গত রোববার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত করে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মাত্র ১০০ কিলোমিটার উত্তরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
বড় ধরনের এই ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়াসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলো পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। দুই দেশে এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
আমাদের দেশ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস ভিন্ন হলেও বড় এ দুর্যোগের মুখে মানুষ হিসেবে ভূমিকম্প-কবলিত এলাকার মানুষের ব্যথা, অসহায়ত্ব ও দুঃখ অনুভব করতে পারি আমরা। হতাহতদের জন্য রইলো গভীর সমবেদনা। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে, একপক্ষ সমস্যায় পড়লে, সব পক্ষ সমর্থন দেয় (One side is in trouble, all sides support)। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সমাজকে শোকাহত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে ৮২ সদস্যের একটি চীনা উদ্ধারকারী দল বিশেষ বিমানযোগে ৮০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তুরস্কে পৌঁছায়। তারপর উদ্ধার অভিযান চালাতে দুর্যোগ-কবলিত অঞ্চল হাতায় (Hatay) এগিয়ে যান। তা ছাড়া, ১০টির বেশি চীনা বেসরকারি উদ্ধারকারী দল তুরস্কে পৌঁছে গেছে। ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্প হলে চীন সবচেয়ে বেশি বেসরকারি উদ্ধারকর্মী সেখানে পাঠায়। তা ছাড়া, তুরস্ক ও সিরিয়াকে যথাক্রমে ৪ কোটি ও ৩ কোটি ইউয়ান মূল্যের প্রথম দফা সহায়তা সামগ্রী দিয়েছে চীন।
একই দিন তুরস্কের পথে ঢাকা থেকে রওনা দেয় বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্ধারকারী দল। আদিয়ামান শহরে পৌঁছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ শুরু করে তারা। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ১৪জন ক্রুসহ সর্বমোট ৬১ জনের একটি দল প্রয়োজনীয় সংখ্যক তাঁবু, কম্বল ও ওষুধসহ বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমানে করে তুরস্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। তারপর ১০ তারিখে ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের উদ্ধারকারী দল সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা বিমানযাত্রা শেষে তুরস্কের আদানা এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। পাশাপাশি, ১৯জনের গঠিত একটি উদ্ধারকারী দলও সিরিয়ায় পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
তুরস্ক সরকার জানায় ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছে দেশটি। এক লাখ দশ হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছে। সামগ্রী পাঠাতে ১৬০টি বিমান ও ২২টি জাহাজ গেছে দেশটিতে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নির্দয়; তবে, মানুষের রয়েছে দয়ালু হৃদয়। আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্ধারকারী বাহিনী একে অপরকে সাহায্য করছে এবং সবার হৃদয় তুর্কি জনগণের হৃদয়কে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করেছে। বাস্তব কাজের মাধ্যমে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনের দায়িত্ব পালন করছে। যখনই আমরা জীবনের অলৌকিক ঘটনা দেখি, এবং সোনালি উদ্ধার সময়ের পরেও আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার হবার খবর পাই, তখন দুর্যোগের এলাকার মানুষের মতো আমাদেরও প্রচণ্ড আনন্দ হয়। কারণ জীবনের এই অলৌকিক ঘটনা মানব সংহতির চেতনা এবং মানবতাবাদের চিহ্ন। এটি মানবজাতির বিজয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্বের নানা দেশের মানুষকে একসাথে মোকাবিলা করতে হবে। যেমন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, আমরা পৃথিবী নামক গ্রামে বাস করি এবং অভিন্ন লক্ষ্যের একটি কমিউনিটি। কেবল ঐক্যবদ্ধ থাকলে এশিয়া ও বিশ্বের উন্নয়ন এগিয়ে নিতে পারব।
যদিও পৃথিবীতে নানা দ্বন্দ্ব, মতভেদ ও সংঘাত রয়েছে, তবে এখনও মানুষ দৃঢ়ভাবে একত্রে দাঁড়িয়ে আছে। যতদিন আমরা একসাথে নিঃশ্বাস নেব, অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করব, ততদিন আমাদের দারুণ ঘটনা এবং একটি ভাল ভবিষ্যত তৈরি করার ক্ষমতা থাকবে।
(শিশির/তৌহিদ/রুবি)