ফ্লাইট ও দ্রুতগতির ট্রেনগুলো নিয়মিত যাতায়াত করছে, জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো জমজমাট, ইন্টারনেট সেলিব্রেটি রেস্টুরেন্টগুলোতে হাজার মানুষের লাইন, সিনেমা হলগুলোর আসন পূর্ণ…উত্সবকে কেন্দ্র করে এসব দৃশ্য বিশ্বের সামনে এক প্রাণবন্ত ও উদ্যমী চীনকে তুলে ধরেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি যেন পতনশীল বিশ্ব অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, আস্থা ও দৃঢ়তার প্রতীক।
খরগোস বর্ষের বসন্ত উত্সব চলাকালে শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ছিল ৩০.৮ কোটি পার্সন টাইমসের, যা মহামারী শুরু হওয়ার পর একটি রেকর্ড। পরিবহন থেকে চলচ্চিত্রের বক্স অফিস পর্যন্ত, দেশে-বিদেশে ভ্রমণ থেকে অনলাইন-অফলাইন খুচরা বিক্রয় পর্যন্ত, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পণ্যভোগ মহামারীর আগের মানের প্রায় সমান বা সমান পুনরুদ্ধার হয়েছে। মার্কিন ভোক্তা সংবাদ ও ব্যবসা চ্যানেল (সিএনবিসি) বলছে, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং রেস্তোঁরা ও হোটেলগুলোতে যেন চীনাদের দীর্ঘদিনের দমিত চাহিদা মুক্তি পাচ্ছে। চীনাদের চাহিদা বৃদ্ধি মানে বিভিন্ন দেশের জন্য বিরাট ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। চীন-ইউরোপ মালবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আসা ইউরোপীয় পণ্য চীনা মানুষের বসন্ত উত্সবে বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের উপহারে পরিণত হয়েছে। চীন-লাওস রেলপথে পশ্চিম চীনে আসছে তাজা গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলমূল। থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চীনা পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে লণ্ঠন ঝুলিয়েছে; খরগোসের মূর্তি বা ছবি ঝুলিয়েছে। চলতি বসন্ত উত্সবে চীনা মানুষের সারা বিশ্ব থেকে কেনা ও বিশ্বে বেড়ানো বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে মূল্যবান চালিকাশক্তি যুগিয়েছে।
স্বর্ণের চেয়ে আস্থা আরও মূল্যবান। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল চাহিদা, ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত এবং জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাসহ বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় চীনাদের বসন্ত উত্সবের ভোগ ছিল আশির্বাদস্বরূপ, যা বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বিরল সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হলো অর্থনৈতিক আস্থা অনুভব করার একটি প্রধান সূচক। হ্যাং সেং সূচক টানা ৬ সপ্তাহ বেড়েছে। চীনা অর্থনীতির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও প্রত্যাশা স্পষ্টভাবে বেড়েছে। ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণ মতে, চীনা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রবণতা বিনিয়োকারীদের উত্সাহ দেয়। তাদের এই আশাবাদের কারণ, চীনের মহামারী প্রতিরোধনীতিতে শিথিলতা এবং বসন্ত উত্সবে খুচরা বিক্রয় বৃদ্ধি, পর্যটন খাতে তেজিভাব, ও চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন পণ্যভোগের সূচক বৃদ্ধি। “দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া” ওয়েবসাইটের খবরে দেখা গেছে, চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম মহামারীর আগের মানে পুনরুদ্ধার হয়েছে। এটা বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য একটি সুখবর।
চীন নিজের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়ে অস্থিতিশীল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য স্থিতিশীলতা সরবরাহ করছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ অনুমান অনুযায়ী, চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ হবে। এটা আঞ্চলিক অর্থনীতির জন্যও সুখবর। সিঙ্গাপুরের “লিয়েন হো মর্নিং নিউজ পত্রিকা”র খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইউরোপ ও মার্কিন অর্থনীতির মন্দাভাবের বিপরীতে চীনের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীন অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির জন্য আনুষঙ্গিক নীতিমালা গ্রহণ করেছে, যার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। চীনের উচ্চ মানম্পন্ন উন্নয়ন-ধারণা এবং উচ্চমানের উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে সবার জন্য কল্যাণ সৃষ্টির দৃঢ়প্রতিজ্ঞা কখনও পরিবর্তিত হয়নি। বিদেশি তথ্যমাধ্যমের মতে, পণ্যভোগ দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক নীতির কার্যকারিতার পাশাপাশি, সামাজিক কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্য মুক্তি বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চালিকাশক্তি হিসেবে চীনের অবস্থান বজায় রাখবে।
বসন্ত উত্সবের পণ্যভোগ চীনের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণের একটি জানালা। এবারের বসন্ত উত্সবে পণ্যভোগের মাত্রা চীনের অর্থনীতির বলিষ্ঠতা ও প্রাণশক্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। চীনের ‘ভালো সূচনা’ বরাবরই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুখবর। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। (প্রেমা/আলিম)