গত বছরের ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র ২০তম কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর একটি গ্রুপ স্টাডিসভায় সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং, সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের চেতনাবিষয়ক এক সেমিনার আয়োজনের কথা ঘোষণা করেন। গতকাল (মঙ্গলবার) এ সেমিনার আয়োজিত হয়। সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন সি চিন পিং এবং চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন ব্যাখ্যা করেন।
প্রতিবছরের বসন্ত উত্সবের পর অনুষ্ঠিত হয় এ সেমিনার। এতে সাধারণত আগের বছরের সিপিসি’র প্রতিনিধিসম্মেলন এবং পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের চেতনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চলতি বছর দশম বারের মতো এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করলেন। এবার সেমিনারে তিনি চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন নিয়ে কথা বলেন।
সি চিন পিং বলেন, চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের মূল দিক, ভবিষ্যত ও ফলাফল পার্টির নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করে। কেবল সিপিসির নেতৃত্বে অবিচল থাকলে, চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। ভুল পথে গেলে স্বপ্ন পূরণ হবে না।
চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন মানে সিপিসি’র নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রিক আধুনিকায়ন। বিভিন্ন দেশের আধুনিকায়নের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। তেমনি চীনের আধুনিকায়নের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন এমন একটি ধারণা ভেঙে দিয়েছে যে, আধুনিকায়ন ও পশ্চিমীকরণ একই। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
মানবজাতির সভ্যতার রঙ ও পদ্ধতি এক নয়। এ ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আছে। সেমিনারে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং বলেন, চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন একটি পদ্ধতিগত কৌশল এবং তাতে পদ্ধতিগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। বিশেষ করে, বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক যথার্থভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যেমন, তত্ত্ব ও অনুশীলনের সম্পর্ক। একদিকে সমন্বিত তত্ত্ব প্রণয়ন করতে হবে, অন্যদিকে অনুশীলনের মাধ্যমে অজানা বিষয় অন্বেষণ করতে হবে। কৌশল ও নীতির সম্পর্কও এখানে উল্লেখ করা যায়।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, কৌশলের স্থিতিশীলতা ও নীতির নমনীয়তার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। দূরদর্শী ও স্থিতিশীল কৌশলের আওতায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী, নমনীয় নীতি প্রয়োগ ও নিষ্পত্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন, ঐতিহ্য ও নবায়নের সম্পর্ক। সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, একদিকে চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের মৌলিক বিষয়ে অবিচল থেকে তার ঠিক দিক নিশ্চিত করতে হবে, অন্যদিকে নবায়নকে দেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় রেখে, সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
কার্যকারিতা ও ন্যায্যতার সম্পর্ক প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং বলেন, পুঁজিবাদের তুলনায় অধিক কার্যকারিতা সৃষ্টি করতে হবে, পাশাপাশি সমাজের ন্যায্যতা কার্যকরভাবে রক্ষা করতে হবে। চীন অভিন্ন সমৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতা ও উন্মুক্তকরণের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীনের অগ্রগতির পথে বিদ্যমান সকল বিদেশি বাধা মোকাবিলা করতে হবে এবং চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের পথে দৃঢ়পায়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সি চিন পিং বলেন, চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একটি অগ্রাধিকারমূলক কাজ এবং নানা অনুমানযোগ্য বা অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের মুখে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। শান্তির সময়ে বিপদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং লড়াইয়ের সময়ে সাহস নিয়ে লড়াই করতে হবে। দৃঢ় সংগ্রামের মাধ্যমে উন্নয়নের নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।
২০২৩ হচ্ছে সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের চেতনা বাস্তবায়নের প্রথম বছর। শুরুর কাজটা ভালোভাবে করার ওপর জোর দেন সি চিন পিং।
বস্তুত, লক্ষ্য দূরের হলেও, সামনে এগিয়ে গেলে অবশেষে সেখানে পৌঁছানো যায়; কাজ কঠিন হলেও, লেগে থাকলে অবশেষে তা শেষ করা যায়। চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের স্বপ্নও অবশেষে বাস্তবায়িত হবে। (শিশির/আলিম/রুবি)