ফেব্রুয়ারি ৬: স্থানীয় সময় ৩ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলের তেলআবিবে চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘চীন-ইসরাইল শিশুবান্ধব বসন্ত উত্সব উদযাপন’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান। কেন্দ্রের পরিচালক সি ইউয়ে ওয়েন জানান, শিশুদের জন্য তারা বিশেষ করে লণ্ঠন উত্সবের অনুষ্ঠান প্রস্তুত করেন। তিনি বলেন, “লণ্ঠন উত্সব উপলক্ষ্যে আমরা তেলআবিব চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শিশুদের উপযোগী একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করি। লণ্ঠন উত্সব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানানো, গেমস খেলা, ইউয়ান সিয়াও ও স্প্রিং রোলসহ ছুটির খাবার তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশা করি, এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসরাইলের তরুণ-তরুণীরা, বিশেষ করে শিশুরা চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।“
ইসরাইলের নানা জায়গা থেকে আসা ৬০ জনেরও বেশি শিশু ও তাদের বাবা-মা অনুষ্ঠানে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) লণ্ঠন উত্সব গালা-র প্রচারমূলক ভিডিও দেখেছেন। সেখানে তারা ইসরাইলে চীনা শিক্ষার্থীদের পিপা আর বাঁশিসহ চীনা বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং ইসরাইলি শিশুদের চীনা কংফু উপভোগ করেন। তা ছাড়া, সবাই গল্পগুজব করেছেন, লণ্ঠনে লেখা ক্যুইজের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ইউয়ান সিয়াও খেয়েছেন। চীনের বসন্ত উত্সবের আমেজ উপভোগ করেছে সবাই। শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে চীনা গান গেয়েছে। ‘শুভ নববর্ষ’ গানটির মাধ্যমে সবাইকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
১১ বছর বয়সী চাং ওয়ে ইয়ে ৫ বছর আগে বাবা-মার সঙ্গে চীন থেকে ইসরাইলে আসে। তার মা চীনা এবং বাবা ইসরাইলি। অনুষ্ঠানে সে সবার সামনে চীনা বসন্ত উত্সবসংশ্লিষ্ট রূপকথা বর্ণনা করে। সে খুব ভাল চীনা ভাষা বলতে পারে। সে বলে, চীনের কথা তার অনেক মনে পড়ে এবং বসন্ত উত্সব তার খুব ভালো লাগে। চাং ওয়ে ইয়ে বলে, “আজ আমি সবাইকে বসন্ত উত্সবের সাথে সম্পর্কিত একটি কাহিনী বলেছি। কাহিনীটি খুব মজার। আমি বসন্ত উত্সব পছন্দ করি। চীনে আমার বাড়িতে উত্সবের সময় সুস্বাদু খাবার খেতে পারি এবং উত্সবের আনন্দ অনেক। মজার অনুষ্ঠান, যেমন সিংহনৃত্য আমার খুব ভালো লাগে।”
চাং ওয়ে ইয়ের মা চাং চে বলেন, নিজের সন্তানকে চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে তিনি সবসময় ছেলের সঙ্গে চীনা ভাষা বলেন। উত্সবের সময় তার জন্য সংশ্লিষ্ট চীনা খাবার তৈরি করেন। তিনি বলেন, “আমি একজন চীনা মানুষ এবং আমার আশা আমার সন্তান চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক। একজন মানুষ যখন তার শিকড় ভুলে যায়, তখন তা দুঃখজনক এক ব্যাপার। তাই আমি ছেলেকে চীনা ভাষা শেখাচ্ছি। ইসরাইলে থাকলেও, প্রতিটি চীনা ঐতিহ্যিক উত্সবে আমরা সংশ্লিষ্ট উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করি। যেমন, তুয়ান উ উত্সবে আমরা চুংচি নামের খাবার তৈরি করি এবং লণ্ঠন উত্সবে আমরা ইউয়ান সিয়াও তৈরি করি। যখন চীনে ছিলাম, আমি ছেলেকে নিয়ে লণ্ঠন প্রদর্শনী দেখতে যেতাম। এখন সে কথা তারও মনে আছে।”
লান লান বাচ্চা নিয়ে ইসরাইলে এসেছেন ১ বছর আগে। এদিনের অনুষ্ঠান দেখা যেন আবার চীনে ফিরে আসার মতো। তিনি বলেন, “আমি ইসরাইলে আসার পর প্রথমবারের মতো একটি অনুষ্ঠানে এতবেশি চীনা মানুষ দেখেছি। উষ্ণতায় ভরা অনুষ্ঠান। এখানে এসে চীনের কথা অনেক মনে পড়ে।”
ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা ইয়াং চি মনে করেন, এ অনুষ্ঠান খুব তাত্পর্যপূর্ণ। ইসরাইলে প্রবাসী চীনা ও তাদের শিশুরা চীনের বসন্ত উত্সবের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। তিনি বলেন, “এখানে সবাই যেমন চীনা নববর্ষের আমেজ উপভোগ করতে পারেন, তেমনি শিশুরা চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে পারে।” (শিশির/আলিম/রুবি)