যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির সাম্প্রতিক ঘটনা ও নেটিজেনদের উদ্বেগ প্রসঙ্গ
2023-02-17 15:54:02

ফেব্রুয়ারি ১৭: ‘যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি একাধিক ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে বোঝা যায়, ভেতরে কোনো সমস্যা আছে।’ মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা আলাদাভাবে মোটামুটি এ ধরনের উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 


গত ৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট প্যালেস্টাইন অঞ্চলে একটি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ দুর্ঘটনার পর এখনও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ভুগছেন। এ ঘটনার কদিন বাদেই টেক্সাস ও দক্ষিণ ক্যারোলিনা রাজ্যেও ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। 


মার্কিন তথ্যমাধ্যমের খবর অনুসারে, চলতি বছর দু’মাসেরও কম সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রে এক ডজনের বেশি ট্রেন-দুর্ঘটনা ঘটেছে। খুব দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, গড়ে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ১৭০০ বার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। মার্কিন পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপাত্ত অনুসারে, প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় ৪৫ লাখ টন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রেলপথে পরিবহন করা হয়। এ সব পুরাতন রেলপথে যাতায়াত করার সময় পণ্যবাহী ট্রেনগুলোর বড় বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। 


গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এ সব ট্রেনর্দুঘটনার পিছনের কারণ হচ্ছে, রেলপথ কম্পানি অনেক বছর ধরে শুধু অর্থ আয় করতেই ব্যস্ত আছে। ধীরে ধীরে জমে ওঠা সমস্যাগুলো সমাধানের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আর তাই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রেলপথ-ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ত্রুটি এতে ফুটে ওঠে।


মার্কিন রেলপথ কম্পানি মনে করে, রেলপথের প্রথম কাজ হচ্ছে ‘অর্থ উপাজন করা’; রেলপথ কোনো ‘মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো’ নয়। এজন্য কিভাবে অর্থ কম খরচ করে বেশি আয় করা যায়, তা কম্পানির মূল চিন্তার বিষয়। এবার ওহাইও রাজ্যে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনার কথা এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। সংশ্লিষ্ট রেল-কম্পানির নাম হচ্ছে নরফোল্ক সাউদার্ন রেলওয়ে। কম্পানিটি খরচ কমানোর সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে; যেমন, ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ানো, ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো, এবং রেলপথের কর্মচারীর সংখ্যা কমানো, ইত্যাদি। এর ফলে ২০২২ সালে এ কম্পানির আয় হয় ১২৭০ কোটি ডলার, যা একটি নতুন রেকর্ড এবং আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। 


যদি রেলপথ-ব্যবস্থাকে শুধু ‘টাকা উপার্জন’ করার হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে ঝুঁকি দিন দিন বাড়বেই। ব্রিটেনের ‘দা গার্ডিয়ান’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওহাইও রাজ্যের ট্রেনদুর্ঘটনা একটি বিপদসংকেত। মার্কিন রেলপথ-ব্যবস্থার পদ্ধতিগত সমস্যা এতে ফুটে উঠেছে।  


যদি সব কাজে শুধু আর্থিক সুবিধা খোঁজা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা কিভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে? ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বাইডেন প্রশাসন ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনা পাস করে। তারা ঘোষণা করেছে যে, এ পরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সড়ক, সেতু, বন্দর ও বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। তবে, এ পরিকল্পনা সাধারণ মানুষের জন্য কতোটা কল্যাণ বয়ে আনবে, এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। কারণ, সেখানে সব কাজে শুধু আর্থিক সুবিধা খোঁজা হয়।


কোনো কোনো নেটিজেন অনলাইনে লিখেছেন: ‘অবিশ্বাস্য!! এটা কি আমাদের দেশ! কিভাবে আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটে?!’ আসলে ভুল পথে অনেক বছর ধরে এগিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে বড় ধরনের পদ্ধতিগত ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এবারের ওহাইও রাজ্যের ট্রেন-দুর্ঘটনা শুধু একটি বড় সমস্যার ছোট বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মার্কিন রাজনীতিকরা যদি এ খাতে গভীর পদ্ধতিগত সংস্কারের চিন্তা না-করেন, তবে কোনো ধরনের ‘অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনা’-ই তেমন একটা কার্যকর হবে না। তাতে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আয় বাড়বে, কাজের কাজ কিছু হবে না। 


(আকাশ/আলিম)