জানুয়ারি ৩১: এ বছরের বসন্ত উত্সবের সময় চীনের ভোক্তা বাজার ২০২৩ সালে একটি ‘ভাল সূচনা’ দিয়ে শুরু করেছে। শহুরে ব্যবসায়িক এলাকায় অতিথির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ও জনপ্রিয় দৃশ্য স্থানে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। খাদ্য, হোটেল, পরিবহন, ভ্রমণ, কেনাকাটা ও বিনোদনের চাহিদা এ সময় বেড়েছে। ব্যাপকভাবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, এ বছর চীনা অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতি ফের শুরু হলো, যা বিশ্বকে আরও বেশি মুনাফা দেবে।
এ বছরের বসন্ত উত্সবে চীনের ভোক্তা বাজার স্পষ্টভাবে উষ্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ক্যাটারিং ব্যবসা পুনরুদ্ধার বিশেষভাবে স্পষ্ট। শাংতং প্রদেশের ছিংতাও শহরের একটি তারকা হোটেলের নির্বাহী জেনারেল ম্যানেজার লি শা শা বলেন,
বসন্ত উত্সবের সময় আমরা খাবার ডেলিভারি সেবা দিয়েছি। অতিথিরা নিজের বাড়িতে তারকা মানের হোটেলের খাবার উপভোগ করেছেন।
ভিয়েতনামের কাঁঠাল ও থাইল্যান্ডের ডুরিয়ানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ফল কুয়াংসি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ফিংসিয়াং বহুমুখী শুল্ক এলাকা দিয়ে বসন্ত উত্সবের বাজারে এসেছে।
চীনা বসন্ত উত্সবের সময় ভোগ পুনরুদ্ধার জোরদার করা চীনা অর্থনীতি উন্নয়নের শক্তিশালী চালিকাশক্তি প্রতিফলিত করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য অংশীদাররা চীনা বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে আরও আশাবাদী হয়েছে। আফগান বাদাম ব্যবসায়ী হামিদ বলেন, আমাদের পণ্য চীনা বাজারে অনেক জনপ্রিয়। এ বছর আমরা আরো বেশি পণ্য চীনে রপ্তানি করবো।
এ বছরের বসন্ত উত্সব হলো চীনে মহামারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সমন্বিত করার পর প্রথম বসন্ত উত্সব। বসন্ত উত্সবের সময় গোটা চীনে খুচরা ও রেস্তরাঁতে বিক্রির পরিমাণ গত বছরের বসন্ত উত্সবের চেয়ে ৬.৮ শতাংশ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় ও বিশেষ ক্যাটারিং সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। থিম্যাটিক ও বৈচিত্র্যময় অবসর বিনোদন ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
এ ছাড়া বসন্ত উত্সবের সময় ট্রাভেল এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট পরিষেবা বিক্রির রাজস্ব গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩ গুণ বেড়েছে। গোটা চীনের ভ্রমণ করেছে ৩০৮ মিলিয়ন পার্সনটাইম, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩.১ শতাংশ বেশি। পর্যটন খাতে আয় ৩৭৫.৮ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি হয়েছে। জাতীয় অভিবাসী পরিচালনা সংস্থার পরিসংখ্যানে বলা হয়, প্রস্থানকারী লোকসংখ্যা বছরে ১২০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ছাড়া অনেক চীনা পর্যটক বিদেশে বসন্ত উত্সব কাটিয়েছেন। এ বছরের বসন্ত উত্সবের সময় চীনাদের বিদেশে ভ্রমণের বুকিং-অর্ডার গত বছরের চেয়ে ৬৪০ শতাংশ বেশি হয়েছে। বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে প্রথম দফা চীনা পর্যটকদেরকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এদিকে বসন্ত উত্সবের সময় চলচ্চিত্র বাজারের অবস্থাও বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। জাতীয় চলচ্চিত্র কোম্পানির পরিসংখ্যানে বলা হয়, এ বছর বসন্ত উত্সবের সময় সিনেমা বক্স অফিসের মোট আয় হয় ৬.৭৫৮ বিলিয়ন ইউয়ান; যা গত বছরের চেয়ে ১১.৮৯ শতাংশ বেশি।
চীনের বসন্ত উত্সবের খরচ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রেরণা যুগিয়েছে। অনেক সংস্থা ও বিদেশি ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, প্রাণবন্ত চীনা অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রকাশিত ‘২০২৩ সালে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে চীনা অর্থনীতি বৃদ্ধির গতি ৪.৮ শতাংশ হবে। সুইস ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র চীনা প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে উপকৃত করে না, বরং অনেক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশও এতে উপকৃত হয়।
(ছাই/তৌহিদ)