চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব
বিজ্ঞানবিশ্বে’র চতুর্থ পর্বে যা থাকছে:
* কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট সেবা চালু করতে যাচ্ছে পাইতু
* আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে চীনের নাগরিক জীবন এখন আরো নিরাপদ
* শীর্ষে প্রযুক্তি ও বিনোদন বিষয়ক কোম্পানি টেনসেন্ট
* এবার লেখা থেকে মিউজিক তৈরি করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট সেবা চালু করতে যাচ্ছে পাইতু
চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট সেবা চালু করতে যাচ্ছে চীনের জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন পাইতু। তবে টুলটির নাম কি হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।
ওপেনএআইয়ের নতুন উদ্ভাবন চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট সেবা চালুর পরিকল্পনা করছে চীনের ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট ‘পাইতু’।
সেবাটি চালু হবে মার্চ থেকে। পাইতুর এক কর্মী বলেন, সেবাটি প্রথমে স্ট্যান্ডঅ্যালোন অ্যাপ হিসেবে চালু করে পরবর্তীতে ক্রমশ একে নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে সমন্বয়ের পরিকল্পনা করছে প্রযুক্তি কোম্পানিটি।
চ্যাটজিপিটি প্রযুক্তি কাজ করে বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। এর মধ্যে সার্চ ইঞ্জিনের তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে কীভাবে মানুষের মতো করে ব্যবহারকারীর প্রম্পটের জবাব দিতে হয়।
ব্যবহারকারীর সার্চ অনুরোধে কেবল লিঙ্ক নয়, বরং চ্যাটবটের তৈরি করা ফলাফলও সমন্বয়ের পরিকল্পনা করছে পাইতু।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্র্যান্সিস্কো-ভিত্তিক কোম্পানি ওপেনএআইর পেছনে একশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট। বর্তমানে এই প্রযুক্তির পেছনে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে কোম্পানিটি।
আর্থিক আয়ের উৎস বাড়ানোর লক্ষ্যে এআই প্রযুক্তিতে বিশাল বিনিয়োগ করছে বেইজিং-ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি পাইতু। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন ক্লাউড সেবা, চিপ ও স্বয়ংক্রিয় চালক ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো।
ডিসেম্বরে এক ডেভেলপার কনফারেন্সে তিনটি এআই-চালিত ‘নির্মাতা’ সফটওয়্যার উন্মোচন করেছে পাইতু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সফটওয়্যারগুলো চিত্রনাট্যকার, চিত্রকর, সম্পাদক ও অ্যানিমেটরের ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি পাইতু এখন স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে।
আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে চীনের নাগরিক জীবন এখন আরো নিরাপদ
চীনের শহুরে জীবনকে আরও সহজ ও নিরাপদ করে তুলেছে স্মার্ট প্রযুক্তি। নগরবাসীর জীবনে এই পরিবর্তন আনতে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীন সরকার। চীনের শুধু ছংছিং মিউনিসিপালিটিতেই স্মার্ট সিটি পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় ৫শ’রও বেশি সেন্সর, মিলিমিটার ওয়েভ রাডার ও লেজার রাডার স্থাপন করা হয়েছে। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে নগরবাসী।
স্মার্ট টেকনোলজি বা স্মার্ট প্রযুক্তির কল্যাণে চীনের নাগরিক জীবন এখন আরো সহজ, আরো নিরাপদ। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষও।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছংছিং মিউনিসিপালিটিতে ইতোমধ্যেই সকল গাড়ির সাথে সড়ক অবকাঠামো সিস্টেমের সংযোগ স্থাপন করার কাজ শেষ হয়েছে। এখন নাগরিকরা বিশ্বাস করেন শহরটি আধুনিকতায় আগের থেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে।
রাস্তায় নামার পর আগেই সড়কে যানযট আছে কিনা জানতে পারছে চালকরা। যানযট এড়িয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌছানোর পথও ঠিক করে নিতে পারছেন তারা। ছংছিং এর বাসিন্দা পাও হুয়ান মনে করেন এই শহর এখন চালকদের জন্য আরো নিরাপদ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “আমি মনে করি রাস্তা, গাড়ি ও মানুষের মাঝে সমন্বয় আরো ভালো হয়েছে। চালকদের জন্য এখন এই শহর আরো নিরাপদ।“
পাও আরো বলেন, শহরের সড়ক পরিস্থিতির সব তথ্য সে তার রিয়ারভিউ আয়নায় দেখতে পায়, যা প্রতি মিলিসেকেন্ডে আপডেট হয়।
নগরবাসীকে এই সেবা নিশ্চিত করতে ছংছিংজুড়ে ৫শ’রও বেশি সেন্সর, মিলিমিটার ওয়েভ রাডার এবং লেজার রাডার ইন্সটল করা হয়েছে। পুরো শহর থেকে এই সেন্সরগুলো তথ্য সংগ্রহ করে পাঠায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। আর এখান থেকেই প্রতি সেকেন্ডে ১ হাজার থেকে ১৪শ’ তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ শেষে সেই তথ্য পাঠানো হয় রাস্তায় চলাচলকারী গাড়িগুলোতে।
