‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।
১.
সাধারণত পড়াশোনা শেষ করে যে সময়টাতে কর্মজীবনে প্রবেশ করা হয়, সে সময়টাকে জীবন যুদ্ধ জয়ের শুরুর ধাপ বলা হয়ে থাকে। আর এই সময়টা হয়ে থাকে টগবগে তারুণ্যে ভরা যৌবন। যে সময়টাতে মানুষ যেকোনো দুর্গম পথকে জয় করতে পারে নিঃশঙ্কচিত্তে। যেকোনো দেশের সমাজ বা জাতি গঠনের হাতিয়ার এই তরুণরাই।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন, শ্রমের ঘাটতি পূরণ এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে দেশ জুড়ে বিশেষ নিয়োগ অভিযান পরিচালনা করছে চীন সরকার। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে দেশটির বিভিন্ন স্থানে চাকরি মেলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে থাকছে আমার করা একটি বিশেষ প্রতিবেদন।
কর্মসংস্থানের প্রচার এবং স্থানীয় অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে গেল সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছংছিং পৌরসভা প্রতিবেশী সিচুয়ান প্রদেশের সঙ্গে যৌথভাবে একটি চাকরি মেলার আয়োজন করে।
ছংছিং এবং সিচুয়ান থেকে অটোমোবাইল তৈরি, বায়ো-ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ক্যাটারিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩ শ’ র বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ৫০ হাজারের বেশি চাকরি সন্ধানীকে তাদের পছন্দের পদের জন্য আবেদন করতে সুযোগ করে দেয়া হয়। এখানে আসা এমনই একজন চাকরি প্রার্থী উ থাও।
"এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি এখানে আসার সাথে সাথেই আমার জন্য আদর্শ এমন চাকরি খুঁজে পেয়েছি। বেতন ও সুযোগসুবিধাও বেশ ভালো।
দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে, ছংছিং অন্যান্য শহর থেকে প্রতিভাবান ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকে এখানে কাজ করার সুযোগ দেয়।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর এক মিলিয়নেরও বেশি চাকরি প্রদানের জন্য ৩ হাজারের অধিক চাকরি মেলার আয়োজন করবে ছংছিংয়ের মানবসম্পদ বিভাগ। আর এর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় থাকবে সিচুয়ান প্রদেশ।
এই বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন কাউন্টিতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য চীনের বিশেষ প্রচারাভিযানের মাধ্যমে ৩০ মিলিয়নের বেশি চাকরি প্রত্যাশি প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি দপ্তরটি এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
চীন জুড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে, গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা খাতে শ্রমের ঘাটতি কমানোর অংশ হিসেবে একাধিক চাকরি মেলার আয়োজন করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এদিকে, দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের শেনচেনে বসন্ত উৎসবের পর প্রথম বড় আকারের অফলাইন চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে উৎপাদন, সম্পত্তি পরিষেবা, হোটেল, ক্যাটারিং, নির্মাণ, ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিসহ ৬০ টি সুপরিচিত স্থানীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে।
চীনের অন্যতম বৃহত্তম নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম চিলিয়ান চাওফিনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, চাকরির সুযোগদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পর্যটন পরিষেবাগুলো, সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ও শ্রমের ঘাটতি কমাতে চাকরি মেলার আয়োজন করেছে শানতং ও হ্যনান প্রদেশ। যান্ত্রিক প্রক্রিয়াকরণ, নতুন উপকরণ, বায়োমেডিসিন এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ২৬৮ টি বেসরকারী সংস্থা এই ইভেন্টে অংশ নেয়।
আয়োজকরা জানান, এই ইভেন্ট মূলত দেশব্যাপী নিয়োগের প্রচার কার্যক্রম "স্প্রিং ব্রীজ অ্যাকশন" এরই অংশ হিসেবে কাজ করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে শানতং প্রদেশে ৬ লাখের বেশি কাজের সুযোগ প্রদান করা হবে এবং ২হাজার ২ শ’টি অনলাইন ও অফলাইন চাকরি মেলার আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে বলে জানানো হয়। মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশ জুড়েও একই ধরনের চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চায়না কনস্ট্রাকশন সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরোর সাউথ চায়না কোম্পানির এইচআর অফিসার চাও ইউলু জানান, অবকাঠামো সম্পর্কিত ব্যবসা এবং প্রকল্পগুলি সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কর্মীর অভাব রয়েছে।
‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিভাবান কর্মী খুঁজে বের করা। আমাদের প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী এখানে আমরা ভালোকর্মী বাছাই করার চেষ্টা করছি।’
এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়গের ঘোষণা দেয় শেনচেন ।
শেনচেন মানব সম্পদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের, কর্মসংস্থান প্রচার এবং বেকারত্ব বীমা বিভাগের প্রধান ছাই ইউসিং বলেন ,
‘মার্চ পর্যন্ত, আমরা ২০৮ টি পাবলিক রিক্রুটমেন্ট ইভেন্টের আয়োজন করবো এবং প্রতিটি জেলার কর্মসংস্থানের চাহিদা অনুযায়ী ইভেন্টের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করবো। এই কার্যক্রমগুলি বিভিন্ন আকারে অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে মেধাবী কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হবে।’
শহরটি এই বছরের জন্য ছয় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং এ ধরনের চাকরি মেলা স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে, এমনটিই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া চাকরি দেয়ার এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে হাংচৌ, চেচিয়াং, কানসু ও হ্যপেই প্রদেশসহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশে চলছে এই মেলা কেন্দ্রিক কার্যক্রম।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২.
