বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া সি চিন পিং’র উপহার-ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যের গল্প
2023-02-03 17:38:09


সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদরদপ্তরে একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য বসানো আছে। ১.৮ মিটার উচ্চতার এ ভাস্কর্যের গোল মুখ ও বড় কান। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ৫৫৯টি আকুপয়েন্ট মার্ক করা আছে। এটি গত ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদরদপ্তর পরিদর্শনকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র দেওয়া উপহার। একে বলা যেতে পারে ‘আকুপাংচার ভাস্কর্য’।

চীন আকুপাংচারের জন্মস্থল। অতীতে চীনারা আকুপাংচার শিখতেন প্রধানত বই ও ছবি দেখে। বেই সোং রাজবংশে আকুপাংচার ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য উদ্ভাবিত হয়, যা আকুপাংচার শিক্ষাদান ও চিকিত্সার কাজে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।  বর্তমানে আকুপাংচার ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। চীনা আকুপাংচার মানবজাতির অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে পরিণত হয়েছে।

 

উপহার দেওয়ার অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তত্কালীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান’র সঙ্গে ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে সি চিন পিং বলেন, আমরা ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা ধারণ করবো ও ভালোভাবে ব্যবহার করবো। উন্মুক্ত ও সহনশীল মনোভাব নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক চিকিত্সাবিদ্যার সংমিশ্রণ করতে হবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা চিকিত্সাবিদ্যা ও মেডিসিনের অনুরাগী। ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সি আন শহর পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি ইয়ান তা অঞ্চলে একটি চীনা ক্লিনিক ঘুরে দেখেন। তখন তিনি বলেন, “অনেক রোগী চীনা চিকিত্সকের কাছে আসতে পছন্দ করেন। কারণ, চীনা চিকিত্সার কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং নিরাময়মূলক প্রভাব রয়েছে। পাশাপাশি, চীনা মেডিসিনের দামো তুলনামূলকভাবে সস্তা। আমিও চীনা চিকিত্সকের কাছে যেতে পছন্দ করি।”

 

এক বছর পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা মেডিসিনের গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম জন্মস্থল-চিয়াং সি পরিদর্শন করেন। তিনি চিয়াং চুং মেডিসিন তৈরির কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় বলেন, ‘আপনারা চীনা মেডিসিন উন্নয়নের সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। চীনা মেডিসিনকে উন্নয়নের একটি স্তম্ভ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, তা সঠিক ও সম্ভাবনাময়।” সি আরও বলেন, চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন চীনা জাতির বিরল সম্পদ। এটাকে ভালোভাবে রক্ষা ও উন্নয়ন করতে হবে।

 সি চিন পিং’র মনোযোগের প্রভাবে প্রাচীন চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিক পর্যন্ত ৯৯ শতাশ কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, ৯৮ শতাংশ থানার স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, ৯০.৬ শতাংশ কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা স্টেশন এবং ৭৪.৫ শতাংশ গ্রামীণ স্বাস্থ্য হাউসে চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিনসেবা সহজলভ্য হয়।  

আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন প্রচার করেন, যার ফলে চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার সংসদ ভবনে বেইজিং ইউনিভার্সিটি অফ চাইনিজ মেডিসিন ও ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চীনা চিকিত্সাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন সি চিন পিং। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সি চিন পিং দক্ষিণ আফ্রিকার গণমাধ্যমে স্বনামে লেখা একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ আকুপাংচারসহ নানান চীনা চিকিত্সার মাধ্যমে রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পাচ্ছেন, সুস্থ হচ্ছেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলনে সি চিন পিং’র উত্থাপিত ‘৮টি যৌথ অভিযান’-এর মধ্যে রয়েছে আরব দেশগুলোতে চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিনসম্পর্কিত ৫টি সহযোগিতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।

 

চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন প্রাচীন চীনের বিজ্ঞানের বিরল সম্পদ এবং চীনা সভ্যতার কোষাগার খোলার চাবিকাঠি। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেশ কয়েকবার চীনা চিকিত্সার পরিভাষার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে রাষ্ট্র প্রশাসনের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন।通则不痛,痛则不通 বা সুষ্ঠু আগমন হলে ব্যথা হবে না, ব্যথা থাকলে সুষ্ঠু আগমন হবে না। তিনি একসময় এ কথার মধ্য দিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সংযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংস্কার করতে গেলে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিত্সা দিতে হবে।

বর্তমানে চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চলে প্রচলিত আছে। রোগ প্রতিরোধ, চিকিত্সা এবং সেরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যের কারণে এর অনেক বিদেশী অনুরাগী রয়েছে। তা ছাড়া, চীন ৪০টিও বেশি দেশ ও অঞ্চলের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিনসংশ্লিষ্ট সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিশেষ করে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে চীনা চিকিত্সা ও মেডিসিন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্ত। আমাদের অনুষ্ঠান কেমন লাগলো? আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের ফেসবুকের মেসেঞ্জার ব্যবহার করতে বা আমাদের ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করতে ভুলবেন না। আমাদের ইমেইল ঠিকানা হলো:  ben@cri.com.cn, wangdanhong@cri.com.cn। আপনাদের চীনের বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি আজকের অনুষ্ঠান। সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন। (রুবি/আলিম)