চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-02-17 19:12:51

চলতি বাণিজ্যের ৫ম পর্বে যা থাকছে:

১. যেভাবে শীর্ষে উঠলো চীনের গভীর সমুদ্র বন্দরগুলো

২. কেনিয়ায় পরিবর্তনের নিয়ামক চীন নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে

৩. চীনের ছোট শহরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্টারবাক্স

 

যেভাবে শীর্ষে উঠলো চীনের গভীর সমুদ্র বন্দরগুলো

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পণ্য ওঠানামা থেকে শুরু করে বন্দর বিষয়ক কার্যক্রমে সারা বিশ্বের মধ্যে একেবারে শীর্ষস্থানে জায়গা করে নিয়েছে চীনের গভীর সমুদ্র বন্দরগুলো। বিশেষ করে রিয়েলটাইমে জাহাজের আসা-যাওয়া, মালামাল ব্যবস্থাপনা ও শনাক্তকরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, জাহাজ ও বন্দরের নিরাপত্তায় ড্রোনের ব্যবহারসহ সমুদ্র পথে সার্বিক ব্যবস্থাপনাকেই সবার আগে গুরুত্ব দেন তারা।

সমুদ্র পরিবহনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক নিরাপত্তা আর ব্যবস্থাপনার। এই দুটি বিষয়েই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে চীনের সমুদ্র বন্দরগুলোর কর্তৃপক্ষ।

চীনের ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট ব্যুরোর তথ্য বলছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোন জাহাজ ও পণ্যের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় অনেকটা নিঁখুতভাবে। ফলে থাকে না কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি কিংবা মান নিয়ে থাকে না কোন প্রশ্ন।

আবার যে কোন দেশের পতাকাবাহী সমুদ্র জাহাজের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোনসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ফলে কোন জাহাজ ঠিক কোন সময়ে বন্দরে নোঙর করবে তার সঠিক সময় জানা যায় আগে থেকেই। ফলে ওই জাহাজের বন্দরে ভেড়া থেকে শুরু করে মালামালা খালাস করা, পরীক্ষা-নীরিক্ষাসহ সব কার্যক্রম তদারকি করা যায় খুবই দ্রুত।

ছেং ছিংসিউ, উপ-পরিচালক, ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট ব্যুরো, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়

“গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও চ্যানেলের উন্নয়ন কাজ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় যাতায়াত ও পরিবহনকে আরো নিরাপদ ও ঝুঁকিসহনশীল করার কাজ করছি আমরা। আমাদের বিশ্বাস এই যোগাযোগ সহজ করার ফলে চীনের সরবরাহ চেইন আরো স্থিতিশীর, সহজ হবে। একইসঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যে উন্মুক্তকরণ নীতি নিয়ে কাজ করছে চীন সরকার সেটার বাস্তবায়নও সহজ হবে। পণ্য উৎপাদন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ের প্রেক্ষাপটে চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এসব কার্যক্রম বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।“

চীনের নেওয়া নানা কার্যক্রমের কারণে দেশটির গভীর সমুদ্র বন্দরগুলো এরইমধ্যে বিশ্বের নানা মাপকাঠিতে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। ফলে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ সমুদ্রবন্দর হিসেবে কুড়িয়েছে সুনাম। চীনের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা পরিসংখ্যান বলছে, চীনের অন্তত ৯০টি গভীর সমুদ্র চ্যানেল অন্তত ১ লাখ টন বা তারচেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য পরিবহনকারী জাহাজের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে সক্ষম।

ছ্যাং ইছিং, উপ-পরিচালক, কাওফেইতিয়ান মেরিন ব্যুরো >

“ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত এবং বর্তমানে জাহাজগুলোর বাস্তবিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আমরা ধারনা করতে পারি কোন জাহাজটি কখন বন্দরে ভিড়বে। জাহাজগুলোর চলাচল বিষয়ক সেবা ও স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও ব্যবহার করি। এসব কাজে আমরা কোন কোন সময় ড্রোন ব্যবহার করি, টহল জাহাজ পাঠাই। বিশেষ করে বড় আকারের জাহাজগুলোর নিরাপদ নোঙর ও চলাচলের জন্য যখন যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার তা গ্রহণ করি।“

চীনের বড় সমুদ্র বন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম তালিয়ান, ছিংতাও, নিংবো-ছৌশান, ছানচিয়াং, মেইছৌয়ান। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এসব বন্দরের সঙ্গে যুক্ত গভীর সমুদ্র চ্যানেলে ৪ লাখ টন পর্যন্ত মালামালবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম।

 

ভিনদেশে চীন:

