গ্রামীণ পুনরুদ্ধারের পথ
2023-02-17 13:42:23

২০২১ সালের বসন্ত উত্সবের আগে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কুই চৌ প্রদেশের বি চিয়ে শহরের হুয়া উ গ্রাম পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি সংখ্যালঘু মিয়াও জাতির গ্রামবাসীর বাসা এবং দারিদ্র্যবিমোচনের কারখানায় যান, মিয়াও জাতির সূচিকর্মের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, গ্রামবাসীরা দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পর অব্যাহতভাবে গ্রামীণ পুনরুদ্ধার জোরদার করতে হবে। মিয়াও জাতির সূচিকর্মসহ জাতীয় ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ভালোভাবে লালন করতে হবে, উন্নত করতে হবে। এখন দুই বছর পার হয়েছে, সেখানের মানুষের জীবন কেমন? গ্রামীণ শিল্পের উন্নতি হয়েছে কি?

 

এখন হুয়া উ গ্রামে ঢুকে দেখা যায়, লাল লন্ঠন ঝুলছে। রান্নার ধোঁয়া থেকে পাওয়া যায় সুখময় সুগন্ধ। গ্রামবাসী চাও ইয়ু শুয়েই পরিবার চাল দিয়ে স্থানীয় মিষ্টি তৈরি করছেন। দুই বছর আগে বসন্ত উত্সবের আগে সি চিন পিং হুয়া উ গ্রামে আসেন। চাও ইয়ু শুয়েই পরিবার অন্য জায়গা থেকে এই গ্রামে স্থানান্তর হয়ে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট সি তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় উত্সবের মিষ্টি খাবার তৈরি করেছেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, সক্রিয়ভাবে গ্রামের শিল্প উন্নয়ন করতে হয়, যাতে লোকজন বাসার সামনে কর্মসংস্থান থেকে আয় করতে পারে।

গেল দুই বছরে হুয়া উ গ্রাম উ নদীতে পর্যটন সম্পদ দিয়ে গ্রামীণ পর্যটন শিল্প উন্নত করেছে, গরু লালন পালন শিল্প উন্নত করেছে। গ্রামটি পর্যটন খাতে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা ইতোমধ্যে হুয়া উ গ্রামের লোকজনের ধনী হওয়ার বিশেষ শিল্পে পরিণত হয়েছে। চাও ইয়ু শুয়েই এবং গ্রামের অন্যের মত নিজের বাসায় হোমস্টে ব্যবসা চালু করেছেন।

চাও ইয়ু শুয়েই বলেন, আমি মন থেকে প্রেসিডেন্ট সিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা এখন বাসা থেকে কাজ করতে পারি, পুরো পরিবার একসাথে থাকতে পারি, জীবন আরো সুন্দর হয়েছে।

শুধু চাও ইয়ু শুয়েই বাসার সামনে চাকরি পান নি, স্থানীয় মিয়াও জাতির সূচিকর্ম দারিদ্র্যবিমোচন কারখানার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইয়াং ওয়েন লি ছোটবেলা থেকে মিয়াও সূচিকর্ম শিখেছেন। বাইরে কয়েক বছর চাকরি করার পর তিনি ও তাঁর স্বামী সব সঞ্চিত টাকা দিয়ে একটি সূচিকর্মের মেশিন কিনেছেন, জন্মস্থানে ফিরে কাজ শুরু করেছেন।

যদিও দুই বছর পার হয়েছে, তবে প্রেসিডেন্ট সি মিয়াও সূচিকর্মের কারখানায় আসার সে দিনের কথা তিনি কখনই ভুলেন নি।

তিনি বলেন, তখন প্রেসিডেন্ট সিকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলাম। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বৈশিষ্ট্যময় মিয়াও জাতির সূচিকর্ম একদিকে ঐতিহ্যবাহী, অন্যদিকে খুব আধুনিক বিশ্বমানের। এটাই সংস্কৃতি ও শিল্প। তখন প্রেসিডেন্ট সি’র কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল, এই জীবনে আমার নেওয়া সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এটি। এখানে কাজ করি এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সূচিকর্মকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করি।

 

এমন আস্থা নিয়ে ইয়াং ওয়েন লি আরো কয়েকজন ডিজাইনার নিয়োগ করে মিয়াও জাতির সূচিকর্মের নতুন পণ্য নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি কুয়াং চৌ শহরের একটি পোশাক কারখানার সঙ্গে সহযোগিতা করেন, মিয়াও সূচিকর্মের উপাদান আধুনিক পোশাকের সঙ্গে মিশ্রিত করেন, কর্মীদের নিয়ে অনলাইনে বিক্রির নতুন উপায় উন্মোচন করেন। দুই বছরের মধ্যে তাঁরা প্রতি বছর এক হাজারেরও বেশি কাজের অর্ডার শেষ করেন। তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ ইউয়ানের বেশি হয়। ৫০ জনেরও বেশি গ্রামীণ মহিলা সূচিকর্মের মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করেন।

ইয়াং ওয়েন লি সাংবাদিককে দেখান যে, এটা হল তাদের গত বছরের তৈরি এক সূচিকর্ম। এতে মিয়াও জাতির ছেলেমেয়ের নাচ-গানের দৃশ্য আছে। আরো আছে সুন্দর বাড়িঘর ও তাদের কারখানা।

ইয়াং আরো বলেন, এই সূচিকর্মের নাম হল: প্রেসিডেন্টের কথা মনে রেখে এগিয়ে যাওয়া।

 

এখন কুই চৌ প্রদেশের অনেকগুলো গ্রামে মিয়াও সূচিকর্ম শিল্পের প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। একদিকে এই শিল্পকে জনপ্রিয় করা যায়, অন্যদিকে অনলাইন লাইভস্ট্রিমিং-এর মাধ্যমে তরুণ ভোক্তাদের আকর্ষণ করা যায়, মিয়াও সূচিকর্ম আরো সমৃদ্ধ হতে পারে, এখানকার পণ্য অন্য প্রদেশ, তথা সারা বিশ্বে বিক্রি করা যেতে পারে।

বসন্ত উত্সবের আগে হুয়া উ গ্রামের নাচের দল ইয়াং-এর কারখানায় কিছু নৃত্যের পোশাক তৈরির অর্ডারও আসে। যাতে দূর থেকে আসা পর্যটকদের স্বাগত জানানো যায়।

হুয়া উ গ্রামের কৃষক নৃত্য দলের প্রধান হ্য লান বলেন, এই পোশাকে লাল রং বাছাই করার কারণ হলো, আগে আমাদের এই গ্রাম অনেক দরিদ্র ছিল। বর্তমান অবস্থা একদম ভিন্ন। প্রত্যেক পরিবার ধনী জীবন কাটাচ্ছে, মনে ভীষণ খুশি ও আনন্দ। তাই বসন্তের সময় নিশ্চয় লাল পোশাক পরতে হয়।

শীতকালের উষ্ণ সূর্যালোকে, মিয়াও জাতির মানুষ সুন্দর পোশাক পরে স্কয়ারে নাচছে। তাঁরা এই যুগে সুখময় জীবনের দিকে এগুচ্ছে।