সম্প্রতি জাতিসংঘ ‘২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতি পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস’ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৩ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ১.৯ শতাংশে। তবে, চলতি বছর চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। চীন সরকার দেশের মহামারি প্রতিরোধ নীতি বিন্যাস করা এবং বিভিন্ন সুবিধাজনক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো দ্রুত হবে।
এ ছাড়া, বিভিন্ন পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা ও বাণিজ্য সমিতি জানিয়েছে, চীনের মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত হওয়ায় দেশ বিদেশের মানুষের বিনিময় ও বাণিজ্যিক যাতায়াত সুবিধাজনক হবে। চীন অব্যাহতভাবে বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের আগ্রহের দেশে পরিণত হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০২৩ সালে, চাহিদার বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক নীতির প্রভাবে চীনের অর্থনীতি আরো প্রাণচঞ্চল হবে। চীন অব্যাহতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চালিকাশক্তি হবে।
চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো তৈরি হচ্ছে। চ্য চিয়াং প্রদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো চার্টার ফ্লাইটের মাধ্যমে বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজছে। চীনের রেস্তরাঁ ও পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক পুঁজি বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে চীনের নতুন সুযোগ দেখা যাচ্ছে। বিদেশি তথ্য মাধ্যমগুলো চীনের অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়নের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ চীন সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্ব বাজারের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চীনের অর্থনীতির মোট চাহিদা অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে স্থানান্তর হবে। দেশে ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি পাওয়া এবং চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে চীনের ভোগ-বাজার পুনরুদ্ধার হবে। অবকাঠামো খাতের বরাদ্দ স্থায়ী হবে, তা পুঁজি বিনিয়োগ জোরদার করবে।
জাতিসংঘের আর্থ-সামাজিক বিষয়ক বিভাগের গ্লোবাল ইকোনমিক মনিটরিং ব্রাঞ্চের প্রধান হামিদ রাশিদ বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি মনে করেন চীনের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে। চীনের মুদ্রানীতিও যথার্থ। দেশটিতে অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় বাড়ছে। বাড়ছে শিল্প খাতে বিনিয়োগও।
এ জন্য চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রপ্তানি প্রভাবিত না হয়ে অভ্যন্তরীণ ভোগ প্রভাবিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর চীনের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় নিয়ামক হয়ে উঠবে সরকারি বিনিয়োগ। দীর্ঘমেয়াদে চীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলেও মনে করেন জাতিংসঘের শীর্ষ এ অর্থনীতিবিদ।
হামিদ রাশিদ বলেন, যদি চীনের অর্থনীতির এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২২ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ, এমনকি তার বেশিও হতে পারে।
অন্যদিকে, চীন থেকে বিশ্বমুখী পর্যটনের আকার বিশাল বলে এটি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো পর্যটন-নির্ভর দেশগুলোকে সুবিধা দেবে।
এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো ম্যানুফ্যাকচারিং অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ ভালো। তাই এসব দেশের অর্থনীতির জন্যও চীন আশীর্বাদ নিয়ে আসবে ২০২৩ সালে।
এসব আশাব্যঞ্জক ধারণার পিছনে রয়েছে চীনের উন্নয়নের শক্তি সম্পর্কে সবার আস্থা।
২০২২ সালে চীনের জিডিপি ১২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। যা ২০২১ সালের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। পণ্য বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪২.০৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা তার আগের বছরের চেয়ে ৭.৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের বৈদেশিক মুদ্রায় মজুদ ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি হয়, যা বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। গেল বছর চীন চাপের মধ্যেও অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রেখেছিল।
বসন্ত উৎসবের পরে দ্রুত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা ও উৎপাদন পুনরায় চালু করার এবং অভিবাসী কর্মীদের তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার বা নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য ভাল পরিষেবার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সক্রিয় প্রচেষ্টা চালানো হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ আকর্ষণে স্থানীয় সরকারগুলোকে সহায়তা দেওয়া, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের পাইলট প্রকল্প এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলির ভূমিকা আরও উন্নত করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতির সুষ্ঠু উন্নয়ন নিশ্চয়ই বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ বয়ে আনবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।