সি চিন পিংকে চেকের দেওয়া তিন জোড়া চামড়ার জুতার গল্প
2023-02-10 10:27:39

তিন জোড়া চামড়ার জুতা—সেগুলো চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট  মিলোস জেমান ২০১৬ সালে ২৮ মার্চে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। উপহার দেওয়ার সময় মিলোস জেমান বলেন, ‘এটি একটি মনোমুগ্ধকর উপহার। কারণ আমরা জেনেছি যে, আপনার বাবা এক সময় আপনাকে এক জোড়া চেকের জুতা দিয়েছিলেন। আমরা তিন জোড়া দিচ্ছি”।

 

এ রাষ্ট্রীয় উপহার তৈরি করতে চেক সরকার আগের কোম্পানির কাছে বিশেষ অর্ডার দেয়। সে সময়ের আকার অনুযায়ী তৈরি করা হয় এ উপহার। উপহারটি যেন সময় অতিক্রম করে প্রেসিডেন্ট সি’র কাছে পৌঁছে গেছে। সি চিন পিং জুতাগুলো দেখে আবেগী হয়ে বলেন, “শৈশবে আপনাদের তৈরি জুতা পরলে নিজেকে অসাধারণ বলে মনে করতাম”।

চীন ও চেক পরস্পরের পুরানো বন্ধু। চৌ এন লাই, চু তে ও সি ছোং সুনসহ চীনের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ চেক সফর করেছিলেন। গত শতাব্দীর ৫০ দশকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার সময় চেক চীনের কাছে ৬৭০টিরও বেশি সরঞ্জাম উপহার দিয়েছিল এবং ৬৬৬৬ হেক্টর আয়তনে ‘চীন-চেক মৈত্রী খামার’ প্রতিষ্ঠা করেছে। বেইজিং ও শাংহাইসহ চেকের স্কোডা ব্র্যান্ডের বাস যাতায়াত করে। সে সময় চেকের জুতাও চীনে এবং চীনের তৈরি ‘মৈত্রী’ ব্র্যান্ডের সোয়েটার চেকে প্রচলিত ছিল। স্থানীয়রা বলত: আমরা চীন-চেক মৈত্রী গায়ে পরেছি।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একটি গল্প বলেছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার সময় চেকের বিখ্যাত চিত্রকর চীনে এসে চীনের উ চুও রেন ও ছি পাই শিসহ নানা চিত্রকরের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। চেক ফেরার পর তিনি ‘বানর রাজা’ নামক বেশ কিছু চিত্র তৈরি করেন, যাতে চীনের বিখ্যাত চরিত্র বানর রাজার ৭৩ রূপের পরিচিতি রয়েছে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে প্রাগ সফরের সময় চেক প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবন রানী মনোরে’র কাপে ‘বানর রাজার’ ছবি বসানো হয়। দেয়ালে রয়েছে চীনা বিখ্যাত চিত্রকর ছি পাই শি’র চিত্র। এটি চীন-চেক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রথম চেক সফর। সি চিন পিং প্রথম রাষ্ট্রীয় নেতা, যাকে চেকের প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবন পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৃষ্টিপাতের পর রানী মনোরে সি চিন পিং ও জেমান চীন থেকে আসা গিংকো গাছ রোপণ করেন। সি চিন পিং জেমানকে বলেন, গিংকো গাছ উত্তরাঞ্চলের ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং দীর্ঘায়ু হয়। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে: প্রবীণরা গাছ চাষ করে, উত্তর প্রজন্ম তার প্রশান্তি উপভোগ করে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ চীন-চেক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ দিয়েছে। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে প্রথম চীনা মেডিসিন কেন্দ্র চেকে প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের ‘সিল্ক ও সিল্ক রোড’ প্রদর্শনী প্রাগে উদ্বোধন করা হয়। চীন-চেক চলচ্চিত্র সহযোগিতাও শুরু হয়। বেইজিং, শাংহাই, ছেং তু ও সি আনসহ শহর চারটি প্রাগের সঙ্গে ৪টি সরাসরি বিমান লাইন চালু করেছে। দু’দেশ গাড়ি, বিমান, জৈব, পরমাণু বিদ্যুত এবং ব্যাংকিংসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযোগিতা জোরদার করেছে। বর্তমানে চীন চেক প্রজাতন্ত্রের বিশ্বের দ্বিতীয় এবং ইইউ’র বাইরে প্রথম বৃহত্তম অংশীদার। চেক চীনের প্রায় সব প্রদেশ ও শহরের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে।

২০১৪ সালের অক্টোবরে চীন সফরের সময় সি চিন পিংকে একটি আপেল গাছ উপহার দেন জেমান। এ গাছ চীনে রোপন করার পর ফুল ফুটবে এবং ফল ধরবে বলে তিনি আশা করেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে যখন জেমান আবারও চীন সফরে আসেন। সি চিন পিং সে আপেল গাছ বড় হওয়ার ছবি তাঁকে দেখান। এ তাত্পর্যপূর্ণ আপেল গাছটির ভালোমতো বেড়ে ওঠা চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফলপ্রসূ সহযোগিতার প্রতীক।