ফেব্রুয়ারি ১৫: বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখ ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। তখন মানুষের অনেক কষ্ট ও বেদনা হয়। বিভিন্ন স্থানে অনেক মৃত প্রাণীও দেখা যায়। এই ভয়াবহ অবস্থা কোনো চলচ্চিত্রের নয়, বরং সত্যিকারের। যা মার্কিন ওহিও রাজ্যের ইস্ট প্যালেস্টাইন ঘটনা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট প্যালেস্টাইন অঞ্চলে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এরপর বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। মার্কিন তথ্য মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই পণ্যবাহী ট্রেনের ১০টি বগিতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছিল। এর মধ্যে ৫টি বগিতে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি হয়। স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৬ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধান্ত নেয়, বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর তারা কয়েক বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের অধিবাসীদের জরুরিভিত্তিতে সরিয়ে দেয়। তিন দিন পর স্থানীয় সরকার অধিবাসীদেরকে জানায়, তারা বাসস্থানে ফিরে যেতে পারেন। তারা ঘোষণা করেন যে, এ ঘটনায় কোনো বায়ুদূষণ হয় নি। তবে, ১৩ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়াবহ সেসব ঘটনার ছবি দেখা যায়। তখন সবাই বুঝতে পারে যে, এবারের বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণের ঘটনা কতটা গুরুতর ছিল।
বর্তমানে ঘরে ফিরে যাওয়া অধিবাসীদের কিছু শারীরিক উপসর্গও দেখা দিয়েছে। সেখানকার প্রাণীর মধ্যেও কফ, ডায়রিয়াসহ একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। বাসিন্দারা জানতে চান: এবারের ট্রেন লাইনচ্যুতিতে আসলে পরিবেশে কেমন ক্ষয়ক্ষতি ও দূষণ ঘটেছে! মার্কিন সরকার ও সংশ্লিষ্ট রেলপথ কোম্পানি কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে? এখন পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক আচরণ ও ব্যবস্থা মানুষের মনকষ্টের কারণ হয়েছে।
প্রথমত, সংশ্লিষ্ট রেল কোম্পানি এনএসসির’ প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, দুর্ঘটনা-কবলিত ট্রেনে ভিনাইল ক্লোরাইড, ২-বুটোক্সিথানল, আইসোকটাইল অ্যাক্রিলেট এবং মিথাইলপ্রোপেন পরিবহন করা হয়েছে। তবে মার্কিন সরকার এখনও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের সঠিক পরিমাণ প্রকাশ করেনি। ওহিও রাজ্যের বিশেষজ্ঞ সিল কাগিয়ানো জানান, এবারের দুর্ঘটনায় যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে তার পরিমাণ ছিল ছোট একটি শহর ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। তিনি আরো জানান, ৫ থেকে ২০ বছর পর, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেক ক্যান্সারের রোগী দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এরপর মার্কিন তথ্যমাধ্যম এ ঘটনার সংবাদ প্রচারে অদ্ভুত আচরণ করেছে। ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনার সময়, মার্কিন তথ্যমাধ্যমে শুধু বলা হয় “বিশেষজ্ঞরা এখন তদন্ত করার চেষ্টা করছেন”। মার্কিনীদের জীবনের সুস্থতা ও পরিবেশ নিরাপত্তা বড় হুমকির সম্মুখীন কেন? তারা ঘটনার সঠিক অবস্থা জানতে পারবে কি?
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিগ এক অনুষ্ঠানে দেশের নির্মাণরত অবকাঠামো প্রকল্পের অনেক প্রশংসা করেন। তবে এবারের ট্রেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে কিছুই বলেন নি তিনি। কিছু মার্কিনী মন্তব্য করে যে, “এমন কর্তৃপক্ষের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের টিকে থাকা একটি অলৌকিক ঘটনা!”
সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানবাধিকারকে সম্মান করা এবং জনগণের প্রাণ রক্ষা করা। তবে, মার্কিন রাজনীতিক ও তাদের পিছনের স্বার্থান্বেষী মহল নিজের প্রয়োজনে গণস্বার্থের ক্ষতি করে। সামনের অজানা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে বাসস্থান থেকে বের হতে হচ্ছে। আসলে কে সাধারণ মার্কিনীদের জীবন রক্ষা করবে? কে তাদের সুস্থতার রক্ষক হবে? মার্কিন রাজনীতিকরা মুখে মানবাধিকারের কথা বললেও তাদেরকে এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া উচিত।
(আকাশ/তৌহিদ)