চীনা পর্যটকদের বিদেশভ্রমণ শুরু; চীনা অর্থনীতির ওপর বেড়েছে বিশ্বের আস্থা
2023-02-15 15:23:06

তিন বছর পর চীনের পর্যটকরা আবার দেশের বাইরে ভ্রমণ শুরু করেছেন। প্রথম দলের পর্যটকরা এখন থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত পৌঁছেছেন। তারা যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই তাদেরকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে স্থানীয়রা।

 

চীনাদের বিদেশভ্রমণ শুরু হওয়া চীনা অর্থনীতির জীবনীশক্তি ও সম্ভাবনার একটি বহিঃপ্রকাশ। এটা বিশ্ব পর্যটন বাজারে প্রাণশক্তির যোগান দেবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। চীনে মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণনীতির সমন্বিত হবার সঙ্গে সঙ্গে  বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও আস্থা যোগাবে চীনা অর্থনীতি—এমনটা মনে করা হচ্ছে।

 

৬ ফেব্রুয়ারি থেকে থাইল্যান্ডসহ ২০টি দেশে গ্রুপ পর্যট্ন ও বিমান টিকিট+হোটেল ব্যবস্থাপনা পুনরায় শুরু হয় চীনে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনে বিদেশে গ্রুপ ভ্রমণ সম্পর্ক অনেক চীনা খোঁজখবর নিয়েছেন এবং অর্ডারের পরিমাণও বাড়ছে। বসন্ত উত্সব থেকে চীনের পর্যটক বাজার পুনরুদ্ধার হবার পর থেকে, বিদেশে যাওয়া চীনাদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।

 

স্থানীয় সময় ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এয়ার চায়নার একটি বিমান জেনিভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পর্যটক থেকে স্থানীয় কর্মী পর্যন্ত সবার মুখে ছিল হাসি। জেনিভা পর্যটন ব্যুরোর বোর্ডের সদস্য ক্লডিয়াস মানব্রেজ চীনা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আসেন। তিনি বলেন, চীনা পর্যটকরা আবার সুইজারল্যান্ডে ফিরে এসেছে দেখে আমরা খুব খুশি হলাম।

 

অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে প্রথম চীনা পর্যটকদলের গাইড থান মিং ইউয়ান সাংবাদিককে জানান, চীনারা বিদেশভ্রমণ শুরু করার পর থেকে সংশ্লিষ্ট পর্যটনপণ্য খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো দেশে যাবার টিকিট অল্প সময়ের মধ্যে সব বুকিং  হয়ে যায়।

 

আবহাওয়া ভাল এবং ভিসা পাওয়া সহজ—এমন দেশে যেতে চীনারা বেশি আগ্রহী। যেমন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। তা ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোও তাদের পছন্দ।

 

শাংহাই থেকে আসা একটি গ্রুপ পর্যটকদল ৭ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যায়। ট্রাভেল এজেন্সির প্রেসিডেন্‌ট জানান, কাতার বিশ্ব কাপের পর অনেক চীনা মানুষের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যাবার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটন-বাজারের সম্ভাবনা আছে।

 

চীনের বিখ্যাত একটি  পর্যটন ওয়াবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বসন্ত উত্সবের পর  বিদেশে যাওয়া  টিকিট ও হোটেলের অর্ডারের পরিমাণ ৩ গুণের বেশি বেড়েছে এবং জরিপে ৯০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর এক বছরের মধ্যে বিদেশে ভ্রমণ করার পরিকল্পনা আছে এবং ২৫ শতাংশ পর্যটক ৬ মাসের মধ্যে বিদেশে যেতে চান। অনুমান অনুযায়ী, চলতি বছর চীনাদের বিদেশভ্রমণ পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

 

চীনা পর্যটকদের অনেক দেশ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। তাদের মতে চীনা পর্যটকরা হচ্ছেন বিশ্ব পর্যটন শিল্প উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং চীনা পর্যটকদের ফিরে আসা মানে পর্যটন বাজারের প্রতি অন্যদের আস্থাও বৃদ্ধি পাওয়া।

 

পর্যটন থাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং দেশের জিডিপির ৫ ভাগের এক ভাগ পর্যটন থেকে আসে। চীন থাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক-উত্স দেশ। ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে যাওয়া ৪ কোটি পর্যটকের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ চীনা। থাইল্যান্ডের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চীনা পর্যটকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুমান অনুযায়ী, চলতি বছর থাইল্যান্ডে আসবে ৭০ লাখেরও বেশি চীনা পর্যটক।

 

৭ ফেব্রুয়ারি ১২৫ জন চীনা পর্যটক বহনকারী একটি বিমান কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় গোটা বিমানটিকেই অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে, স্থানীয় নাচ-গানে পর্যটকদের স্বাগত জানায় স্থানীয়রা। কম্বোডিয়ার পর্যটনমন্ত্রী নিজে চীনা পর্যটকদেরকে ঐতিহ্যবাহী কাপড় ও মালা উপহার দেন।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ফেরারি ওয়ার্ল্ড থিম পার্কে চলে এসেছে মহামারীর পর প্রথম চীনা পর্যটক দল। ৬০ জন পর্যটককে সেখানে রীতিমতো লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পার্কটি তাদের টিকিট ফি-ও মওকুফ করে দেয়।

 

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘আসিয়ান পর্যটন ফোরাম, ২০২৩’-এ জোটের দেশগুলো চীনা পর্যটকদের ফিরে আসার প্রত্যাশা প্রকাশ করে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিদেশে যাওয়া চীনা পর্যটকের সংখ্যা মহামারীর আগের ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশে পৌঁছাবে। ২০১৯ সালে বৃহত্তম বিদেশ পর্যটন বাজার হিসেবে চীনা পর্যটকের বিদেশ ভ্রমণ পুনরুদ্ধার এশিয়া প্যাসিফিক, এমনকি বিশ্বের পর্যটন শিল্প পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখবে।

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনীতি আউটলুক প্রতিবেদনে চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪.৪ থেকে ৫.২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। চীনে ব্যক্তিগত ভোগ দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং চলতি ও আগামী বছরে চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য সহায়ক হবে। বিশেষ করে, পরিষেবা ক্ষেত্রে এমন প্রবণতা আরও স্পষ্ট হবে। (শিশির/আলিম/রুবি)