কেনিয়ায় পরিবর্তনের নিয়ামক চীন নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠেছে রাজধানী নাইরোবিতে নির্মাণ করা এক্সপ্রেসওয়ে। এই হাইওয়েটি নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন। এই একটি মহাসড়কের কল্যাণে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যসহ অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

 

 

একেবারে আধুনিক মহাসড়কে সাঁই সাঁই গতিতে ছুটে চলেছে যানবাহন। এমন নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা গতি এনে দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির বাসিন্দাদের। 

২৭ দশমিক ১ কিলোমিটার নাইরোবি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে নির্মাণ করা এই এক্সপ্রেসওয়েটি ২০২২ সালের মে মাসে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১০ মিলিয়ন ট্রিপ।

স্থানীয়রা বলছেন, কেবল বাণিজ্য অর্থনীতির জন্যই উপকার বয়ে আনেনি এই এক্সপ্রেসওয়ে বরং কেনিয়ার অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে এটি। পাশাপাশি কেনিয়া যে পরিবেশবান্ধব যানবাহন চলাচল উৎসাহিত করার কার্যক্রম শুরু করেছে তার জন্য সহায়ক হয়ে দাড়িয়েছে এই মহাসড়ক।

কেনিয়ার সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প ও বাণিজ্যখাতের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে এই সড়ক। ফলে আর্থ সামাজিক পরিবেশ পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করছে চীনের নির্মাণ করা এক্সপ্রেসওয়ে।

কেনিয়া সরকারের নেওয়া ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী ২০২০ সালে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিশেষ করে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করা, পণ্য পরিবহন আরো সহজ করা এবং সেবার মান বাড়ানে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পাশাপাশি লক্ষ্য ছিলো স্থানীয় পর্যায়ের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং দেশটির পর্যটন খাতকে আরো চাঙ্গা করা।

চীনা কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি এবং মোজা এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছাও ইয়াং জানান, প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার চালক এই এক্সপ্রেসওয়েটি ব্যবহার করছে। তিনি জানান, এই এক্সপ্রেসওয়েটি স্থানীয়দের যাতায়াতের সময়ই কেবল কমায়নি বরং যাতায়াতের খরচও কমিয়েছে।

কেনিয়া ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির মহাপরিচালক কুংগু নুংগু জানান, আবাসন, পর্যটন ও পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার এই হাইওয়েটি নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনের ছোট শহরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্টারবাক্স

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে কার্যক্রম শুরুর মাত্র অল্প কিছু দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পায় পশ্চিমা চেইন কফিশপ স্টারাবাক্স। বিশেষ করে ২০২০ সালে যেখানে তাদের স্টোরের সংখ্যা ছিলো সাড়ে ৬শ’ সেখানে ২০২২ সালে স্টোরের সংখ্যা আরো আড়াইশ’ বেড়ে যায়। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের মধ্যবিত্তের সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এতো দ্রুত সফলতা পায় এই কোম্পানিটি। তাদের প্রত্যাশা, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের আউটলেটের সংখ্যা পৌঁছে যাবে ৩ হাজারে।

চীনের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের লক্ষ্য করে চীনে ব্যবসার প্রসার শুরু করে পশ্চিমা জনপ্রিয় চেইন কফিশপ স্টারবাক্স। বিশেষ করে ছোট ছোট শহরগুলোতে আউটলেট স্থাপন শুরু করে তারা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে চীনে তাদের মোট আউটলেটের সংখ্যা ছিলো ৬৫৪টি। এর মাত্র ৯০ দিনের মাথায় গিয়ে আউটলেটের সংখ্যা বাড়ানো হয় আরো ২২৯টি।

চিয়াংসি ও কুয়াংতোং প্রদেশের বিভিন্ন শহরে স্টারবাক্সের আউটলেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির লক্ষ্যই ছিলো মধ্য ও নিম্নবিত্ত গ্রাহকদের কাছে পৌছে যাওয়া। গেল বছরের সেপ্টম্বরে নেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে চীনজুড়ে অন্তত ৩ হাজার কফিশপ আউটলেট প্রতিষ্ঠা করা। স্টারবাক্স চায়নার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা লিউ ওয়েনচুয়ান জানান, উত্তর আমেরিকার বাইরের কোন দেশে এটাই কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারণ।

চীনের বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্টান আই-রিসার্চ কনসালটেন্সি বলছে, বড় শহরগুলোতে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় ছোট ছোট শহরের সব পর্যায়ের ভোক্তাকে লক্ষ্য করে নীতি সাজিয়েছে এই পশ্চিমা কোম্পানিটি।