ফেব্রুয়ারি ৮: চীনের আমদানি ও রপ্তানির মোট মূল্য প্রথমবারের মতো ৪০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় তথ্য-কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২০২২ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল ৪২.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। এতে স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্নমুখী ঝুঁকি বাড়লেও, চীনা বৈদেশিক বাণিজ্যের দৃঢ় ভিত্তি আছে। চীনা অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধারে এ ভিত্তি সহায়ক।
“২০২২ সালে চীনের আমদানি ও রপ্তানির মোট মূল্য ছিল ৪২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা একটি নতুন রেকর্ড। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ার পাশাপাশি, অবকাঠামোও অব্যাহতভাবে সুবিন্যস্ত হচ্ছে। এতে বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে, যার মধ্যে রপ্তানির অনুপাত ৩.২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৮ শতাংশে। পাশাপাশি, বহুপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় বেশ ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আরসিইপি’র বাণিজ্যিক সহযোগীদের কাছে রপ্তানির পরিমাণ ১৭.৫ শতাংশ বেড়েছে। আর ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ ৩২.৯ শতাংশ ছিল, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩.২ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।”
বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা কেবল যে চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের সুনিশ্চয়তা তা নয়; বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও কল্যাণকর।
“একদিকে, চীনা অর্থনীতির সামষ্টিক পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বৈদেশিক বাণিজ্য। ২০২২ সালে রপ্তানির মোট পরিমাণ জিডিপি-তে অবদান রাখে ১৭.১ শতাংশ। এর সাহায্যে জিডিপি ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। দেশে বৈদেশিক বাণিজ্যে জড়িত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩১ হাজার বেশি। এতে চীনে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। অন্যদিকে, বৈশ্বিক আর্থ-বাণিজ্যিক পরিবেশ দুর্বল হওয়ার প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী ব্যবস্থা নিয়েছে চীন উত্পাদন ও রপ্তানি স্থিতিশীল করেছে। এভাবেই বৈশ্বিক শিল্প-চেইনের সুষ্ঠু সরবরাহ সুনিশ্চিত হয়েছে। সেই সঙ্গে, আমদানির ক্ষেত্রও সম্প্রসারণ করেছে চীন। গোটা বছরে চীন আমদানি করেছে ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য, যা বৈশ্বিক আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়নে চীনের অবদান।”
বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্বলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক নীতি হচ্ছে ২০২৩ সালে চীনা বাণিজ্যের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সেই সঙ্গে, বিভিন্ন সংঘর্ষও বৈশ্বিক শিল্প-চেইনের বড় ক্ষতি করবে। তবে, চীনের অভ্যন্তরীণ বড় বাজার এবং শিল্প-চেইনের সুবিধা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে চীনের লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
“বৈশ্বিক বাধা অতিক্রম করতে চীন পুরোপুরি প্রস্তুত। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য মেলা সার্বিকভাবে অফলাইনে আয়োজন করতে হবে। এগুলোর মধ্যে থাকবে আমদানি মেলা, কুয়াংচৌ বাণিজ্য মেলা এবং চীনের আন্তর্জাতিক উচ্চ প্রযুক্তি ফলাফল বাণিজ্য মেলাসহ ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মেলা। ডিজিটাইজিংয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যের সুপ্তশক্তি অনুসন্ধান করতে হবে, যাতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের বৈদেশিক বাণিজ্যে নিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিতে ভালো করতে পারে। সেই সাথে বিদেশে চীনা কনসুলেট জেনারেলের আর্থ বাণিজ্যিক সংস্থার ভূমিকা পালন করতে হবে, বিদেশে বাণিজ্য সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে বিভিন্ন স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সাহায্যও করবে। তা ছাড়া, বাণিজ্যিক সহযোগীদের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চীনের বৃহত্তম বাজারের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের উপযুক্ত পণ্যের আমদানির ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করবে, যাতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের সরবরাহ-চেইন এবং বৈদেশিক শিল্পের ভিত্তি স্থিতিশীল করা যায়।”
চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিস্থিপকতা অব্যাহতভাবে বাড়ার কারণে, চীনা অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে গতিও বাড়বে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে আরও বেশি অবদান রাখবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)