নতুন সেমিস্টার শুরু, নতুন কি কি রয়েছে?
2023-02-13 16:59:02

প্রসঙ্গ: চীনে নভেল করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধ-নীতি সুবিন্যাসের পর ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে। এ দিন বেইজিংয়ের শি চিন শান অঞ্চলের এক প্রাথমিক স্কুলে গেটে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে লেখাপড়া করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে তাদের দেখা হয় নি। নতুন সেমিস্টারে স্কুলে যেতে পেরে তাঁদের মুখে হাসি ও আনন্দ ঝলমল করছে। স্কুলের হেডমাস্টরসহ বেশ কিছু শিক্ষক হাসিমুখে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায়। স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন।

 

নতুন সেমিস্টারে স্কুলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কি কি নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হবে? পিটি ক্লাস কিভাবে নেওয়া হবে এবং করোনায় আক্রান্ত হয় নি, যারা কিভাবে রক্ষা পাবে? সেসব প্রশ্নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। করোনা মহামারি প্রতিরোধ-নীতি শিথিল হওয়ার পর এই প্রথম নতুন সেমিস্টারের স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করতে চীনের বিভিন্ন পক্ষ যৌথ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কর্মদল ‘নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মহামারি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত অপারেশন নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেছে। তাতে বিস্তারিত নীতিবিধি আখ্যায়িত করা হয়।

 

নতুন সেমিস্টারে স্কুলে করোনা প্রতিরোধে নতুন কি ঘটেছে?

সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ-বিষয়ক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, নতুন সেমিস্টারের এক সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে প্রতিদিন এবং স্কুলে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিদিন শরীরের তাপমাত্রা মাপার দাবি জানানো হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। তাতে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশের সময় তাপমাত্রা মাপতে হবে। যদি তাদের জ্বর টের পাওয়া যায়, তাহলে তাদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হবে। এখন স্কুলে প্রবেশের জন্য নিউক্লিক এসিড টেস্ট রিপোর্ট আর লাগছে না। তবে, বাইরে থেকে কেউ স্কুলে ঢুকলে, টেস্ট রিপোর্ট লাগবে।

 

পিটি ক্লাস কিভাবে নেওয়া হবে?

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের যৌথ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কর্মদলের প্রকাশিত ‘নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মহামারি প্রতিরোধ-সংক্রান্ত অপারেশন নির্দেশিকা’ অনুযায়ী, করোনা থেকে পুনরুদ্ধার হওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যায়ামে অংশ নিতে বাধ্য করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে বেইজিংয়ের ইয়ো আন হাসপাতালের সংক্রামক রোগের প্রধান চিকিত্সক লি থোং চেং বলেন, চিকিত্সার দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, প্রত্যেকের পুনরুদ্ধারে আলাদা সময় লাগে। তাই আমরা সবাইকে নিজের শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখার পরামর্শ দিই।

ব্যায়াম লাগবে, তবে ক্লাস শুরুর প্রথম দিকে আস্তে আস্তে নিজের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ব্যায়াম শুরু করা উচিত। পিটি ক্লাসে অংশগ্রহণ বাধ্য করা যাবে না।

 

নিখিল চীনে মহামারির প্রভাব কেটে গেছে। অনেকে আক্রান্ত হওয়ার পর ইমিউনিটি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ইমিউনিটি তিন থেকে ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। বিশেষ করে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের তা ৬ মাস স্থায়ী থাকতে পারে। কয়েক মাস আগে সবাই এন৯৫ বা কেএন ৯৫সহ নানা উচ্চ পর্যায়ের প্রতিরোধক মাস্ক পরতেন। এখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ মাস্ক পরতে পারবে। উল্লেখ্য যে, মহামারির ‘পিক সময়’ কেটে যাওয়ার পরও কিছু রোগী সনাক্ত হতে পারে। তাই, স্কুল যাওয়া ও বাড়ি ফেরার পথে গণপরিবহন করা বা মানুষ সমাগম-স্থানে ভালোভাবে মাস্ক পরতে হবে। যারা করোনায় আক্রান্ত হয় নি, তাদের জন্য মাস্ক পরা হবে নিজেকে রক্ষা করার কার্যকর পদ্ধতি।

 

 নতুন সেমিস্টারে মানসিক অবস্থার ওপর বেশ গুরুত্বারোপ করছে নানা স্থানের শিক্ষা বিভাগ ও স্কুল। গত সেমিস্টারে দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বন্দী হয়ে অনলাইনে লেখাপড়া করতে হয়েছিল।  এরপরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়। তারপর সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা দেওয়া হয় এবং লম্বা শীতকালীন ছুটি ছিল। এ প্রেক্ষাপটে স্কুলে পুনরায় ফিরে যাওয়া এবং স্কুলের জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই, কিছু কিছু স্কুল ‘নতুন সেমিস্টারে মানসিক বিন্যাসের নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেছে। কিছু কিছু স্কুল স্কুলে যাওয়ার আগে অনলাইনে ওয়ার্ম আপ ক্লাসও নিয়েছে। কিছু কিছু স্কুল পূর্বে শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মা’র সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেয়। কিছু কিছু স্কুল বৈচিত্র্যময় প্রথম ক্লাসের মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি অনুপ্রেরণা দেয়।

 

 সম্প্রতি একটি ভিডিও ওয়েবসাইটে খুব প্রচার পায়। তাতে দেখা যায়, নতুন সেমিস্টারের প্রথম দিন, হ্য নান প্রদেশের জেং চৌ শহরের একটি মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষক ক্লাসরুমের গেটে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলিঙ্গন করেন। কিছু শিক্ষার্থী আনন্দের সঙ্গে দৌড়ে শিক্ষকের কোলে ওঠে। যা দারুণ মনোমুগ্ধকর দেখায়। এটি দীর্ঘদিন পর আবার দেখা হওয়া এবং করোনার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার আনন্দ। নতুন বছর নতুন সেমিস্টারে ব্যাপক শিক্ষার্থী সুন্দর সময় পাবে বলে আশা করছি।

(রুবি/তৌহিদ)