বিশ্বের উন্নত সাত দেশের জোট জি৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি সমুদ্রপথে রপ্তানি করা রাশান অপরিশোধিত তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নির্ধারণ করে দেয়। তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় কমানোর জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর চেষ্টার কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ক্রেমলিন। নির্ধারিত এ মূল্য মানবে না মস্কো। এ বিষয়ে একটি আদেশ স্বাক্ষর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। জ্বালানি তেল বিক্রির বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ দাম যেসব দেশ মানবে, সেসব দেশে তেল বিক্রি না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জারি করা একটি ডিক্রি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এদিকে, রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ সরাসরি তেল আমদানি করে না। তাই রাশিয়ার তেলের ওপর বিধিনিষেধের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের জ্বালানিখাতের বিশ্লেষকরা।
রাশিয়ার সর্বশেষ জারি করা ডিক্রিতে বলা হয়, রাশান জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় পয়লা মার্চের আগে রাশিয়া থেকে রফতানিকৃত তেলের দাম তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়া শুরু করবে। যেসব ব্যক্তি ও কোম্পানি রাশিয়া থেকে তেল নেয়, তারা তেলের দাম লঙ্ঘন করলে তাদের বিষয়ে শুল্ক বিভাগে রিপোর্ট করা।
রুশ জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, বাজারব্যবস্থায় পাশ্চাত্য দেশগুলোর অবৈধ হস্তক্ষেপ বিশ্ব জ্বালানি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সংশ্লিষ্ট দেশের উচিত এর বিরোধিতা করা।
রাশিয়া আরো হুমকি দিয়েছে যে যেসব দেশ এই উর্ধ্বসীমা আরোপের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে- তাদের কাছে তারা তেল রপ্তানি করা হবে না। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনে তাদের সামরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য যা যা প্রয়োজন – তার সবই রুশ সামরিক বাহিনীর আছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ইইউভুক্ত দেশগুলো ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের কম রাখলে সেসব দেশের পরিবহন এবং বীমা কোম্পানিগুলো কোনো লেনদেন করতে পারবে না। অন্যদিকে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস বলেছে, তারা তাদের উৎপাদন কমানোর নীতি অব্যাহত রাখবে। ওপেক প্লাস হলো ২৩টি তেল উৎপাদনকারী দেশের জোট। এতে রাশিয়াও আছে।
এদিকে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া যদি পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামে তেল বিক্রি না করে উৎপাদন কমিয়ে দেয় তাহলে ভবিষ্যতে তেলে জোগানে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রাশিয়া। তেল রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় কমানোই পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য। পাশাপাশি, রাশিয়া যেন তৃতীয় কোনো দেশে উচ্চমূল্যে তেল বিক্রি করে তার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পাশ কাটাতে না পারে, সে জন্যই পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় রাশিয়া যদি পশ্চিমাদের বেঁধে দেওয়া দামে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করতে রাজি হয় তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমবে। এই সুবিধাটি বাংলাদেশও পাবে। আর যদি রাশিয়া নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি না করে উৎপাদন কমিয়ে দেয় তাহলে জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এতে দাম কিছুটা বেড়েও যেতে পারে। তবে, রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ সরাসরি তেল আমদানি করে না। তাই রাশিয়ার তেলের ওপর বিধিনিষেধের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।