পুরো শহরের একটি ব্যাপক তথ্য মডেল বানানোর জন্য ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি টানেলগুলোতেও স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি টানেলগুলোতে ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলো ঘুরিয়ে দেখান চায়না রেইলওয়ের ১১তম ব্যুরো গ্রুপ করপোরেশন লিমিটেডের প্রকৌশলী চৌ রুন। দরজা দিয়ে প্রবেশের সময় তিনি বলেন, “এটি একটি ফায়ার-প্রুফ দরজা। প্রতি ২০০ মিটারে আমাদের এমন একটি করে ফায়ার-প্রুফ দরজা আছে। আমরা ভেতরে প্রবেশ করতেই আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দেখতে পাবো।“
এরপর একটি ফাইবার হাতে নিয়ে বলেন, “এই যে ফাইবারটি দেখতে পাচ্ছেন, এটি তাপমাত্রা বুঝতে পারে। সকল তার এই ফাইবার দিয়ে মোড়ানো আছে। যদি তারের কোনো অংশ গরম হয়ে যায় তাহলে এই ফাইবার দ্রুত তা শনাক্ত করবে এবং আমাদের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে সে তথ্য পাঠাবে।“
চৌ আরো বলেন, বাতাসের গুণমান, তাপমাত্রা, মানুষের অবস্থান এবং আগুন লাগার আশঙ্কা এড়াতে ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি টানেলগুলোতে ১০ হাজারের বেশি সেন্সর ইনস্টল করা হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও প্রকৌশলীরা সেরে নিতে পারেন দূর থেকেই, বলেন মিউনিসিপাল ইউটিলিটি টানেলস এডমিনিস্ট্রিটিভ সেন্টারের পরিচালক থাং সু।
তিনি বলেন, “আগে আমরা যেসব কাজ হাতে করতাম এখন আমরা তা দূর থেকেই করে ফেলতে পারি। স্মার্ট সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সম্ভাব্য সমস্যা শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে পারে।“
ছংছিং বাদেও চীনে বর্তমানে ২৯০টি স্মার্ট সিটি ও ১ হাজার ৬শ’রও বেশি ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি টানেলের পাইলট প্রোগ্রাম চালু হয়েছে কিংবা নির্মানাধীন অবস্থায় আছে।
শীর্ষে প্রযুক্তি ও বিনোদন বিষয়ক কোম্পানি টেনসেন্ট
২০২২ সালে চীনের শীর্ষ ১০ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা এআর’এর উদ্ভাবনী কোম্পানির তালিকায় প্রথম স্থান দখল করেছে প্রযুক্তি ও বিনোদন বিষয়ক কোম্পানি টেনসেন্ট। চীনের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠান আস্ক সি আই ডট কম এ তথ্য জানিয়েছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে চীনা সার্চ ইঞ্জিন পাইতু। এর পরেই তৃতীয় স্থানে আছে সেন্সটাইম। তালিকায় হুয়াওয়েই আছে চতুর্থ ও আলীবাবা পঞ্চম স্থানে।
শীর্ষ দশে এর পরের স্থানগুলোতে আছে যথাক্রমে বোয়ে, ভিভো, জেডি, হিকভিশন ও ওপ্পো।
এবার লেখা থেকে মিউজিক তৈরি করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা!
চ্যাটজিপিটি নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো বিশ্বে। এরই মধ্যে নতুন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আবিষ্কারের দাবি জানালো গুগল। গুগলের দাবি নতুন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লেখা থেকে মিউজিক তৈরি করতে পারে। এমনকি শিস বা গুনগুন করা সুরকে অন্য বাদ্যযন্ত্রের মিউজিকেও পরিবর্তন করতে পারে।
মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের গবেষকরা এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, যা দিয়ে যেকোনো লেখা থেকে মোটামুটি মিনিটখানেক দৈর্ঘ্যের মিউজিক তৈরি করা যায়। এই এআই ব্যবহার করে শিস বা গুনগুন করা সুরকে অন্য বাদ্যযন্ত্রের মিউজিকেও পরিবর্তন করা যায়।
গুগলের বেশ কয়েকজন গবেষক তাদের গবেষণা নিয়ে “মিউজিকএলএম: জেনারেটিং মিউজিক ফ্রম টেক্সট শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। পুরো মডেলটিকে বলা হচ্ছে “মিউজিকএলএম।
তবে আপাতত এটি ব্যবহার করে কিছু বাজানো যাবে না। গুগলের গবেষকরা যদিও কিছু স্যাম্পল গবেষণাপত্র সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে জুড়ে দিয়েছেন।
মিউজিক স্যাম্পলগুলোকে বেশ চমকপ্রদ হিসেবেই উল্লেখ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই। কারণ একটি অনুচ্ছেদের বর্ণনা থেকে ৩০ সেকেন্ডের একটি মিউজিক তৈরি করা হয়েছে যা শুনতে প্রকৃত গানের মতোই।এমনকি মানুষের কণ্ঠও অনুকরণ করতে পারে মিউজিকএলএম। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ এটিই প্রথম নয়। মিউজিকএলএমের আছে সমৃদ্ধ ডাটাবেজ। যেখানে দুই লাখ ৮০ হাজার ঘণ্টার মিউজিক দিয়ে এই প্রোগ্রামকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যেনো টেক্সট থেকে ভালোমানের মিউজিক তৈরি করা যায়।
গুগলের অন্যান্য এআই জেনারেটরের মতোই কপিরাইট বিষয়ক শঙ্কা থাকায় সর্বজনীনভাবে ‘মিউজিকএলএম’ প্রকাশ করছেন না গবেষকরা।
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা: সাজিদ রাজু