পর্বতারোহণের মধ্য দিয়ে জীবনে গতি ফিরিয়ে আনছে চীনের কুয়াংসি অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা। এখানকারই এক তরুণী লি ইয়ানথান। পর্বতারোহণের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন গত চার বছর ধরে। পর্বতারোহণকে পেশা হিসেবে নিয়ে নিজের পরিবারকে দেখভালের দায়িত্বও পালন করছেন এই তরুণী। তার স্বপ্ন, একদিন সে অলিম্পিকে খেলবেন।
গল্পটি দক্ষিণ চীনের পাহাড় ঘেরা অঞ্চল কুয়াংসিতে বাস করা এক চীনা তরুণী লি ইয়ানথানের। সে একজন পর্বতারোহী। আজ থেকে চার বছর আগে এক গ্রীষ্মকালে লিয়ের পর্বতারোহণের শুরু । লি একা নয়, পর্বতারোহণের মধ্য দিয়ে জীবনের সকল বাধা পেরুচ্ছে লিয়ের মতোই এ অঞ্চলের আরো অনেক তরুণ পর্বতারোহী।
পর্বতারোহণের শুরুটা অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই বলে জানান লি।
আমার স্কুলের পর্বতারোহীরা যখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলো আমি তখন তা উঁকি দিয়ে দেখছিলাম। একজন প্রশিক্ষক আমাকে তখন দেখে ফেলেন এবং তাদের সাথে যুক্ত হতে বলেন। তখন থেকে আমি পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।
চার বছর ধরে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর লি এখন অনায়াসে অনেকদূর পর্যন্ত পর্বতারোহণ করতে পারে। লি বলেন, অনেক সময় তার ইচ্ছা করে এই খেলা ছেড়ে দিতে। তবে প্রশিক্ষক সবসময়ই তাকে ভয় কাটিয়ে পুরোদমে পর্বতারোহণে ফিরে আসতে প্রেরনা যোগায়। প্রতিনিয়ত পাহাড়ে ওঠা-নামা করতে করতে লি এখন শিখে গেছে কিভাবে হাল না ছেড়ে টিকে থাকতে হয়, সেটা হোক পাহাড়ে বা দৈনন্দিন জীবনে।
যেকোনো প্রাপ্তির সময় লিয়ের যার কথা মনে পড়ে সে হচ্ছে তার মা। ছোট থেকে সে দেখেছে কত কষ্টে তার মা সংসারের ঘানি টানতে পরিবার থেকে দূরে থেকে কাজ করে গেছেন।
আরেক পর্বতারোহণের শিক্ষার্থী লান ছাংহাও ইনডোরে ও পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার মধ্যে রাত-দিন পার্থক্য রয়েছে বলে জানান লান ছাংহাও
পাহাড়ে ওঠার সময় ভয়, উত্তেজণা দুটোই কাজ করে। ইনডোরে প্রশিক্ষণ নেয়া থেকে সত্যিকারে পাহাড়ে ওঠা তুলনামূলক বিপজ্জনক। পাহাড়ের কিছু কিছু জায়গা বেশ ধারালো। দুর্ঘটনাবসত সেখানে পড়লে আহত হবার সম্ভাবনা থাকে।
এদিকে, তাদের প্রশিক্ষক উ কুওং বলেন, শিক্ষার্থীদের ধাপে ধাপে প্রশিক্ষন দেন তারা। প্রথমে অল্প উচ্চতায় উঠতে শেখানো হয়, তারপর বেশি উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্য দেওয়া হয়।
লি জানে তার ভবিষ্যৎ এখনো নিশ্চিত নয়। তবে তার স্বপ্ন একদিন সে অলিম্পিকে খেলবে।
কুয়াংসি কাউন্টিতেই দেশের সর্বপ্রথম কিশোরদের জন্য পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। শুধুমাত্র মাশানে ২৩টি স্কুলে পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ স্কুল কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে স্থানীয় পর্বতারোহণ দলগুলো শহরের বাইরে আয়োজিত ৩১টি মেজর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে জিতে এনেছেন ১০০ টি গোল্ড, ৮৮টি রৌপ্য এবং ৭৯টি ব্রোঞ্জ মেডেল।
প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী