‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’: সায়েন্স-ফিকশনধর্মী সিনেমায় চীনা বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ
2023-02-02 19:30:52

বসন্ত উৎসবের ছুটিতে চীনের বক্স অফিসে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সায়েন্স-ফিকশনধর্মী সিনেমা ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া তুমুল জনপ্রিয় সিনেমা ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ’ এর পরবর্তী চলচ্চিত্র এটি। ২০১৯ সালের বসন্ত উত্সবে মুক্তি পাওয়া মুভিটি ৪৬৫ কোটি ইউয়ান আরএমবি আয় করে। এতে চীনের চলচ্চিত্র ইতিহাসের বক্সঅফিস আয় বোর্ডে পঞ্চম স্থান অধিকার করে মুভিটি। অনেক দর্শক মনে করেন, এ মুভিটি চীনের সায়েন্স-ফিকশনধর্মী মুভির’ সূচনা করেছে।

চার বছর পর পরিচালক কুও ফান ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হন। মুভিটি ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থে’ তুলে ধরা গল্পের কাহিনীকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়। ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ’ এবং ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ মুভিটি বিখ্যাত লেখক লিউ ছি সিনের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। অনেক দর্শক মনে করেন, ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ’-এর চেয়ে ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’তে আরো মর্মান্তিক এবং দুর্দান্ত অডিও-ভিজ্যুয়াল যুক্ত হয়েছে, আরো পূর্ণাঙ্গ ও বৈচিত্র্যময় কাহিনী আছে এবং আরো বিস্তৃত এবং গভীর বিজ্ঞান কথাসাহিত্যের বিষয়ও আছে। স্পেশাল ইফেক্ট, গল্প, চরিত্র এবং থিম ইত্যাদি থেকে বলা যায়, ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ আরো উচ্চ মানসম্পন্ন বলে অনেকে মনে করেন।

‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ মুভিটি কেমন? একজন নেটিজেন মজা করে উত্তরে বলেন, তিন ঘন্টার এ মুভি দেখার সময় টয়লেটে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু চেপে রেখেছি।

মুভিটিতে বলা গল্পটি ২০৪৪ সাল থেকে ২০৫৮ সাল পর্যন্ত সময়ের। সেই সময় সূর্য ধ্বংস হতে যাচ্ছে এবং মানবসভ্যতা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রচারের সাথে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মহাকাশ লিফটের সংকট এবং চাঁদের পতনের সংকট কাটিয়ে উঠতে হাত মিলায় এবং ‘পৃথিবী সরানোর’ পরিকল্পনা শুরু করে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নতুন বাসস্থান খুঁজে পাওয়ার জন্য পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রোপেলার তৈরি করা হয়।

এ মুভি প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক কুও ফান বাস্তবজীবনে চীনা শক্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তির উন্নতি সাই-ফাই সিনেমা শুটিংয়ের জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় আস্থা।’ তিনি আবেগের সঙ্গে বলেন, এটা ঠিক, কারণ আমরা যা বাস্তবে অর্জন করেছি তা সাই-ফাই সিনেমাগুলোতে দেখানো যায়। অনেক দর্শক মুভিতে চীনা সামরিক এবং মহাকাশ পণ্যের অনেক প্রোটোটাইপ খুঁজে পেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘স্পেস এলিভেটরের ওপর আঘাত পাওয়ার দৃশ্যে অভিনেতাদের চালানো যুদ্ধ বিমানে চীনের ‘জে-২০’ যুদ্ধবিমানের ছায়া আছে।

চিত্রগ্রহণের প্রক্রিয়ায় চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের দ্রুত বিকাশও গভীরভাবে চলচ্চিত্রের প্রথম থেকে দ্বিতীয় পর্যন্ত অত্যাশ্চর্য অগ্রসর দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, মহাকাশচারীদের পরা স্পেস স্যুট এখন ডিজিটাল মডেলিং, থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে তৈরি করা যেতে পারে। পরিচালক কুও ফান সম্পূর্ণ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রোডাকশনের জন্য বেশ গর্বিত। তিনি বলেন, ফিল্মটির ৯৫ শতাংশ প্রপস আমরা তৈরি করেছি।’ গত চার বছরে ক্যামেরার ভিতরে এবং বাইরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ক্রমাগতভাবে অগ্রসর হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ মুভিতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নতুন প্রযুক্তি শুধুমাত্র ‘পেশী দেখানোতে’ ব্যবহার করা বা অত্যন্ত দুর্দান্ত দৃশ্য উপস্থাপন করা ছিল না, বরং ‘অনুভূতি প্রকাশ’ করা যায়- মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। চীনের বিখ্যাত অভিনেতা উ মোংতা, যিনি ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থে’ অভিনয় করেছিলেন এবং ২০২১ সালে মারা গিয়েছিলেন, সিজি প্রযুক্তির সাহায্যে কিছু বিষয় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ মুভিতে। মুভিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা প্রতিনিধির চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা লি সুয়ে চিয়েন অসুস্থতার কারণে ভোকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়। ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ মুভিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিয়ে তা মেরামত করে আসল ভয়েসের বৈশিষ্ট্য এবং লাইনশৈলী পুনরুদ্ধার করা হয়।

নেটিজেনরা মনে করেন যে, ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’ এমন একটি সাই-ফাই মুভি, যা শুধুমাত্র চীনারা তৈরি করতে পারেন। কারণ হলিউড সাই-ফাই মুভির চেয়ে এর ওয়ার্ল্ড ভিউ স্ট্রাকচার এবং সাই-ফাই সৃজনশীলতা আলাদা। চলচ্চিত্রটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চীনা জাতির আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য আছে: হাড়ভাঙ্গা সংগ্রামের মাধ্যমে বিস্ময় সৃষ্টি করা এবং একতাবদ্ধ থাকার শক্তি দেখা যায়। এটি চীনের হাজার বছর ধরে বাঁচিয়ে রাখা জ্ঞান, অর্থাত্ শান্তিকে মূল্যায়ন করা, পারস্পরিক কল্যাণকর এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলার কথা বলে।

ফিল্মে যখন বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির মধ্যে কোন পরিকল্পনা বেছে নেওয়ার বিষয়ে মতপার্থক্য এবং এমনকি দ্বন্দ্ব দেখা যায়, তখন চীনা প্রতিনিধিরা দৃঢ়ভাবে ‘মাউন্টেন মুভ প্রজেক্ট’ এর পক্ষে দাঁড়ান। চীন আশা করে যে, সব মানুষ এবং পৃথিবীকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা করার জন্য পৃথিবীকে সৌরজগৎ থেকে বের করে নতুন ছায়াপথে রাখতে হবে। বিশ্বের কাছে এই পরিকল্পনার সম্ভাব্যতা প্রমাণ করার জন্য চীনকে সময়ের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল এমনকি সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম তৈরির জন্য একাই চেষ্টা করতে হয়েছিল। এই বিষয়ে তরুণ চীনা কর্মীরা অসন্তুষ্ট ছিল। তারা বলে- ‘কেন আমাদেরকে এভাবে করতে হবে, এটি কি ন্যায়সঙ্গত?’ প্রবীণ চীনারা ঠান্ডা মাথায় বলেছিলেন: ‘সঙ্কটের সময়ে কেবল দায়িত্ব পালন করতে হয়। ঐক্যের একটি মূল্য আছে।’ এই দৃশ্য দেখে অনেক দর্শক চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি এবং অনেক দর্শকের জন্য তা ‘টিয়ার পয়েন্ট’ হয়ে উঠেছে।

অধিকাংশ ‘সুপারহিরো’ ভিত্তিক পপকর্ন মুভিতে অভিজাত ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করে তথাকথিত ‘চূড়ান্ত শত্রু’কে পরাজিত করে মানবজাতিকে রক্ষা করা হয়। ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ ২’তে ‘বীরত্ব’ উপস্থাপনার জন্য ভিন্ন একটি পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে। পুরো ফিল্ম জুড়ে মজাদার এবং আরামদায়ক মুহূর্ত দেখা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এতে বিভিন্ন জাতি, দেশ ও পরিচয়ের সাধারণ মানুষগুলোকে ভারী বোঝা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গভীর শক্তি দেখা যায়।

মানবসভ্যতা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, ভালবাসা ও বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা এবং প্রতিবন্ধকতা ও কুসংস্কার দূর করা উচিত্ বলে সবাই বুঝতে পারে।

 

লিলি/তৌহিদ/রুবি