সিয়া ইয়াং গ্রামের বয়স্কদের জীবন
2023-02-10 17:24:28

চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের সিয়া মেন শহরের সিয়া ইয়াং কমিউনিটির বৃদ্ধ কেন্দ্রে ঢুকে দেখতে পারেন ৭১ বছর বয়সী বৃদ্ধ ইয়াং ইয়া ছুনকে। তিনি সবসময় বয়স্ক বন্ধুর সঙ্গে এখানে দাবা খেলেন। আর এই সময়টি তার জন্য আনন্দময়। এই কমিউনিটিতে বার্ধক্যগ্রস্ত মানুষের হার প্রায় ২০ শতাংশ। এখন আনন্দময় বার্ধক্যজীবন উপভোগ করতে পারেন স্থানীয় বৃদ্ধরা।

সিয়া ইয়াং কমিউনিটি আগে ‘ছোট জেলে গ্রাম’ ছিল। অধিকাংশ গ্রামবাসী সমুদ্র-নির্ভর জীবনযাপন করত। শহরায়নের উন্নয়নের চাহিদা মেটানোর কারণে ২০০৫ সালে সিয়া ইয়াং গ্রামে রূপান্তর করা হয়। চার শতাধিক কৃষক এই কমিউনিটির বাসিন্দা। নতুন কমিউনিটিতে থাকা বয়স্কদের জীবন কেমন?

 

বয়স্কদের আনন্দময় বার্ধক্য জীবন বাস্তবায়ন করতে চাইলে প্রথমে বয়স্কদের চিন্তামুক্ত জীবন নিশ্চিত করতে হয়। ইয়াং ইয়া ছুন সাংবাদিককে জানান, তিনি ও তাঁর স্বামীর প্রতি মাসে অবসর ভাতা আছে, এ ছাড়া তাঁদের অতিরিক্ত বাড়িঘর অন্যকে ভাড়া দিয়ে আরো আয় হয়। বর্তমানে দম্পতির জীবন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তিনি আরো জানান, স্থিতিশীল আয় ছাড়া অসুস্থ হলে সংশ্লিষ্ট চিকিত্সা বীমার সুবিধা উপভোগ করতে পারেন তাঁরা।

 

খাওয়া-দাওয়া, পোশাক ও জীবনযাপনের কোনো চিন্তা নেই। আনন্দের সঙ্গে বার্ধক্যজীবন কাটাতে পারছেন। কমিউনিটির বাসিন্দা, ৬৮ বছর বয়সী ইয়াং মেই ইং প্রতিদিন কমিউনিটি কার্যালয়ের সামনের স্কোয়ারে বয়স্ক বন্ধুদের সঙ্গে স্কোয়ার ডান্সে যোগ দেন। কমিউনিটির ১৬০০ বর্গমিটার জায়গাকে সিয়া ইয়াং কমিউনিটির বয়স্ক একটিভিটি সেন্টার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বয়স্করা বিভিন্ন ধরনের বল ও দাবা খেলতে পারেন, বৃদ্ধরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন, তরুণ সময়ে যে জ্ঞান শেখার সুযোগ পান নি, এখন তার সুযোগ রয়েছে তাঁদের জন্য। এভাবে বার্ধক্য জীবনও আরো সমৃদ্ধ হয়।

 

বার্ধক্য জীবন আনন্দময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই জীবন আরো তাত্পর্যপূর্ণ হতে পারে। বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক জীবন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে সিয়া ইয়াং কমিউনিটির বয়স্করা সক্রিয়ভাবে সমাজের জন্য কাজ করেন। তাঁরা কমিউনিটিতে কিছু ভূমিকা রাখেন। ইয়াং জি সিয়াং আগে গ্রামের বয়স্ক সমিতির প্রধান ছিলেন। যদিও এখন তাঁর বয়স ৮৫ বছর, তবুও তিনি কমিউনিটিতে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু কাজ করছেন। কোনো পরিবারের আত্মীয়দের মধ্যে ঝগড়া হলে, কোনো মালিকের বাড়িঘরের ভাড়াটিয়া ব্যক্তির সঙ্গে ঝামেলা হলে, তিনি সবসময় তাতে মধ্যস্থতা করেন। তিনি বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো না, খুব ধীরে হাঁটি। তবে, সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করে, আমার মতো প্রবীণকে দেখে তরুণ মানুষের রাগ দূর হয়ে যায়।

 

কমিউনিটির অন্য বয়স্কদের তুলনায় ইয়াং ইয়া ছুনের বয়স অনেক বেশি। তাঁর ৭১ বছর বয়স হলেও তিনি সবসময় নিজেকে তরুণ মানুষ মনে করেন। পরিবারের প্রবীণের ভূমিকা ছাড়া, তিনি শিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসা পথের ‘পুলিশ’ হন। তিনি একই সঙ্গে কমিউনিটিতে সবার মতামত সংগ্রহ করার স্বেচ্ছাসেবকও বটে। তাঁর চোখে, কমিউনিটির জন্য করা প্রতিটি ছোট কাজ তরুণদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।

 

ঠিক কমিউনিটির বয়স্ক বন্ধুর সমর্থনে, সিয়া ইয়াং কমিউনিটিতে, টহল দল, নারী সাহায্য দল, প্রতিবেশীদের সম্পর্কের মধ্যস্থতাকারী দল এবং স্বেচ্ছাসেবক সেবা দল গঠিত হয়েছে।

সিয়া ইয়াং কমিউনিটির প্রধান লিন হ্য থুং সাংবাদিককে জানান, পরবর্তীতে তাঁরা আরো বেশি চেষ্টা করবেন, যাতে সিয়া ইয়াং কমিউনিটির বৃদ্ধদের জীবন আরো সুন্দর হয়।  

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)