‘ঘুরে বেড়াই’-৪র্থ পর্ব
2023-02-07 17:05:50

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। বিস্ময়কর চীনের মহাপ্রাচীর

২। একটি খামারের তুষার শহরে রূপান্তিরত হওয়ার গল্প

৩ । চীনের পালতোলা রাজধানী ছিংতাও

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের চতুর্থ পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম। 

১। বিস্ময়কর চীনের মহাপ্রাচীর

পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে একটি চীনের মহাপ্রাচীর। এই মহাপ্রাচীর চীনের লিয়াওনিং থেকে হেবেই, থিয়ানচিন, বেইজিং, ইনার মঙ্গোলিয়া, শানসি, শাংসি এবং নিংসিয়া হয়ে কানসুতে প্রসারিত একটি ধারাবাহিক দেয়াল।

পৃথিবীর এই  দীর্ঘতম প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ২১,১৯৬.১৮ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ৫ থেকে ৮ মিটার। প্রাচীরটি চওড়ায় প্রায় ৯.৭৫ মিটার। প্রশস্ত প্রাচীরের ওপর চলাচলের জন্য রয়েছে রাস্তা।

খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতক থেকে খিস্ট্রীয় ষোড়শ শতক পর্যন্ত সময়ে চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়। এ সময় প্রায় একই রকম অনেক প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তবে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি বর্তমান প্রাচীরের একেবারে উত্তরে অবস্থিত এবং এর খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে।

প্রাচীরের মূল অংশের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে। চীনের প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াংই এটি প্রথম ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন এবং শত্রুর হাত থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য প্রাচীরটি আরো দীর্ঘ করেন। হান, সুই, নরদান ও চিং সাম্রাজ্যের সময়েও ইতিহাসে একই কারণে চীনের মহাপ্রাচীরের পরিবর্ধন, পরিবর্তন, সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণের কথা জানা যায়।

বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়। সেই প্রাচীরটিও অবস্থিত বেইজিংয়ের উত্তরে । পৃথিবীর এই সপ্তাশ্চর্য  প্রাচীর দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করে চীনের উত্তরাঞ্চলে।

 

২। একটি খামারের তুষার শহরে রূপান্তিরত হওয়ার গল্প

বনাঞ্চলীয় খামার এখন তুষার শহর। গত দুই দশকে চীনের সর্বউত্তর প্রদেশ হেইলুংচিয়াংয়ের একটি বনাঞ্চলীয় খামার দেশটির তুষার শহরে পরিণত হয়েছে। তুষারের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর তুষার মৌসুমে সেখানে ভীড় করে অগণিত পর্যটক।

 

হেইলুংচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারবিন থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুতানচিয়াং শহরের শুয়াংফাং ফরেস্ট ফার্ম দর্শনার্থীদের অত্যাশ্চর্য তুষার দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেয়।

 

শুয়াংফাংয়ে তুষার মৌসুম সাত মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং এখানে বার্ষিক গড় তুষারপাত হয় প্রায় ২ দশমিক ৬ মিটার।

 

 

উঁচু পাহাড়, ঘন বন, মৃদু বাতাস, উপযুক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে শুয়াংফাংয়ে পুরু তুষার জমে। তুষার পড়ে পড়ে বিভিন্ন আকার ধারণ করে, যেমন তুষার মাশরুম, তুষার পর্দা ইত্যাদি।

 

সেখানকার এক হোটেলের মালিক ফান চাও ইয়ি জানান, "অতীতে এখানকার বেশির ভাগ মানুষ কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করত৷ তবে ভারী তুষারপাতের কারণে কাঠ পরিবহন করা এক কঠিন কাজ ছিল।"

 

 

স্থানীয়রা জানান, বনে কাঠ কমতে থাকার প্রেক্ষাপটে সেখানকার বাসিন্দারা জায়গাটিকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার দিকে ঝোঁকে এবং ২০০০ সালে একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

 

 

২০০০ সালে ফান একটি ৪ কক্ষের আবাসিক হোটেল খোলেন এবং ভালো ব্যবসা হওয়ায় ২০১৮ সালে সেখানে আরও ৪০ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ করে সেটাকে ৩০ কক্ষের হোটেলে রূপান্তর করেন। তার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয়রা সেখানে আরও ২শ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এখন সেখানে ব্যবসা এমন জমে উঠেছে যে, ১২ ডিসেম্বর তুষার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সেখানে ১ লাখ অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে এ বছর।

 

 

৩ । চীনের পালতোলা রাজধানী ছিংতাও

চীনের শানতুং প্রদেশের ইয়েলো সি বা পীত সাগরের উপকূলবর্তী শহর ছিংতাও। শহরটি চীনের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর ও নৌঘাঁটি। এ নগরীর প্রধান এলাকা থেকে হুয়াংতাও জেলা পর্যন্ত চিয়াওচৌ উপসাগরের উপর দিয়ে নিমার্ণ করা হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সেতু।

 

 

অন্যান্য অনেক চীনা শহরের তুলনায় ,ছিংতাও তুলনামূলকভাবে তরুণ একটি শহর। জানা যায়, ছিংতাও সাইকেল, অটোমোবাইল, গাড়ি চলাচলের রাস্তা এবং এমনকি সার্বজনীন ফিল্ম দেখার প্রথম শহর।

 

 

এ শহরের কেন্দ্রস্থলে চোখে পড়ে জামার্ন- শৈলীর অসংখ্য বিল্ডিং । যেখানে সামুদ্রিক ৫০০টিরও বেশি জাতের প্রায় এক মিলিয়ন শেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেসব বিল্ডিং। বিশ্বের চারটি প্রধান মহাসাগর থেকে সংগৃহীত ৪০টিরও বেশি বিভাগের শেল প্রদর্শন ও পরিচয় করিয়ে দেয় বিল্ডিংগুলো। বর্তমানে সেই বিল্ডিংগুলো এখন ব্যবহৃত হচ্ছে শেল জাদুঘর হিসেবে। দুর-দূরান্ত থেকে সেই জাদুঘরে  ভিড় করেন পর্‍্যটকরা।

 

 

সমুদ্রতীরবর্তী এ শহরে রয়েছে থাইফিং পর্বত, শিলাওরেন সৈকত, থিয়ানহোও টেম্পল ও চুংশানের মত গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট। এছাড়া এখানে রয়েছে হাইয়ার ও হাইসেন্স ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়।

 

২০০৮ সালের অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিকের পালতোলা ইভেন্টের আয়োজন করার কারণে, শহরটি আজ "চীনের পালতোলা রাজধানী" নামে পরিচিত। এছাড়া খেলাটি এখানে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে এটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পড়ানো হয়।

 

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী