছুয়ান ছিয়াং জাতির জেলার ইয়ুলি উপজেলা প্রাচীনকালের চীনের রূপকথার সম্রাট ‘তাইয়ু’র জন্মস্থান। তিনি লোকজন নিয়ে বন্যা প্রতিরোধে অনেক কাজ করেছিলেন এবং তাঁর বন্যা-প্রতিরোধকাজ নিয়ে অনেক কাহিনীও রচিত হয়েছে। তাই স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রথম দিনেই বাচ্চারা একসাথে ‘তাইয়ু’র কবিতা আবৃত্তি করে।

 

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতে সারা চীনে কোভিড মহামারী-প্রতিরোধক ব্যবস্থা শিথিল করা হয়। টানা ৩ বছর কঠোর প্রতিরোধক-ব্যবস্থার কারণে দেশে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল এবং মৃতের সংখ্যাও ছিল অনেক কম। এটা একটা বড় সাফল্য। এদিকে, এখন যে ভাইরাস ছড়াচ্ছে, সেটি খুবই দুর্বল এবং আক্রান্তদের অধিকাংশের শরীরেই কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের হারও খুবই কম। তাই দেশের জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

 

তবে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নতুন সেমিস্টারেও বিভিন্ন ভাইরাসবিরোধী ব্যবস্থা থাকছে। এ সম্পর্কে বেইজিং ১৩ নম্বর মাধ্যমিক স্কুলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিন শেং বলেন, নতুন সেমিস্টারেও স্কুলে দৈনিক ছাত্রছাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। কেউ অসুস্থ হলে তা স্কুলকে আগে জানাতে হবে এবং কোভিড বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ না-হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে বাসায় অবস্থান করতে হবে। তা ছাড়া, স্কুলের স্বাস্থ্য ও মহামারী-প্রতিরোধক বিভাগের পরামর্শক্রমে, একমাসব্যাপী অন্তর্বর্তীকালীন ক্রীড়া ক্লাস চালু করা হয়েছে। এ ক্লাসের উদ্দেশ্য, ছাত্রছাত্রীদের শরীরচর্চা ও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো।

 

স্কুলে শিক্ষার্থীদের যেসব খাবার দেওয়া হয়, সেটা নিয়েও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের চিন্তা থাকে। থিয়ানচিন মহানগরের ইয়ুইয়াংতাও প্রাথমিক স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের চিন্তা দূর করতে, তাদের নিয়ে খাবার সরবরাহকারী কোম্পানির কার্যালয় পরিদর্শনে যায়। অভিভাবকরা নিজেদের চোখে দেখেন কীভাবে খাবার তৈরি করা হচ্ছে। এ সময় তারা কোম্পানিকে কিছু পরামর্শ দেওয়ার সুযোগও পান। সিছুয়ান প্রদেশের মিয়ানইয়াং শহরের ইয়ুলিচেন প্রাথমিক স্কুলে নতুন সেমিস্টারের আগে রান্নাঘর সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চালু হয়।

 

নতুন সেমিস্টারে অনেক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের নতুন নতুন আশার কথা বলেছে। কেউ আরও বেশি বন্ধু বানাতে চায়, কেউ  বেশি মজাদার ও তাত্পর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগ্রহী। বেইজিং তুংছেং এলাকার সিসাম অলিগলি প্রাথমিক স্কুলে একটি ‘ক্লাস গাছ’ তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কার্ডে নতুন সেমিস্টারে নিজেদের প্রত্যাশার কথা লিখে এতে ঝুলিয়ে দেয়। এ গাছ ক্লাসের মধ্যে থাকবে। এটি বাচ্চাদের জন্য একটি তাত্পর্যপূর্ণ ও মজার ব্যাপার।

 

থিয়ানচিন মহানগরের ইয়ুইয়াংতাও প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বাই ইয়ুন তুও ছুটির দিনে অনেক ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিয়েছে। নতুন সেমিস্টারে তার লক্ষ্য আরও বেশি ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নেওয়া ও ভালোভাবে শরীরচর্চা করা। এ স্কুলের প্রেসিডেন্ট ছু সিন হং বলেন, নতুন সেমিস্টারে বিভিন্ন মেজরে নতুন ধরনের অনুষ্ঠান বা কার্যক্রম থাকবে। এভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের শখের কাজ করতে পারবে।

 

সিছুয়ান প্রদেশের মিয়ানইয়াং শহরের ইয়াংচিয়াজেন প্রাথমিক স্কুলের প্রেসিডেন্ট চি ইয়ান লিন বলেন, নতুন বছরে অনেককিছু করা হবে; যেমন, ক্রীড়া শিক্ষকরা স্কুলের বাচ্চাদের সাথে খরগোশ-নৃত্য করবেন, স্কুলের নতুন খেলার মাঠের নির্মাণকাজ শেষ হবে, স্কুলে বাচ্চাদের জন্য ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে, ইত্যাদি। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “২০১৯ সালে যখন এ স্কুলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই, তখন ভালো করে স্কুল পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি। সেই সময় স্কুলের অনেক বাচ্চা পিতামাতার চাকরির জন্য অন্য বড় শহরে চলে গেছে। স্কুলে তখন নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪৮০। তবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ সংখ্যা ৫৩০ জনে উন্নীত হয়। তাদের মধ্যে অনেকে আবার বড় শহরের স্কুল থেকে জন্মস্থানে ফিরে এসেছে। এ পরিবর্তন থেকে বোঝা যায়, বাচ্চাদের পিতামাতারা স্কুলের শিক্ষার মানের উন্নয়ন খেয়াল করেছেন।”(সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)