এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাবেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা তিব্বত নিয়ে আলোচনা করব।
**রূপরেখা
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত নাম ‘জাং’। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত অঞ্চলে এর অবস্থান। এর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ভারত, নেপাল ও ভুটান, এর পূর্ব দিকে সিছুয়ান প্রদেশের ‘চিন শা’ নদী, এর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ইয়ুন নান ও মিয়ানমার এবং এর উত্তর দিকে ছিংহাই ও সিনচিয়াং। গোটা অঞ্চলের মোট আয়তন ১২ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৩০ লাখ ২০ হাজার। এখানে তিব্বতি, হান, মেনপা, লুওপা এবং হুইসহ অনেক জাতির বাস। স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ২টি প্রিফেকচার স্তরের শহর, ৫টি অঞ্চল, ৭২টি জেলা এবং ২টি শহর এলাকা রয়েছে। তিব্বতের রাজধানী লাসা। ছিং রাজবংশের সময় ‘ছিন জাং’, ‘হৌ জাং’, ‘কামু’ এবং ‘আলি’—এই চারটি রাজ্য নিয়ে গঠিত হয় তিব্বত। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়।
** টপোগ্রাফি
বিশ্বের সর্বোচ্চ মালভূমিতে এর অবস্থান। তিব্বত ‘বিশ্বের ছাদ’ নামে সুপরিচিত। টপোগ্রাফি অনুযায়ী চারটি প্রাকৃতিক এলাকায় বিভক্ত এটি: ‘জাং পেই মালভূমি’, ‘জাং নান মালভূমি’, ‘জাং তুং তিন নদী ক্যানিয়ন’ এবং ‘হিমালয়’। এর গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ মিটারেরও বেশি। প্রধান প্রধান পর্বত হচ্ছে হিমালয়, খুনলুন পর্বত, থাংকুলা পর্বত, কাংতিসি পর্বত এবং নিয়ানছিংথাংকুলা পর্বত। এর মধ্যে হিমালয়ের ছুমোলোংমা শৃঙ্গের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৮৪৪.৪৩ মিটার। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শিখর। এর আরেকটি নাম মাউন্ট এভারেস্ট।
তিব্বতের প্রধান নদী হচ্ছে লানছাং নদী ও নু নদী, প্রভৃতি। এর মধ্যে দি ইয়ারলুং জাংবো নদীর ( the Yarlung Zangbo River) দৈর্ঘ্য ১৭০০ কিলোমিটার। এটি তিব্বতের দীর্ঘতম নদী।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ১৫০০টিরও বেশি হ্রদ আছে, যেগুলোর মোট আয়তন ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। চীনে সবচেয়ে বেশি হ্রদ আছে তিব্বতে। এখানকার বড় হ্রদগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নামুছুও’, ‘স্যলিনছুও’, ‘চারিনানমুছুও’, ‘পাকুংছুও’ এবং ‘ইয়াংচাওইুংছুও’, প্রভৃতি।
**জলবায়ু
তিব্বতে মালভূমির জলবায়ু। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাপমাত্রা নিম্ন, বৃষ্টিপাত কম, পাতলা বায়ু, পর্যাপ্ত রোদ এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান বেশি। এখানে চারটি প্রাকৃতিক এলাকা আছে। প্রথমত, ‘জাং পেই অঞ্চল’, এখানে জলবায়ু শুকনো এবং ঠাণ্ডা, গড় তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে, জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হয় না, গ্রীষ্মকালে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি বেশি, শীতকাল ও বসন্তকালে প্রবল বাতাস আছে, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার। দ্বিতীয়ত, লাসা অঞ্চল। এখানে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র । জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানকার বর্ষাকাল, নদী উপত্যকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০০ মিলিমিটারের কাছাকাছি। তৃতীয়ত, ‘জাংপেই অঞ্চল’। এখানে জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, মেঘ ও বৃষ্টি বেশি, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৮০ মিলিমিটারের কাছাকাছি, শীতকাল ও বসন্তকালে তুষার পড়ে বেশি। চতুর্থত, ‘জাংনান অঞ্চল’। ভারত মহাসাগরের স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র, জুলাই মাসের গড় তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০০০ মিলিমিটারেরও বেশি। একে ‘তিব্বতের চিয়াংনান’ নামে ডাকা হয়। গোটা অঞ্চলে সূর্যালোক-ঘন্টার সংখ্যা ৩১০০ থেকে ৩৪০০-এর মধ্যে, এখানকার সূর্যালোক সময় সবচেয়ে লম্বা।
সুপ্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)