সৌদি আরবের নতুন শহর নির্মাণে চীনের লি পাই
2023-02-17 15:19:26

সৌদি আরবে একটি নতুন শহর নির্মিত হচ্ছে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি সরকারের উত্থাপিত ‘ভিশন ২০৩০’-এর  অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি উপসাগরীয় অঞ্চলে সম্প্রতি সবচেয়ে নজরকাড়া প্রকল্প। এই নতুন শহরটি লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরের তীরে এবং লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল দ্বারা গঠিত সোনালী সমুদ্র বাণিজ্য পথের কাছাকাছি অবস্থিত।

 এ নতুন শহরে প্রধানত নতুন জ্বালানি ও পানি, খাদ্য, অগ্রসর প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং বিনোদন শিল্প উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এই যে, ১০ লাখ মানুষের এই শহরে কোনো গাড়ি ও রাস্তা থাকবে না। মাটির নিচে দু’তলার অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। মাটির নিচের ওই টানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান।

লি পাই এই টানেল প্রকল্পের পশ্চিমাংশের ব্যবস্থাপক। গত এক বছরে তিনি নতুন শহরসহ উপসাগরীয় অঞ্চলে দুটি দৃষ্টান্তমূলক প্রকল্পের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছেন। ভবিষ্যতের নতুন শহর প্রকল্প প্রসঙ্গে লি পাই বলেন, “এ শহর আগামী দশক, এমনকি শতকের জন্য সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হবে। শহরটির আয়তন ২৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। এতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। আমরা যে টানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, সেটি নতুন শহরের পরিবহনব্যবস্থার মূল অংশ। এ প্রকল্পে রয়েছে ৬টি টানেল, যার দৈর্ঘ্য ৯.৪৮ কিলোমিটার। গত ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু থেকে আমরা ২৬০০ মিটারের বেশি টানেল খনন করেছি।”

অল্প কথার আড়ালে রয়েছে লি পাই ও তার সহকর্মীদের গত এক বছরের পরিশ্রম। এ প্রকল্প নির্মাণ করা সহজ নয়। বিশাল মরুভূমিতে চরম গরম ও জনশূন্য পরিবেশ খুব স্বাভাবিক। নতুন সহকর্মী আসলে লি পাই তাদের একা বাইরে এবং জনশূন্য অঞ্চলে না যাওয়ার জন্য বলেন। শহরটি মরুভূমির গভীরে অবস্থিত হবার কারণে, এখানে কাজ করা কঠিন চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মালামাল সৌদি আরদের রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দাসহ নানান বড় শহর থেকে ক্রয় করতে হয়। অন্য দেশ থেকে আমদানি করা সরঞ্জাম ও সামগ্রীও প্রথমে হাজার কিলোমিটার দূরের জেদ্দা বন্দরে যায়। তারপর স্থলপথে সেগুলো প্রকল্পস্থলে আনা হয়। দীর্ঘ স্থলপথ নিরাপদে অতিক্রম করা সহজ নয়। এ শহর নির্মাণকাজ সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নিতে প্রকল্প কমান্ড অফিস প্রকল্প থেকে ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে আরও কাছে নিয়ে আসেন লি পাই। পাশাপাশি সময় সাশ্রয় করতে ২৪ ঘন্টা ডিউডির ব্যবস্থা করেন তিনি।

প্রায় দশ বছর ধরে বিদেশে কাজ করছেন লি পাই। ভবিষ্যতের নতুন শহরের টানেল প্রকল্প তার অংশগ্রহণকরা প্রকল্পগুলোর অন্যতম। এ প্রকল্পের আগে তিনি কাতার বিশ্বকাপের প্রধান স্টেডিয়াম - লুসাইল স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। সে প্রকল্পের মহাপ্রকৌশলী ছিলেন লি পাই। প্রকল্প নির্মাণের সময়কাল স্মরণ করে লি পাই বলেন, ‘লুসাইল স্টেডিয়াম নির্মাণকাজে বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের ১১০টি  প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার জনেরও বেশি নির্মাণকর্মী অংশ নিয়েছেন। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে লেগেছে ২১১৮ দিন।  আমার মনে আছে, কাতারের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তার কথা। তিনি আমাদের বলেছিলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান লুসাইল স্টেডিয়ামের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।”

স্বীকৃতির পিছনে রয়েছে ব্যাপক পরিশ্রম। লি পাই’র ব্যাপক পরিশ্রম প্রকল্পগুলোর সকল চীনা ও বিদেশী কর্মীদের চোখে পড়েছে। তিনি সবসময় একাধিক প্রকল্পস্থলের মধ্যে ছুটাছুটি করেন। বিগত বসন্ত উত্সবের সময় তিনি স্বদেশে ফিরে পরিবারের সাথে পুর্নমিলনের সুযোগ ছেড়ে দেন। লি পাই বলেন, “গত এক বছর আমার সবচেয়ে দুঃখের দিক হলো, ফুটবলের একজন পুরানো অনুরাগী হলেও, আমি নিজের নির্মিত স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের কোনো একটি খেলা দেখতে পারিনি। এমনকি ফাইনালের সময়ও আমি অতিরিক্ত ডিউডি করেছি। তবে আমি তৃপ্ত হই এই ভেবে যে, আমার ও আমার সহকর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টায় আরও বেশি উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা রাখছে।”

(রুবি/আলিম)